বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে বর্জ্য পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা গেলে সফল ব্যবস্থাপনা হতে পারে, এমন চিন্তা দীর্ঘদিনের। অবশেষে সেই চিন্তার সফল বাস্তবায়ন হলো দেশে। তবে এই যাত্রার শুরুটা হলো কক্সবাজারের উখিয়া ক্যাম্পে।

ঢাকা মহানগর থেকে প্রতিদিন আসছে প্রায় সাত হাজার টন বর্জ্য। এরমধ্যে মাত্র দুই ভাগ পয়োবর্জ্য শোধন হয়। বাকি ৯৮ ভাগই কোনো না কোনো পথে যাচ্ছে নদীতে। উৎপাদিত বর্জ্য ফেলার জায়গা কমে যাওয়ায় আরো জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। একারণে পরিবেশ ও পানিদূষণের জন্যও বর্জ্য বড় হুমকি হয়ে উঠেছে।

বিজ্ঞাপন

বিশ্বের তৃতীয় অমনি প্রসেসর প্লান্টটি ১১ নভেম্বর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অমনি প্রসেসর হচ্ছে- যে প্রক্রিয়াটি বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ, ডিস্ট্রিল্ড ওয়াটার এবং অ্যাস উৎপাদন করা হয়। সেনেগাল, ভারতের পর তৃতীয় কোন রাষ্ট্র এই প্রকল্পটি পরীক্ষামূলক চালু হয়েছে। বাংলাদেশের প্রথম এই প্রকল্পটি কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। প্রায় ৬০ কোটি টাকার এই প্রকল্পটির উপকারভোগী আনুমানিক ১ লাখ মানুষ।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর জানিয়েছে, কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ৪ নম্বর এক্সটেনশন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ শুরু হয় ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে এবং প্রকল্পের কাজ শেষ হয় ২০২৩ সালের জুন মাসে। প্রকল্পটি ভারতের অঙ্কুর সাইন্টিফিক ও বাংলাদেশের এসআর করপোরেশন নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পায়। শতভাগ ভৌত অগ্রগতি শেষে বর্তমানে প্রকল্পটি পরীক্ষামূলক চালু করা হয়েছে। যার অর্থায়ন করেছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।

কক্সবাজার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী আবুল মনজুর জানান, এই প্রকল্পটি বাংলাদেশের প্রথম এবং বিশ্বের মধ্যে তৃতীয়। পরীক্ষামূলক চালু হওয়া প্রকল্পে প্রতিদিন ৩০ কিউবিট মিটার বা ৬ টন শুকনো পয়ঃ বর্জ্য, ৫ টন জৈব ব্যর্জ, ৫ শত কেজি প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ে মোট ১১.৫ টন বর্জ্য যা প্লান্ট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয় ।প্লান্ট থেকে প্রতিদিন গড়ে ৬০-৭০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়েই মূল প্রকল্পের সকল যন্ত্রপাতি চালু রাখা হয়। ফলে এই প্রকল্পের জন্য কোন প্রকার জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ বা ভিন্ন কোন বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় না।

তিনি আরো বলেন, প্রকল্পের বর্জ্য পরিশোধনের পর প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার থেকে ১২ শত লিটার ডিস্ট্রিল্ড ওয়াটার (পানি) উৎপাদন হয়। যে পানিকে কোন আয়ন বা সলিড কোন সল্ট থাকে না, শুধু হাইড্রোজেন আর অক্সিজেন আয়ন থাকে। ব্যাটারিতে এই পানি আয়নাইজ হয়ে হাইড্রোজেন আর অক্সিজেন আয়ন হয়ে ইলেক্ট্রিসিটি তৈরি করে এবং হাইড্রোজেন গ্যাস হয়ে থাকে। এটি বাজারজাত করা যাবে। একই সঙ্গে প্রকল্প থেকে প্রতিদিন গড়ে উৎপাদিত হচ্ছে ১২ শত থেকে ১৫ শত কেজি অ্যাস। যা সিমেন্ট সহ নানা কাজে ব্যবহার করা হয়। উৎপাদিত অ্যাস বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত হবে এবং এটি দ্বারা মাটি ভরাট বা পরোক্ষ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে চুক্তি মতে ভারতের অঙ্কুর সাইন্টিফিক তার নিজস্ব দক্ষ জনবল দ্বারা প্রকল্পটি পরিচালনা করছেন। আগামী ২ বছরের মধ্যে অঙ্কুর বাংলাদেশের এসআর করপোরেশনের নিজস্ব লোককে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তুলবে। এরপর প্রকল্পটি এসআরকে বুঝিয়ে দেবে। খুব অল্প জায়গায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করায় অনেক সুযোগ সুবিধাও রয়েছে।

কক্সবাজার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ প্লান্ট হতে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে ইপিএ/ডিওই স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী বায়ু নির্গমনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এবং উক্ত প্লান্ট থেকে উৎপাদিত পানি বাংলাদেশ পানীয় স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী পাওয়া যাবে। তিনি আরো বলেন, প্রকল্পটির প্রযুক্তির ডিজাইন লাইফ সব প্রধান অংশের ১০ বছর গ্যারান্টিসহ মোট ২০ বছর। এ প্রকল্পের আওতায় ২ বছরের অপারেশন ও মেইনটেনেন্স রয়েছে।

বাংলাদেশের এসআর করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী জাকির হাসান জুয়েল জানান, দেশের জন্যে ইতিহাস হতে পারাটাই আমার কাছে আনন্দের। যা দীর্ঘদিন আমাদের চিন্তার মধ্যে ছিল, সেটি এখন বাস্তব। বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ এবং ডিস্টিল ওয়াটার পাওয়া যাচ্ছে। যে প্রকল্পটি এসআর করপোরেশন এবং ভারতের অঙ্কুর সাইন্টিফিক যৌথভাবে বাস্তবায়ন করেছে। এখন সারাদেশেই এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন নিয়ে ভাবতে হবে। তাহলে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না। আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে বর্জ্য যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে। যা বাস্তবে রূপ দেয়া সম্ভব।