শিল্পে গ্যাস না পেলে ঈদে বেতন-বোনাস দেওয়া কঠিন হবে

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

শিল্পে গ্যাস সরবরাহ না বাড়ালে ঈদে কর্মীদের বেতন, বোনাস দেওয়া কঠিন হবে। পেট্রোবাংলার গণশুনানিতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস চাইলেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্তারা।

বুধবার (৬ মার্চ) পেট্রোবাংলার হল রুমে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সেবা গ্রহীতাদের অংশগ্রহণে গণশুনানি আয়োজন করে পেট্রোবাংলা। এতে  অঞ্চল ভেদে গ্যাস সরবরাহের বৈষম্য তুলে ধরে নিরসনের দাবি জানান বক্তারা।

উদ্বোধনী বক্তব্যে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, ‘যৌক্তিক সমালোচনা করুন। কঠোর সমালোচনা করুন, আপত্তি নেই। আত্মতৃপ্তিতে ভুগতে চাই না। কাজটি আপনারা কীভাবে দেখছেন সেটাই বড় কথা’!

তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, সেবার উন্নয়ন ঘটানো। ভোক্তা ও ট্রেডবডির সঙ্গে ঘন ঘন বসতে পারলে কাজটি সহজ হবে। আমরা কী করছি, সেটি আপনাদের কতটুকু কাজে আসছে আর আপনারা কী চান, সেটা বুঝতে সুবিধা হবে। পেট্রোবাংলার মতো প্রতিষ্ঠানের জন্য গণশুনানি জরুরি! বছরে বারবার দরকার! তাতে প্রকৃত চিত্র উঠে আসবে।

তিনি আরো বলেন, ‘দেশের প্রকৃতপক্ষে উন্নয়ন ও জিডিপির গতি ধরে রাখতে হলে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। পেট্রোবাংলার ফেল করার কোনো সুযোগ নেই। অন্য বিভাগ ফেল করলে সরকার বিকল্প উপায়ে সামাল দিতে পারবে কিন্তু পেট্রোবাংলা ফেল করলে সামাল দেওয়ার কোনো পথ নেই’।

পেট্রোবাংলার পরিচালক (প্রশাসন) মো. আলতাফ হোসেন বলেন, ‘আমরা সত্যিকার অর্থে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে চাই। আমাদেরও অনেক সীমাবদ্ধ রয়েছে। তারপরও সর্বোচ্চ সেবাটুকু দিতে চাই। আমরা ভালো হতে চাই। কেউ ভালো না হলে, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। নিজে অনিয়ম করবো না। অন্যরা করলেও প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে। তথ্য দিয়ে হেল্প করতে হবে। তাহলে যারা অনিয়ম করছেন, তারা ভয় পাবেন। অবৈধ গ্যাস লাইন উচ্ছেদ করতে গেলে বিক্ষোভ হবে; রাস্তাবন্ধ করা হবে এটা মেনে নেওয়া যায় না।

বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিংস্টেশন অ্যান্ড কনভার্সন ওয়ার্কসের প্রেসিডেন্ট মনোরঞ্জন ভক্ত বলেন, আমাদের জামানত ইস্যুটা খুবই জটিল হয়েছে। আমরা এক সময় ধর্মঘটেও গিয়েছিলাম। ২০১৮ সালে কমিটি রিপোর্ট দিয়েছে, তারপরও কোনো সুরাহা হয়নি। আমরা হাইকোর্টে যেতে বাধ্য হয়েছি। এক জোনের ম্যানেজার আমাকে ‘ফাজিল’ বলেছেন। আমি মাসে দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা বিল দিই। আমি খুবই ব্যথিত হয়েছি! এটা শুদ্ধাচারের মধ্যে পড়ে কি না!

বিজ্ঞাপন

গাজী গ্রুপের জিএম আলমগীর আকন্দ বলেন, গ্যাসের সরবরাহ না বাড়ালে খুবই সংকটে পড়বো। উৎপাদন করতে না পারলে আগামী ঈদে বেতন, বোনাস দিতে পারবো না।

আকবর কটন মিলস লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার (প্রশাসন) বলেন, গ্যাসের অভাবে দিনের বেলা বসে থাকতে হয়। রাতে কারখানায় কাজ চলে। ভালুকা জোনে দেড়মাস ধরে এই অবস্থা! এখন শ্রমিকদের ছুটিও দিতে পারছি না! এভাবে চললে ঈদে বেতন, বোনাস দেওয়া কঠিন হবে।

স্কয়ার ফ্যাশনের (ভালুকা) ইলিয়াস হোসাইন বলেন, আগেও গণশুনানিতে একই ধরনের সমস্যা নিয়ে কথা হয়েছে। তখন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ছিলেন নাজমুল হোসেন। আশ্বাস দেওয়া হয়েছে কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। প্রেসার ৫০ পিএসআই পাওয়ার কথা। ধনুয়া থেকে দেওয়া হয় ৩৫ পিএসআই। ৪০ দেওয়া হলে অন্তত ৬০ শতাংশ লোডে জেনারেটর চালানো সম্ভব হতো।

বক্তারা গ্যাসের সংকট ঠিক কবে নাগাদ দূর হবে, তার নিশ্চয়তা দাবি করেন। তারা বলেন, গ্যাস যেটুকু ঘাটতি, সেটি যেন সবার ওপর সমানভাবে ভাগ করা হয়। কোনো এলাকায় বেশি, কোনো এলাকায় কম দেওয়া হচ্ছে। এখান থেকে বের হয়ে আসা উচিত।

গণশুনানিতে বিশেষ অতিথি ছিলেন জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের যুগ্মসচিব মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন। পেট্রোবাংলা ও পেট্রোবাংলার অধীনস্থ কোম্পানি তিতাস, কর্ণফুলী, সুন্দরবন, বাখরাবাদ, জালালাবাদ ও পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানির কর্মকর্তা, এফবিসিসিআই, ডিসিসিআই ও বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।