বাণিজ্য মেলায় কয়েদিদের বানানো পণ্যে ক্রেতাদের সাড়া

  • আরমান হেকিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বাণিজ্য মেলায় কয়েদিদের বানানো পণ্যে ক্রেতাদের সাড়া

বাণিজ্য মেলায় কয়েদিদের বানানো পণ্যে ক্রেতাদের সাড়া

পূর্বাচলের ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় বিক্রি হচ্ছে দণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদিদের তৈরি বিভিন্ন পণ্য। সেখানে পাটের তৈরি ব্যাগ নকশি কাঁথা আসবাবপত্রের পাশাপাশি মিলছে জুতা ও পোশাক। সাশ্রয়ী মূল্যে উন্নত মানের এসব পণ্য কিনতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। কয়েদিদের তৈরি পণ্য আগে ব্যবহার করেছেন এমন ক্রেতারা কেনাকাটা করছেন বেশি।

স্টলের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মেলায় দেশের ৩৮টি কারাগারের কয়েদিদের তৈরি করা পণ্য প্রদর্শন করা হয়েছে। কয়েদিরা কারাদণ্ডের অংশ হিসেবেই কারাগারে বসে এসব পণ্য তৈরি করেন। কয়েকটি কারাগারের বিক্রয় কেন্দ্রে সব সময় পাওয়া যায় এ পণ্য। তবে কারা পণ্যের প্রচার ও প্রসারের জন্য ২০১৮ সাল থেকে বাণিজ্য মেলায় স্টল নেয়া হচ্ছে। লাভের অর্ধেক টাকা পাচ্ছেন কয়েদিরা।

বিজ্ঞাপন

'কারা পণ্য' স্টল ঘুরে দেখা গেছে, বাঁশ ও বেতের বুননে তৈরি মোড়া, পাটের তৈরি টেবিল-চেয়ার, ড্রেসিং টেবিল, শোপিস, ওয়ালমেটস, কাঠের তৈরি খেলনা প্রদর্শন করা হচ্ছে। এছাড়াও আছে জুতা, বিছানার চাদর, পাপোশ, মানিব্যাগ ও বাহারি রঙের পোশাক, খাবারের ঢাকনা, কুলা। প্যাভিলিয়নের একটি অংশে রাখা আছে কৃত্রিম ফুল, মালা, রেজিস্টার খাতা ও নোটবুক। রয়েছে হাল ফ্যাশনের ভ্যানিটি ব্যাগ, টিস্যুবক্স ও কার্পেট, ওয়াল ম্যাটস, পুঁতি দিয়ে তৈরি নানা উপহার সামগ্রী। ক্রেতাদেরও বেশ আগ্রহের সঙ্গে এসব পণ্য কিনতে দেখা গেছে।


প‍্যাভিলিয়নে পণ‍্য কিনতে আসা সাহিদা আক্তার বলেন, কয়েদিদের যে ক্রিয়েটিভিটি আছে সেটাই আমরা জানি না। ওরা যে ধরনের পণ্য তৈরি করে এগুলো বাইরের চেয়ে গুণগতমান অনেক ভালো। আমি কয়েক বছর আগে কুমিল্লা কারাগার থেকে কয়েদিদের তৈরি দুটি মোড়া কিনেছি। সেটি এখনো ব‍্যবহার করছি। তাদের পণ্যগুলো অনেক টেকশই।

খাইরুল ইসলাম নামে আরেক ক্রেতা বলেন, স্টলের সামনে এসে 'কারা পণ‍্য' নাম দেখে কৌতূহলী হয়ে ভিতরে ঢুকেছি। এগুলো কয়েদিদের তৈরি বলে তারা জানিয়েছে। পন্যগুলো অনেক সুন্দর ও আকর্ষণীয় লাগছে। কুলা এবং ঝুড়ি কিনেছি। দেখে টেকশই মনে হচ্ছে।


ক্যাশ কাউন্টারে বসে আছেন ডেপুটি জেলার আল মামুন খান। তিনি বলেন, আমাদের পণ্যগুলো অনেক মজবুত, এগুলো বাইরে পাওয়া যায় না। ক্রেতাদের ভালো সাড়া পাচ্ছি। কারা পণ্য ব্যবহার করেছেন এমন পুরনো অনেক ক্রেতা আসছেন। তারা বেশি কেনাকাটা করছেন।

মেলায় দায়িত্বে থাকা সাতক্ষীরা কারাগারের ডেপুটি জেলার রাকিব শেখ বলেন, পূর্বে থেকে কাজের কিছুটা অভিজ্ঞতা আছে এমন সশ্রম দণ্ডিত কয়েদিদের আমরা প্রশিক্ষণ দেই। এরপর সরকারি কোষাগার থেকে কাচাঁমাল কিনে দেই। তাদের তৈরি পণ্য কারাগারে থাকা আমাদের নিজস্ব স্টলে বিক্রি করি। কারা পণ্যের প্রচার ও প্রসারের জন্য মেলায় এসেছি। পণ্য বিক্রির লাভের অর্ধেক টাকা কয়েদিদের দেয়া হয়। কয়েদিরা এই টাকা চাইলে পরিবারের কাছে পাঠাতে পারে। আবার নিজেও খরচ করতে পারেন।


তিনি বলেন, কারা কর্তৃপক্ষ এসব পণ্য বিক্রি করে লাভবান হবে এমন কোন উদ্দেশ্য থাকে না। আমাদের উদ্দেশ্য থাকে কয়েদিরা কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে যেন একটি কাজের মধ‍্যে থাকতে পারেন। অবসর থাকলে অপরাধ বেশি হয়। কাজের মধ্যে থাকলে অপরাধ কমে যায়। কারামুক্ত হয়ে নিজে দোকান দিয়ে ব‍্যবসায় করছেন এমন হাজারো অপরাধীর কথা আমরা জানি।

পণ্যের দাম এবং কোন কারাগারে তৈরি করা হয়েছে তা উল্লেখ করা আছে পণ্যের গায়ে। প্রতিটি মোরা বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮৫০ টাকা ফুল ও ফলের ঝুড়ি ১০০ থেকে ২৫০ টাকা, ২০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে উলের গেঞ্জি টি-শার্ট, ২৫০০ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকায় মিলছে নকশি কাঁথা। বুটিক ও বাটিকের থ্রি পিস ৫০০ থেকে ২৫০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া বাঁশ ও প্লাস্টিকের সংমিশ্রণে তৈরি বড়ো চেয়ার পাওয়া যাচ্ছে ১২০০ থেকে ৩০০০ টাকায়, পানদানি, কলমদানি ও ফুড কভার ৩০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।