বাজেটের চেয়ে সুশাসন নিশ্চিত জরুরি: শরমিন্দ নীলোর্মি

  • আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

জাতীয় সংসদে উত্থাপিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মি বলেছেন, বিভিন্ন খাতের জন্য বাজেটে বরাদ্দ কমবেশির চেয়ে বড় কথা হচ্ছে সুশাসন নিশ্চিত করা। তিনি মনে করেন, সরকারকে কনজারভেটিভ পাবলিক এক্সপেন্ডিচারে যেতেই হবে। দুর্নীতিটা কমিয়ে আনতে হবে। খরচটাকে র‌্যাশনালাইজ করতে হবে।

খরচকে র‌্যাশনালাইজ করার মাধ্যমে রিজার্ভের বিদ্যমান সংকট ধীরে ধীরে দূর হবে উল্লেখ করে অর্থনীতির এই শিক্ষক বলেছেন, ‘ম্যাক্রো ইকোনমিকে শক্তিশালী করতে হলে, অভ্যন্তরীণ সম্পদকে সর্বোচ্চ কীভাবে কাজে লাগানো যায় সে চেষ্টা করে রিজার্ভ বাড়াতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

সংশোধিত বাজেটে এসবের প্রতিফলন দেখতে চান অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মি। বৃহস্পতিবার রাতে বার্তা২৪.কম-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন তিনি। কথা বলেছেন পরিকল্পনা সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম।

বার্তা২৪.কম: কেমন হলো এবারের বাজেট?

অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মি: অর্থমন্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘শুধু শুধু বাজেটের আকার বাড়িয়ে তো লাভ নেই’- যা বাস্তবিক অর্থেই সত্যি। গত কয়েক বছরের ট্রেন্ড দেখেছিলাম বাজেটের হার প্রায় ১০ শতাংশের মতো বাড়ে। এবার সে আকার বেড়েছে ৫ শতাংশের মতো। এক ধরনের সংকোচনশীল নীতিকৌশলের দিকে সরকার গেছে বলে মনে হচ্ছে। এখন...সরকার কিছু প্রায়োরাটাইজও করেছেন বলে মনে হচ্ছে। আপনি যদি বাজেট বক্তৃতায় দেখেন, রাজস্ব ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, এলডিসি গ্রাজুয়েশনের প্রস্তুতিসহ আরও কিছু অগ্রাধিকার সরকার নিয়েছে। নীতি ও কর সহায়তা দেওয়া, সম্পদের পুনরাবর্তন ও বৈষম্য হ্রাস, মুদ্রাস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রাখা, দেশীয় শিল্পের সংরক্ষণ ও বিকাশ, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, রফতানি বহুমুখীকরণে নীতি ও কর সহায়তা-ইত্যাদি বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়েছে। আমি যদি দু’একটি বিষয় দেখি, বলা হচ্ছে দেশীয় শিল্পের সংরক্ষণ ও বিকাশ, আপনি দেখবেন আমাদের স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত কয়েকটি শিল্পপণ্য; যেমন-রেফ্রিজারেটর জাতীয় পণ্য-এগুলো উৎপাদনে দেশীয় পর্যায়ে স্থানীয় উৎপাদনের ওপরে আগে শুল্কশূন্য ছিল। এবছর এটা সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে। এরকম কিছু শিল্পে করারোপ করা হয়েছে, যেটা মোটেই আমদানি প্রতিস্থাপক শিল্প এবং দেশি শিল্পকে উৎসাহিত করে না। এই করারোপে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। শেষ পর্যন্ত তা ভোক্তার ওপরে গিয়ে বাড়বে।

