'ইসলামি বন্ড কাজে লাগিয়ে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব'

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম বলেছেন, মুসলিম প্রধান বাংলাদেশে সুদের বন্ডের চেয়ে ইসলামিক বন্ডের (সুকুক) চাহিদা অনেক বেশি। কারণ, শরিয়াহ্ আইন অনুযায়ী সুদ জুয়া ও ঝুঁকিপূর্ণ লেনদেন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বর্তমান বাজারে উচ্চ-মুনাফার সঞ্চয়ের মাধ্যম এমনিতেই সীমিত। সেই হিসেবে সুকুক (ইসলামি বন্ড) নতুন বিনিয়োগের পথ খুলে দিয়েছে। একই সঙ্গে সুদবিহীন ঝুঁকিহীন নিরাপদ বিনিয়োগের এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশের বড় বড় (মেগা) উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব।

বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) সিএসইর ঢাকার নিকুঞ্জ কার্যালয়ে বেক্সিমকো গ্রীন-সুকুক আল ইসতিসনার লেনদেন শুরু উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা এবং বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, বিশেষ অতিথি ছিলেন, ডিএসইর চেয়ারম্যান মো. ইউনুসুর রহমান।

সালমান এফ রহমান বলেন, আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেটের একটি অসঙ্গতি হলো ইক্যুইটি মার্কেট আছে কিন্তু বন্ড মার্কেট ছিল না। যেখানে বিশ্বের অনেক দেশে বন্ড মার্কেটকেই বেশী গুরুত্ব দেয়া হয় এবং বেশ বড়, সেখানে আমদের দেশে এখন এই বন্ড মাকের্ট শুরু হলো। বিএসইসি এর নতুন চেয়ারম্যান এবং কমিশন এর নেতৃত্বে পুজিঁবাজারে ইতিমধ্যে নতুন নতুন প্রোডাক্ট এসেছে এবং সামনে আরো আসবে। আজ সুকুক এর ট্রেড শুরু হলো ভবিষ্যৎ এ আরো নতুন নতুন বন্ড আসবে। বেসরকারি খাতের জন্য এটা সূখবর এবং ইতিমধ্যে সরকারি খাতের বন্ডও এসেছে। প্রধানমন্ত্রীর ২০৪১ সালের লক্ষ্য অর্জনে এই বন্ড মার্কেট অর্থায়নে যথেষ্ট সহায়ক হবে। সিএসইকে ধন্যবাদ যে তারা বেশ ভালো ভালো উদ্যোগ এর সাথে জড়িত আছে এবং সামনেও আরো থাকবে আশা করি। এছাড়া কমোডিটি এক্সচেঞ্জ নিয়ে সিএসই কাজ শুরু করেছে এবং সামনে আমরা এর সুফল দেখতে পাবো। বাংলাদেশ হলো র কটন এর জন্য বিশ্বে দ্বিতীয় এবং আমাদের আরো অনেক কমোডিটি বিশ্বের দরবারে ভালো করছে, আশা করছি এই কমোডিটি মার্কেটও অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে। আমাদের এসজিডি এর লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্যে এই বন্ড এবং কমোডিটি সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখবে। সিএসই-এর আগামী পথচলায় শুভ কামনা করছি।

