সিলেটে তেলের মজুদ রয়েছে দেড় কোটি ব্যারেল!

  • সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

সিলেট তেলের খনিতে উত্তোলনযোগ্য মজুদ প্রায় দেড় কোটি ব্যারেল বলে ধারণা করা হয়েছে। দৈনিক ৬০০ ব্যারেল হারে উত্তোলন করলে ১০ বছর পর্যন্ত উত্তোলন করা সম্ভব বলে কনসালটেন্ট প্রতিষ্ঠান স্লামবার্জার তার রিপোর্টে উল্লেখ করেছে।

সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. রেজাউল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, মজুদ আরও বেশি ধারণা করা হচ্ছে, দৈনিক ৫০০ থেকে ৬০০ ব্যারেল তেল উত্তোলন সম্ভব বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

স্লামবার্জারের রিপোর্টে ১৪.৮ মিলিয়ন ব্যারেল (প্রায় দেড় কোটি) তেল উত্তোলনযোগ্য বলা হয়েছে। দৈনিক ৫০০ থেকে ৬০০ ব্যারেল (১ ব্যারেল সমান ১৬৯ লিটার) তেল উত্তোলন করা সম্ভব। ফিল্ডটিতে আরেকটি কূপ খননের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্লামবার্জার রিপোর্ট জমা দিয়েছে, আমাদের টিম এটি মূল্যায়ন করছে। যতক্ষণ না আমাদের টিম একমত হচ্ছে ততক্ষণ মজুদ ঘোষণা করতে চাই না। তবে ভালো পরিমাণে মজুদ আশা করা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

জয়িন্তাপুর এলাকায় অবস্থিত সিলেট-১০ কূপের ১৩৯৭-১৪৪৫ মিটার গভীরতায় তেলের অবস্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। পরীক্ষামূলক ‍উৎপাদনের সময় প্রথম দিন ২ ঘণ্টায় ৭০ ব্যারেল তেল উঠেছে। আপাতত কূপটি বন্ধ রাখা হয়েছে। মজুদের বিষয়টি নিশ্চিত করতে কনসালটেন্সি ফার্ম স্লামবার্জারকে নিযুক্ত করা হয়। সেই প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই রিপোর্ট জমা দিয়েছে।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান এক প্রশ্নের জবাবে বার্তা২৪.কমকে বলেন, তেলের কোয়ালিটি উন্নতমানের। সিলেট-১০ থেকে পাওয়া তেল বুয়েট এবং ইস্টার্ন রিফাইনারীতে প্রেরণ করেছিলাম, তারা উৎকৃষ্টমানের বলে রিপোর্ট দিয়েছে।

২০২৩ সালের নভেম্বরে সিলেট-১০ কূপের খনন শেষ হয়, কূপটিতে তেলের পাশাপাশি গ্যাসের ৩টি স্তর পাওয়া গেছে। স্তরগুলোর অবস্থান হচ্ছে ২৪৬০ থেকে ২৪৭৫ মিটার, ২৫৪০ থেকে ২৫৭৬ মিটার ও ৩৩০০ মিটার গভীরতায়। গ্যাসের সম্ভাব্য মজুদ ৪৩.৬ থেকে ১০৬ বিলিয়ন ঘনফুট হতে পারে বলে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ আশা করছে।

সিলেট-১০ কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলনের জোর প্রস্তুতি চলছে। কূপটি গ্যাস উত্তোলনের জন্য প্রস্তুত থাকলেও পাইপলাইন না থাকায় উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছে না। কূপটি থেকে হরিপুর পর্যন্ত ৬ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইন বসানোর কাজ চলমান রয়েছে।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা ডিসেম্বরের মধ্যেই পাইপলাইন নির্মাণ কাজ শেষ করার প্রচেষ্টা নিয়েছিলাম। সওজের (সড়ক ও জনপথ বিভাগ) কিছু জটিলতার কারণে কাজটি বিলম্বিত হয়েছে। ৩ কিলোমিটারের মতো পাইপলাইন অবশিষ্ট রয়েছে, আমরা ১ মাসের মধ্যেই শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছি।পেট্রোবাংলার একটি টিম শিগগিরই সিলেট সফর করবে। প্রয়োজনে সওজের সঙ্গে বসে দ্রুত সমাধান করা হবে। ফেব্রুয়ারি থেকে দৈনিক ২০ থেকে ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।

এক সময় দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে দৈনিক ২৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যেতো। গত ২৫ ডিসেম্বর মাত্র ১৯২৫ মিলিয়ন ঘনফুট উৎপাদন হয়েছে। প্রতি দিনেই কমে আসছে দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলোর উৎপাদন। পেট্রোবাংলার প্রাক্কলন বলছে ২০২৬-২৭ অর্থবছরে দেশে গ্যাসের চাহিদা ৪৫০০ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে। যদিও কেউ কেউ বলতে চান এখনই গ্যাসের প্রকৃত চাহিদা সাড়ে ৪ হাজারের ওপরে রয়েছে।

অন্যদিকে ১৯৮৬ সালে দেশে প্রথম তেলের সন্ধান পাওয়া যায় হরিপুরে। এটি পাঁচ বছর স্থায়ী হয়েছিল, তারপর বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৬৭ লাখ ৬১ হাজার ৩২০ টন জ্বালানি তেল ব্যবহৃত হয়েছে। মাত্র ৮ শতাংশ এসেছে দেশীয় উৎস (গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে উপজাত- কনডেনসেট) থেকে, আর ৯২ শতাংশ জ্বালানি যোগান এসেছে আমদানি থেকে। ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের মধ্যে ৬৩ শতাংশ হচ্ছে ডিজেল আর বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহৃত ফার্নেস অয়েল রয়েছে ১৪ শতাংশ।