আরও দেখেছি কয়েকটি বিষয়ের ওপরে ...এনার্জির ওপরে বেশ কিছু কথাবার্তা বলা হয়েছে। এনার্জির সাপ্লাই সাইড নিয়ে যতটা কথা হয়েছে, এনার্জির ডিমান্ড সাইড নিয়ে তেমন কিছু বলা হয়নি। বরঞ্চ এলইডি বাতির দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এলইডি বাতি তো হচ্ছে অনেক এনার্জি সাশ্রয়ী বাতি। এলইডি বাতির দাম যদি বাড়িয়ে দেওয়া হয় করারোপের কারণে তাহলে আমাদের পুরনো যে টিউবলাইটগুলো আছে এগুলো রিপ্লেসমেন্টের যে ইনটেনসিভ সেগুলো নষ্ট হবে। এর ফলে যেটা দাঁড়াবে..আমরা অনেক টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করব বটে, তবে অনেক টাকা দিয়ে বিদ্যুত উৎপাদন না করে বিদ্যুত সাশ্রয়ীভাবে কাজ চালানোর যে প্রবণতা সেই কাজকে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে না। আবার বলা হচ্ছে স্থানীয় পর্যায়ে গাড়ি যদি এসেম্বেল করা হয় বা গাড়ি যদি বানানো হয় তাহলে কর সুবিধা দেওয়া হবে। কিন্তু এই যে ইলেকট্রিক ভেহিকেলগুলো ইলেকট্রিক চার্জ কই থেকে পাবে? এই ইলেকট্রিসিটি কই থেকে উৎপাদন হবে। যদি ইলেকট্রিক ভেহিকেলই হয়, তাহলে তার ফরওয়ার্ড লিংকে ও ইনওয়ার্ড লিংকে যে মার্কেটগুলো তা তৈরি করার ক্ষেত্রে প্রণোদনা দেওয় হয়নি।

আপনি টয়োটা কেন কিনবেন? কারণ আপনি টয়োটার যন্ত্রপাতি যতোটা সুলভে পান নিশান পেট্রলের যন্ত্রপাতি ততো সুলভে পান না। ফলে একটা ইলেকট্রিক ভেহিকেল কিনতে গেলে তার যন্ত্রাংশের জন্য যে স্থানীয় শিল্প তৈরি করতে হবে তাতেও প্রণোদনা দেওয়াটাও প্রয়োজন ছিল। ইলেকট্রিক ভেহিকেল চার্জ্যে চার্জিং স্টেশনের জন্য কোন বিনিয়োগ ধরা হয়েছে কি? অলরেডি যে ইলেকট্রিসিটি উৎপাদন করা হয়, তা তো খরচ করতে পারি না। ইলেকট্রিক ভেহিকেলের জন্য চার্জিং স্টেশনগুলো যাতে রাতে খোলা রাখা হয়, বিশেষ প্রণোদনা দেওয়ার গাইডলাইনগুলো এ বাজেটে নাই।

বার্তা২৪.কম: দেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশই তরুণ জনগোষ্ঠী। তাদের ক্ষেত্রে বড় সংকট হচ্ছে কর্মসংস্থানহীনতা। নতুন কর্মসংস্থানে এই বাজেটে কি রয়েছে?

অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মি: আমার কাছে মনে হয়েছে, নতুন কর্মসংস্থানের জন্য অনেক কিছু বলা হয়নি। অনেক বড় ধরনের প্রয়োজন হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান; দেশে ও বিদেশে-তারও কোন আউটলুক কিন্তু দেখিনি আমি। একটি জিনিস...আমরা তো রেমিটেন্সের ওপর অনেক নির্ভর করি-এক জায়গায় আমি দেখলাম লেখা আছে; ‘নিবাসী এবং অনিবাসী’। সাধারণ ব্যক্তি যদি আইটি সেক্টরে কাজ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেন সেখানে কর রেয়াত দেওয়া হয়েছে কিন্তু এটা শুধু আইটি সেক্টর রিলেটেড হবে কেন? নিবাসী এবং অনিবাসী যদি আইটি বাদেও অন্যান্য সেক্টরে কাজ করে আয় করেন এবং অর্থ আনতে পারেন তাকে রেয়াত দিতে তো দোষের কিছু নেই। আপনি সাংবাদিকতা করে বিদেশের কোন সংবাদমাধ্যম থেকে যদি রয়্যালটি পান, এখন সেই টাকার ওপর যদি ১০% কর দিতে হয়-তা ন্যায্য হতে পারে না। আপনি দেশের কাজ করে বিদেশের মুদ্রাটা আনছেন, দেশে আপনাকে তো ইন্টেনসিভ দিতে হবে। আমি নিবাসী ও অনিবাসীদের ক্ষেত্রে আইটি সেক্টরের বাইরেও সকল আইনানুগভাবে উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা কর রেয়াতের আওতায় আনার পক্ষে।