সিএসইর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম বলেন, সিএসই দেশের পুঁজিবাজারের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অটোমেশন, ইন্টারনেট ট্রেডিং সিস্টেম (আইটিএস), মোবাইল অ্যাপস্-এ ট্রেডিং চালুকরণসহ সেন্ট্রাল ডেপোজিটরি বাংলাদেশ লিঃ (সিডিবিএল), ডেরিভেটিভস্, বুক বিল্ডিং প্রভৃতির ধারণা প্রথমেই উপস্থাপন করে। উদ্ভাবনী ঐতিহ্যের ধারা অটুট রাখতে সিএসই সদা তৎপর রয়েছে যা দেশের পুঁজিবাজার উন্নয়নে সহায়ক। বর্তমান সময়ে বিশ্বময় সবচেয়ে আলোচিত ইসলামিক প্রডাক্টগুলোর একটি হলো 'সুকুক'। প্রচলিত সুকুকের সূচনা হয় ১৯৭৮ সালে জর্ডানে 'সকুকুল মুকারাযা / মুদারাবা দিয়ে। পরবর্তী সময়ে ১৯৮৪ সালে তুরস্কে 'মুশারাকা সুকুক' প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি 'তার্কিশ রেভিনিউ শেয়ারিং সার্টিফিকেট নামে পরিচিতি ছিল। এটি ছিল সে দেশের প্রথম সরকারি সুদমুক্ত বন্ড। এরপর ১৯৯০-এ মালয়েশিয়ায় সর্বপ্রথম করপোরেট সুকুক ইস্যু করে । এরপর বিভিন্ন দেশে সুকুক ইস্যু হয়। সুকুক বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের চাহিদা মেটানোর জন্য একটি আর্থিক উপকরণ হিসেবে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। সুকুক বাজারের আধুনিক ইতিহাস জর্ডানে ১৯৭০ এর দশকের শেষের দিকে শুরু হয়েছিল। বিনিয়োগকারীদের জন্য সুকুক বেশ প্রতিশ্রুতিশীল ও নিরাপদ। বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি বন্ড এটি।

বিশ্বব্যাংকের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, বাংলাদেশ ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার লক্ষা অর্জনের জন্য, অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য আনুমানিক ৩০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন । Global Infrastructure Hub-র আরেকটি বিশদ সমীক্ষা অনুমান করে যে, ২০৪০ সাল পর্যন্ত ৬০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন। বাংলাদেশে এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য সামাজিক ও অবকাঠামোগত বিনিয়োগের পাশাপাশি environmental sustainability বাড়াতে বিনিয়োগ সহ যথেষ্ট আর্থিক সংস্থান প্রয়োজন। পুঁজিবাজার থেকে তহবিল সংগ্রহের জন্য অবকাঠামো অর্থায়নে সুকুক ব্যবহার করা যেতে পারে। অনেক দেশে বিভিন্ন সুকুক কাঠামোর মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি প্রকল্প সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে অর্থায়ন করা হয়েছে। সুকুক বাজারের উন্নয়নে সার্বভৌম এবং কর্পোরেট উভয় অংশকে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, যতটা সম্ভব এবং বাস্তবসম্মত, যাতে সরকারী ও বেসরকারী উভয় ক্ষেত্রেই তহবিল সংগ্রহের জন্য সর্বাধিক সম্ভাব্য বিকল্পগুলি রয়েছে।

তিনি বলেন, সুকুক পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সরকারের অংশগ্রহণ এবং সমর্থন একটি মূল বিষয় হবে। আমরা দৃঢ়ভাবে আশা করি যে, বেক্সিমকো গ্রীন সুকুক আল ইসতিসনা এই ইস্যুটি বাংলাদেশে মাল্টি সেক্টরাল সুকুক ইস্যু করার পথ খুলে দেবে। বেসরকারি খাতের প্রথম এই বেক্সিমকো গ্রিন-সুকুক আল ইসতিসনার লেনদেন আজ থেকে স্টক এক্সচেঞ্জে শুরু হচ্ছে। আমরা এই জন্য বেক্সিমকো গ্রুপকে অভিনন্দন জানাই।

উল্লেখ্য, বিগত ৩১ অক্টোবর ২০২১ তারিখে সিএসইতে লার্জ স্কেল পাইলটিংএর আওতায় বিএসইসির সার্বিক তত্তাবধানে বিভিন্ন মেয়াদে ৪টি সরকারী ট্রেজারী বড়ের লেনদেন শুরু হয়েছে। যা আমাদের পুজিঁবাজারের জন্য অসাধারণ মাইলফলক।