বিইআরসি কর্তৃক বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রক্রিয়া স্থগিত

  • সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) কর্তৃক বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির চলমান প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় কমিশনের বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন বিইআরসি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল।

তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেছেন, আপাতত দাম বাড়ানোর চলমান প্রক্রিয়া স্থগিত থাকবে। রোববার (১৫ জানুয়ারি) কমিশনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্থগিতের কোন সময়সীমা থাকছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আপাতত স্থগিত এটুকুই বলতে পারি। পরেরটা পরে বলতে পারবো, এখনই কোন মন্তব্য করা সম্ভব না।

বিজ্ঞাপন

বিইআরসি ৮ জানুয়ারি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির আইনি প্রক্রিয়া শুনানি গ্রহণ করে। ঠিক চারদিনের মাথায় (১২ জানুয়ারি) নির্বাহী আদেশে ৫ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়। বিইআরসি প্রতিষ্ঠার পর নির্বাহী আদেশে এভাবে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর নজির নেই। বিইআরসি কর্তৃক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকাকালীন নির্বাহী আদেশ দেওয়ায় অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

বিইআরসি গত ২১ নভেম্বর বিদ্যুতের পাইকারি দাম প্রতি ইউনিট ৫.১৭ টাকা থেকে ১৯.৯২ শতাংশ বাড়িয়ে ৬.২০ টাকা নির্ধারণ করে। তারপরেই বিতরণ কোম্পানিগুলো গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আবেদন জমা দেয়। কোম্পানিগুলো আবেদন জমা দিলে চিঠি দিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের মতামত নেয় বিইআরসি। ওই চিঠিতে বিইআরসিকে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম চূড়ান্ত করতে বলা হয়। যার প্রেক্ষিতে ৮ জানুয়ারি শুনানি গ্রহণ করে বিইআরসি। আইন অনুযায়ী শুনানির পর সম্পূরক প্রস্তাব (যদি থাকে) দেওয়ার জন্য ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। অর্থাৎ দাম বৃদ্ধির আদেশ থেকে মাত্র ৪ দিন পিছিয়ে ছিল বিইআরসি। প্রক্রিয়া যখন প্রায় শেষ দিকে, তখন কেনো নির্বাহী আদেশ দিতে হলো সেটাই এখন অনেকের কাছে বড় প্রশ্ন।

সংশোধিত বিইআরসি আইন অনুযায়ী গণশুনানি পরবর্তী ৬০ কর্মদিবসের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অনিদিষ্টকাল ঝুলিয়ে রাখার কোন সুযোগ নেই। হয় দাম বাড়িয়ে দিতে হবে, অথবা প্রস্তাব নাকচ করে দিতে হবে। সে হিসেবে আরও লম্বা সময় হাতে রয়েছে বিইআরসির। তবে বর্তমান কমিশনের চেয়ারম্যান এবং ৩ সদস্যের (মোট সদস্য ৪ জন) চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি মাসেই। পনের দিন পরেই (৩০ জানুয়ারি) সদস্য মোহাম্মদ আবু ফারুক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল ই ইলাহী চৌধুরী ও বজলুর রহমানের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। চেয়ারম্যান বজলুর রহমানের চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ৩ ফেব্রুয়ারি। ধারণা করা হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মতপার্থক্য তৈরি হওয়ায় তারা আর কোন দায়িত্ব নিতে চাইছেন না। তাদের প্রক্রিয়া চলমান থাকা অবস্থায় নির্বাহী আদেশ দেওয়ায় কমিশনও কিছুটা বিব্রত।

গণশুনানিতে অংশ নেওয়া ভোক্তাদের প্রতিনিধিরা ক্ষুব্ধ প্রক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তারা বলেছেন, সবে মাত্র বিইআরসি হাঁটি হাঁটি পা পা করে একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর দিকে যাচ্ছে। একদিকে যেমন ভোক্তাদের স্বার্থ দেখা হতো, একইসঙ্গে কোম্পানিগুলোর কিছুটা হলেও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হতো। এখন সেই জায়গাটি আর থাকল না। কোম্পানির বোর্ড সভায় বসে সচিব যে সিদ্ধান্ত নেবে, মন্ত্রণালয় বসে তা অনুমোদন দিয়ে যাবেন। কারও কিছু বলার থাকবে না।

বিদ্যুৎ বিভাগ নির্বাহী আদেশে গড়ে ৫ শতাংশ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। ঘোষিত নতুন দর চলতি জানুয়ারি থেকেই কার্যকর হবে। আবাসিকের লাইফলাইন গ্রাহকের (৫০ ইউনিট ব্যবহারকারী) ইউনিট প্রতি ১৯ পয়সা বাড়িয়ে ৩.৯৪ টাকা, প্রথমধাপে ৭৫ ইউনিট ব্যবহারকারীর ২১ পয়সা বাড়িয়ে ৪.৪০ টাকা করা হয়েছে।

৮ জানুয়ারি শুনানিতে বিইআরসি টেকনিক্যাল কমিটি গড় ১৫.৪৩ শতাংশ দাম বাড়ানোর সুপারিশ দেয়। সবচেয়ে বেশি ডিপিডিসির ১৬.৭১ শতাংশ এবং সবচেয়ে কম আরইবির ১৪.৭৪ শতাংশ। এর আগে ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি গ্রাহক পর্যায়ে ৫.৭৭ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়। কেউ কেউ মনে করছেন, সরকার অল্প পরিমাণে দাম বাড়িয়েছে। পরের মাসে আরেক দফায় বাড়িয়ে দিতে পারে বিইআরসি।

অন্যদিকে গত জুনে আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের (এলএনজি) দাম বৃদ্ধির ধোয়া তুলে ২২ দশমিক ৭৮ শতাংশ দাম বাড়িয়ে দেয় বিইআরসি। সার উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি ২৫৯ শতাংশ, শিল্পে ১১.৯৬ শতাংশ, বিদ্যুতে ১২ শতাংশ, ক্যাপটিভে ১৫.৫ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়। আবাসিকে একচুলার দর ৯৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৯০ টাকা, দুই চুলা ৯৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০৮০ টাকা করা হয়। প্রি-পেইড মিটার ব্যবহারকারী আবাসিক গ্রাহকদের ইউনিট প্রতি দর ১২.৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৮ টাকা, সার উৎপাদনে ঘনমিটার ৪.৪৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬ টাকা করা হয়।

ওই দাম বাড়ানোর কিছুদিন পরেই স্পর্ট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ করে দেয় সরকার। এলএনজি আমদানি কমিয়ে দিলে বেড়ে যায় গ্যাস সংকট, এতে শিল্প মালিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। তারা উৎপাদন অব্যাহত রাখতে নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস চান। মন্ত্রালয়ের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে তার দাম বাড়িয়ে হলেও নিবচ্ছিন্ন গ্যাসের দাবি করেন। সেই প্রস্তাবের ভিত্তিতেই গ্যাসের দাম বাড়াতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। গ্যাসের দাম বাড়ানো সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পেট্রোবাংলা ঘুরে মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর খবর পাওয়া গেছে। যে কোন দিন ঘোষণা আসতে পারে সূত্র নিশ্চিত করেছে।