রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাস্তবায়ন হার ১২.৫৭ শতাংশ

  • আসিফ শওকত কল্লোল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ছবি: সংগৃহীত

রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ছবি: সংগৃহীত

পাবনা জেলার রূপপুর এলাকায় দেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র রূপপুর পাওয়ার প্ল্যান্টের বাস্তবায়ন হার ১২.৫৭ শতাংশ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনী বছরে মেগা প্রকল্পগুলো দৃশ্যমান করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে সরকার। বড় বড় প্রকল্পগুলোর মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প অন্যতম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে এ প্রকল্পের কার্যক্রম তদারকি করছেন। প্রতি মাসেই প্রকল্প বাস্তবায়ন চিত্র জানতে চান তিনি। এরই অংশ হিসেবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় গত জুন-অক্টোবর পর্যন্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের চিত্র তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমানে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাস্তবায়ন হার ১২.৫৭ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

তবে প্রকল্প পরিচালক ড. সৈকত আকবর বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘নভেম্বর শেষে প্রকল্পের প্রকৃত বাস্তবায়ন হার হবে ২৭ শতাংশ। ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে প্রথম রিঅ্যাক্টরের (উৎপাদন কেন্দ্র) দেয়াল তৈরি শুরু হয়। আর ২০১৭ সালের জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী দ্বিতীয় রিঅ্যাক্টর নির্মাণের কাজ উদ্বোধন করেন। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারবো।’

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অনুকূলে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) মোট ১১ হাজার ৯৯ কোটি ২৬ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। এর মধ্যে এক হাজার ৪৬২ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে এবং ছাড় করা অর্থের মধ্যে এক হাজার ৪৩৭ কোটি ৪৬ লাখ ৩২ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে।

এসব অর্থ দিয়ে প্রথম রিঅ্যাক্টরের কাজের সাথে সাথে দ্বিতীয় রিঅ্যাক্টরের কাজও শুরু করা হয়েছে। এছাড়াও রূপপুরের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশে পদ্মা নদীর রিভার এমবার্গো ও তীর রক্ষার অবকাঠামো তৈরি, সিগনালিংসহ রেললাইন সংস্কার ও নির্মাণের জন্য ২০১৮-১৯ সালের এডিপিতে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। সেই অর্থ বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের পাশাপাশি উন্নয়ন কাজের জন্য ছাড় করার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়। ইতোমধ্যেই রেল মন্ত্রণালয় ৪টি স্থান চিহ্নিত করেছে। যার ভূমির পরিমাণ প্রায় ৯৯.২১ একর। এর মধ্যে ২০৮৯ দাগের ০.৮৬ একর ভূমি এবং ০৮৩ দাগের ১৬.৯৮ একর ভূমি জরুরি ভিত্তিতে প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ দিতে হবে।

রূপপুর পাওয়ার প্ল্যান্টে উৎপাদিত ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ন্যাশানাল গ্রিডে সরবরাহ করার জন্য দেশি ও বেদেশি বিশেষজ্ঞ নিয়ে একটা কমিটিও করা হয়েছে।

জানা গেছে, নির্মিতব্য ভিভিইআর-১২০০ টাইপের দুই রিঅ্যাক্টরে রয়েছে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা, যা মনুষ্য সৃষ্ট বা প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলায় সক্ষম। জাপানের ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দুর্ঘটনার কথা মাথায় রেখে কেন্দ্রের নকশা করা হয়েছে। দুর্ঘটনা মোকাবিলায় নকশায় বিভিন্ন অ্যাক্টিভ ও প্যাসিভ শীতলীকরণ ও চাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যেকোনো দুর্ঘটনায় পারমাণবিক চুল্লির মূল অংশের (কোর) বিগলন প্রতিরোধ ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মানদন্ডের চেয়েও কয়েকগুণ বাড়ানো হয়েছে। শেষ পর্যায়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কোর ক্যাচার রাখা হয়েছে, যা মারাত্মক দুর্ঘটনায় তেজস্ক্রিয় ছড়ানো প্রতিরোধ করবে।

আরো জানা গেছে, বর্তমানে অতিরিক্ত রিঅ্যাক্টর বিল্ডিংয়ের দেয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে, চুল্লী ভবন ও ভিত্তি স্ল্যাব শক্তিশালী করা হয়েছে, বাষ্প স্থিতিশীলকরণ বায়ু সংক্রান্ত কুলিং টাওয়ার ও অন্যান্য কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। ইউনিট-১ ২০২৩ সালে এবং ২০২৪ সালে দ্বিতীয় ইউনিট কমিশন করা হবে। দু’টি ইউনিট থেকে মোট ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার রোসএটোম কোম্পানির সাথে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য চুক্তি সই করে বাংলাদেশ সরকার। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে শুরু হওয়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পটির মূল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। দ্বিতীয় অর্থ বছরে এডিপিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১১ হাজার ৯৯ কোটি টাকা।