বার্তা২৪.কম: শুল্ক আরোপে ন্যায্যতার প্রশ্ন তোলা হচ্ছে এই বাজেটে। আপনি কি বলবেন...

অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মি: দুটো জিনিস আমার কাছে অস্বস্তিকর মনে হয়েছে, সেটা হচ্ছে ব্যাংক খাতের সংস্কারের ওপরে তেমন কিছু আলোকপাত করা হয়নি, আমি যতটুকু দেখেছি। ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক অপরিবর্তিত থাকছে, তবে তা স্ল্যাব অনুযায়ী। ১০-৫০ লক্ষ এটা একটা স্ল্যাব হয়েছে, ৫০ লক্ষ-১ কোটি একটি স্ল্যাব হয়েছে। এবং সেই অনুযায়ী একটি প্রগ্রেসিভ আবগারি শুল্ক বসানো হয়েছে। অস্বস্তিকর যেটা সেটা হলো-অফশোর ব্যাংকিং এর আওতাধীন যেসব আমানতকারীরা রয়েছেন তাদেরকে আবগারী শুল্ক থেকে অব্যাহুতির প্রস্তাব করা হয়েছে। যারা বিদেশের ব্যাংকে টাকা রাখেন সেটাই তো অফশোর ব্যাংকিং, অফশোর ব্যাংকে রাখা আমানতের ওপর শুল্ক মওকুফ করা হয়েছে, দেশে এই আমানত আনলে আবগারি শুল্ক মওকুফ হয়ে যাবে, কিন্তু প্রশ্ন করা হবে না-এই টাকাটা কোথা থেকে এনেছি। আমি যেমন গবেষণার কাজ করি, আমার দেশের বাইরের গবেষণা, কনসাল্টেন্সির টাকাটা যখন আসছে তখন আমাকে ১০ পার্সেন্ট দিতে হচ্ছে। যিনি বড় ব্যবসায়ী অফশোর ব্যাংকে টাকা রাখতে পারছেন, তিনি কোন আবগারি শুল্ক ছাড়াই টাকাটা দেশে আনতে পারছেন। সেটা তো ন্যায্যতা হল না!

বার্তা২৪.কম: বৈধ আয়ের ওপর করারোপের চেয়ে কম করারোপ করা হয়েছে কালো টাকা সাদা করার সুযোগে...

অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মি: এটা গত অর্থ বছরেও ছিল। আপনি অবৈধ আয় করবেন, তারপর ডিক্লারেশন নেবেন, শুধুমাত্র ১০ পার্সেন্ট দিলেই আপনার টাকা সাদা হয়ে যাবে। ধরুন আপনি বৈধ আয় করেন, আপনার জন্য তো ইনটেনসিভ নেই। আরেকটা ইন্টারেস্টিং আছে এক্ষেত্রে; বাজেট বক্তৃতায় এক জায়গায় বলা আছে...অ্যাপার্টমেন্ট, ফ্ল্যাট ও ভূমির ওপরে অনেক সময় অনেক করদাতা না জেনে বা ভুল করে স্বনির্ধারিত আয় ঠিক মতো দেখাতে পারে না। বলা হচ্ছে কোন করদাতা স্থাবর সম্পত্তি ফ্ল্যাট, জমির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট করহার ও নগদ সহ অন্যান্য পরিসম্পদের ওপর ১৫ শতাংশ কর পরিশোধ করলে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করা হবে না। ধরুন আমি একটি ফ্ল্যাট কিনেছি, ভুল করে আমি দেখাইনি, এবার দেখালাম তাহলে ফ্ল্যাটের ওপর যে কর ধার্য হয় যে টাকায় কিনেছি-১৫ পার্সেন্ট কর দিলেই তা ঠিক হয়ে যাবে। এটা একটা সুযোগ। তাহলে আমি মোহাম্মদপুরে বাস করি ৩০০০ স্কয়ারফিটের বাসায়, আর অন্যজন ৫০০০ স্কয়ার ফিটের বাসায় গুলশানের বাসায় বাস করেন। দুজনই ভুল করতে পারেন বটে কিন্তু দণ্ডের পরিমাণ সমান হবে না। সরকার তো বারবারই বলছে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে হবে। এ জাতীয় কাজগুলো রিভাইস করা দরকার।

