মিথিলা গ্রুপের গ্যাস মিটার টেম্পারিং

সংযোগ কাটতে গেলে তিতাস কর্তাদের মেরে ফেলার হুমকি

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মিথিলা টেক্সটাইল কোম্পানির মালিক আজাহার খান

মিথিলা টেক্সটাইল কোম্পানির মালিক আজাহার খান

মিথিলা টেক্সটাইলে গ্যাসের মিটার টেম্পারিং, সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গেলে হুমকির মুখে ফেরত আসতে বাধ্য হয়েছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির লোকজন। দিনভর তিতাসের লোকজনকে আটক করে রাখা হয়, পুলিশ ব্যর্থ হলে মধ্যরাতে সেনাবাহিনীর সহায়তার উদ্ধার হয় তিতাসের লোকজন।

নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজার উপজেলায় কালিবাড়ি রোডে ধুপতারা এলাকায় অবস্থিত কারখানাটি। প্রভাবশালী কোম্পানিটির মালিক আজাহার খান কখনও হুমকি দিয়ে কখনও ম্যানেজ করে দীর্ঘদিন ধরেই অপকর্ম করে আসছেন। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ওই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুর ছত্রছয়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। 

বিজ্ঞাপন

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহনেওয়াজ পারভেজ বার্তা২৪.কম বলেছেন, ২৪ অক্টোবর দুপুরে গিয়ে মিটার টেম্পারিংয়ের প্রমাণ পায়, পরে কম্পিউটারে ডাটা চেক করে সেখানেও মিটারে হস্তক্ষেপের প্রমাণ পাওয়া যায়। মিথিলা গ্রুপের লোকজনের সামনে মিটার চেক করে দেখানো হয় সিল ভাঙ্গা, স্ক্রু খোলা। ডাটা যেখানে থাকে সেখানে রেকর্ড থাকে কখন কোথায় হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। সেগুলোও তাদের দেখানো হয়।


তিনি বলেন, এমন ক্ষেত্রে নিয়ম হচ্ছে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে মিটার খুলে আনা। পরে যখন লাইন কাটতে গেছে কোম্পানির লোকজন বাঁধা দেয়। আমাদের লোকজনকে আটক করে রাখে, তাদেরকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। লোকজন জমায়েত করে আমাদের লোকজনকে বাঁধা দেয়।

পরে পুলিশ গেলেও তারা ফেরত আসেন। রাতে সেনাবাহিনীর সহায়তায় আমাদের লোকজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। সেনাবাহিনী গেলেও তারা মিটার খুলতে বাঁধা দিয়েছে।শনি-রোববার আরেকটি মিটার দিয়ে ওই মিটারটি খুলে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান তিনি। 

তিনি বলেন, খুবই প্রভাবশালী ওই কোম্পানি লোকজন অতীতেও নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করে অনিয়ম করে যাচ্ছে বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। বিগত সরকারের সময়ে অনেক দফায় অভিযান পরিচালনার চেষ্টা করা হলেও নানামূখী চাপের কারণে সম্ভব হয়নি।

তিতাস গ্যাসের অপর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, অতীতে যখনই তার কারখানায় অভিযান পরিচালনার চেষ্টা হয়েছে তখনেই খোদ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ফোন আসতো। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তৎকালীন মূখ্যসচিব তোফাজ্জল হোসেন নিজে ফোন করে অভিযান পরিচালনা থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিতেন। অনেকবার আড়াইহাজারে অবস্থিত মিথিলা টেক্সটাইলে অভিযান চালাতে গেলেও ফেরত আসতে হয়েছে টিমকে। কখনই কারখানার ভেতর প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

গতকাল (২৪ অক্টোবর) আমাদের লোকজনকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল। তারা বলে লাইন কাটলে কেউ জীবন নিয়ে ফেরত যেতে পারবেন না।

আওয়ামী লীগ পরিবর্তন হলেও মিথিলা গ্রুপের চেয়ারম্যান আজাহান খানের দৌরাত্ম্য কমেনি। গ্রুপটি মিটার টেম্পারিং করে শত শত কোটি টাকা হাতিয়েছে বলে তিতাস গ্যাস মনে করছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, অনিয়মের জন্য যখনই লাইন কাটতে যাচ্ছি তখনই নানা রকম বাঁধা আসছে, হুমকি আসছে। কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে, শ্রমিকরা বেকার হবে সেটাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে।


তাদের আমরা বলেছি, বকেয়া রাখবেন অনুমোদিতভাবে গ্যাস ব্যবহার করবেন তখনতো জেনেশুনেই কাজটা করছেন। তখনতো বিষয়টি আপনাদের জানা থাকার কথা, ধরা পড়লে লাইন কাটা হবে। জরিমানা হবে। এখন কেনো বলছেন, আমারও মায়া লাগে শ্রমিকরা বেকার হবে। কিন্তু আমরাতো চুরিকে উৎসাহ দিতে পারি না।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আসার পর তিতাস গ্যাসের দায়িত্ব পান শাহনেওয়াজ পারভেজ। অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ক্ষেত্রে অতীতের সকল রেকর্ড ভাঙতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। গত দেড় মাসে ৭৮টি অবৈধ শিল্প সংযোগ উচ্ছেদ করেছেন। ওইসব সংযোগ দিয়ে মাসে প্রায় ৪ কোটি টাকার গ্যাস চুরি হচ্ছিল। এছাড়া আবাসিক ৫ হাজার ১৭০টি, বাণিজ্যিক সংযোগ ৪৬টি বিচ্ছিন্ন করেছেন। এসব সংযোগ দিয়ে দৈনিক প্রায় ৪১ লাখ ৩৭ হাজার ঘনফুট গ্যাস চুরি হতো।

বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক দায়িত্ব নেওয়ার পূর্বে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে মাত্র ৭৪টি অবৈধ শিল্প সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। আর শাহনেওয়াজ পারভেজ দায়িত্ব নেওয়ার দেড় মাসের মধ্যে ৭১টি অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রেকর্ড গড়েছেন। এতে করে অবৈধ গ্যাস ব্যবহারকারি ও তাদের সঙ্গে জড়িত থাকা তিতাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেছেন, এক হিসাবে দেখেছি দৈনিক প্রায় ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস চুরি হচ্ছে। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। জনসাধারণকে এগিয়ে আসতে হবে, যাতে এসব চুরি বন্ধ করা যায়। চুরি বন্ধ করে ওই ২০০ মিলিয়ন যদি বৈধ গ্রাহকদের দিতে পারি তাহলে তারা আরও ভালো বিজনেস করতে পারবেন। রাষ্ট্র লাভবান হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অভিযান জোরদার করা হয়েছে, আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। জ্বালানি উপদেষ্টার পক্ষ থেকে বার্তা হচ্ছে, অবৈধ সংযোগ ব্যবহারকারির কোন ব্যক্তি পরিচয় বিবেচ্য হবে না। অবৈধ ব্যবহারের খবর পেলেই অভিযান এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।