বার্তা২৪.কম: আমদানি পণ্যে শুল্ক আরোপ নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?

অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মি: ধরুন, আড়াই কেজির প্যাকেটজাত দুধ আমদানি করতেন তার ওপর করহার ছিল ৮১ শতাংশ, এবার সেখানে ২০শতাংশ শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। আবার যদি বাল্ক কনটেইনার ভর্তি গুঁড়া দুধ কেউ আনেন, তখন শুল্ক অনেক কম। বাল্কভর্তি দুধ দেশে এনে প্যাকেটজাত করেন। অনেক প্যাকেটে লেখা থাকে বাংলাদেশে প্যাকেটজাত। যেহেতু বাল্কের দুধে শুল্ক অনেক কম ছিল সেই প্যাকেটজাত দুধে ভ্যালু অ্যাড করার পর দাম অনেক কম পড়তো। এখন সরাসরি আমদানি করার ওপর ২০ পার্সেন্ট শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, যে কেউ চাইবে দামে সামান্য হেরফের হলেও বিদেশি প্যাকেটজাত পণ্যটিই কিনতে। এখন দেশে যারা প্যাকেট করে উৎপাদন করে তাদের একটি ভ্যালু চেইন আছে। এই যে ভেল্যু এডিশন করে যারা বেঁচে আছেন তারা কিন্তু এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

বার্তা২৪.কম: মধ্যবিত্তের ওপর বাড়তি করারোপে কি প্রভাব পড়বে...

অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মি: যেটি দেখতে পেলাম সিকিউরিটি গার্ড কোম্পানির ওপর কর বেড়েছে। অন্যদিকে দেখুন-ওয়াসার পানি খাওয়া যায় না কিন্তু বিল দিতে হয়। বাধ্য হয়ে গ্রাহকদের পানি পান করার জন্য ফিল্টার ব্যবহার করতে হয়। বিদেশি পানির ফিল্টারে ওপর শুল্ক বাড়ানো হয়েছে এ বাজেটে। এখন একে আপনি নিত্যপ্রয়োজনীয় বলবেন কি বলবেন না? এই বাজেট বাড়লে কি আপনার বেতন বাড়বে না আমার বেতন বাড়বে? আদা, রসুন, পেয়াজ, মাংস ইত্যাদির কথা যদি বাদও দিই, এগুলোর দাম তো কমছেই না। আমাদের বাদবাকী যত উপযোগ আছে স্বাস্থ্যের জন্য, এগুলোর জন্য যখন শুল্ক বাড়ে তখন খরচও বেড়ে যায়। আমার প্রশ্ন...আমরা যে ট্যাক্স দিই তাহলে আমাদের কেন সিকিউরিটি গার্ড রাখতে হয়? আমাকে কেন বার বার ফিল্টার কিনতে হয়? ট্যাক্সের সেবাটা কোথায়?

বার্তা২৪.কম: এই বাজেট প্রণয়নে সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টরা সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে, বিশেষ করে একাডেমিয়ার সঙ্গে কোনো আলোচনা কী করেছেন?

অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মি: একাডেমিয়ার সঙ্গে কোন আলোচনা হয় না। বাজেটে পলিটিক্যাল উইলই প্রধান। কর্মকর্তাদের শুধু রাজনৈতিক দর্শন বলে দেওয়া হয়। মূলতঃ বিজনেস কমিউনিটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বসেন, আপনি তাদের বিজিএমইএ বা এফবিসিসিআই ছাড়া অন্য কোনো স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বসতে দেখেছেন? ছাত্র-শিক্ষক কিংবা গার্মেন্টস শ্রমিকদের সঙ্গে কী বসেন? এই বিষয়গুলো তো আছেই, সরকার এগুলো করে না।

বার্তা২৪.কম: অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক নানা চ্যালেঞ্জের মাঝে প্রণীত এ বাজেট জনগণের কষ্ট লাঘবে কতটা সহায়ক বলে মনে করেন আপনি?

অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মি: আমার কাছে মনে হয়, বাজেটে যা আছে তা তো আছেই কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা সুশাসন নিশ্চিত করা। সরকারকে কনজারভেটিভ পাবলিক এক্সপেন্ডিচারে যেতেই হবে। দুর্নীতিটা কমিয়ে আনতে হবে। খরচটাকে র‌্যাশনালাইজ করতে হবে। খরচকে র‌্যাশনালাইজ করার মাধ্যমে রিজার্ভের যে সংকট তা একটু একটু করে দূর হবে। ম্যাক্রো ইকনমিকে শক্তিশালী করতে হল, অভ্যন্তরীণ সম্পদকে সর্বোচ্চ কীভাবে কাজে লাগানো যায় সে চেষ্টা করে রিজার্ভ বাড়াতে হবে। 

আরেকটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই, এমিউজমেন্টে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। নাগরিক জীবনে স্বজনদের নিয়ে পার্কে যাওয়ার সুবিধা তো নেই বললেই চলে। কিছু পার্কে রাইড ব্যবহার হয় আনন্দ-বিনোদনের জন্য। এমনিতেই কোন স্পেস নেই নতুন প্রজন্মের। হয়ত আমি এ জায়গাগুলোই যাই আমাদের শিশুদের নিয়ে। সেখানে এখন ঢোকা যাবে না, কারণ কর বাড়িয়ে দিয়েছে। আপনার বেতন তো বাড়েনি। আমরা বাচ্চাদের শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে পারছি না। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছি না। বাধ্য হয়ে ছেলেমেয়ের বাইরে পাঠিয়ে দিই, টাকাটাও বাড়িয়ে পাঠিয়ে দিই। আমার পরের জেনারেশন যদি এই দেশের অংশীজন না হয়, তাহলে এই দেশকে আমি কেন ভালোবাসব? কেন আমি এই দেশে বিনিয়োগ করব, বলুন?

বার্তা২৪.কম: শিক্ষায় যেমন বরাদ্দ বাড়েনি তেমিন সংস্কৃতিতে বরাদ্দ ৮০০ কোটি টাকাও অতিক্রম করল না এ বাজেট...

অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মি: যা দেখলাম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ২০ শতাংশ করারোপ করা হয়েছে। আমাদের বাজেটই কয় টাকা? তার মাঝে যদি ২০ শতাংশ নিয়ে নেয়, তাহলে দুশ্চিন্তার ব্যাপার। তার মধ্যে আবার প্রভিডেন্ট ফান্ডগুলোকে পেনশন স্কিম নিয়ে কি হচ্ছে তা এখনো অনিশ্চিত। আমলারা কিন্তু সার্বজনীন পেনশন স্কিমে আসেননি। এই জুলাই মাস থেকে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সমস্ত শিক্ষক যোগ দেবেন তারা সার্বজনীন পেনশন স্কিমে আসবেন। এই স্কিম যদি এতই ভাল হয় তবে আমলারাই শুরু করুক; তারাই পথ দেখাক।