তারকাখচিত জীবনের কি নিদারুণ অপচয়

  • মো. শরীফ হাসান
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

১৫ ই জুন মুম্বাইয়ে অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানটি তার অকাল মৃত্যু, অস্থির জীবন এবং আত্মঘাতী যন্ত্রণার সাথে সাথে তারকা খ্যাতির অন্ধকার দিকটির দিকেও আবার ইঙ্গিত করছে। যা সিনেমার অলীক দুনিয়া এবং সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচারিত বহু-বিলিয়ন ডলারের ক্রীড়াঙ্গন উভয়ের ক্ষেত্রেই সত্য।

পাটনা-বংশোদ্ভূত রাজপুত যিনি ৩৪ বছর বয়সেই মারা গেলেন। তিনি সিনেমার অলীক জীবনকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। আবেগের ঝুঁকি নিয়ে রংধনুকে তাড়া করতে চেয়েছিলেন, ভঙ্গুর সোনার পাত্র পেতে চেয়েছিলেন। এবং তার আগের আরও অনেকের মতো খারাপ কয়েকটি মাসের মূল্য দিয়েছেন। কোভিড-১৯ যাকে আরও অভিশপ্ত করে তুলেছিল।

বিজ্ঞাপন

প্রতিটি পেশারই চ্যালেঞ্জ, মানসিক চাপ, উত্তেজনা এবং কঠিন সময় থাকে যা কখনও কখনও মনের অভ্যন্তরে চিৎকার করে প্রশ্ন তোলে: "এই সমস্ত কি এতই মূল্যবান?" বিভ্রান্তি দূর করে ও সাহসের সাথে আমাদের এর একটি উত্তর খোঁজা উচিত এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য, উত্তরণের জন্য, মুক্ত হওয়ার জন্য এবং জয়ী হওয়ার জন্য। তবে পেশাদার অভিনেতা এবং অ্যাথলেটরা যারা অন্যের মনোযোগ এবং করতালির ওপর নির্ভর করে জীবন নির্বাহ করে, সেটি তাদের জন্য সেই চ্যালেঞ্জ, মানসিক চাপ এবং কঠিন সময়কে আরো বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।

বিশ্বজুড়ে অজানা এই কারণে, তরুণ উদীয়মান তারকা সুশান্ত সিং রাজপুতের জীবনের একটি মর্মান্তিক ও আকস্মিক অবসান ঘটেছে। মুম্বাই পুলিশ যাকে আত্মহত্যা হতে পারে বলে তদন্ত করছে।দীর্ঘ এই জীবনের বহু গল্পের নানা অধ্যায়ের সমাপ্তি। তারকাদের জীবন অনেকের কাছেই আবেদনময় মনে হতে পারে। আসলেই কি তাই ? তারা কি ব্যক্তিগত টানাপোড়নের মধ্য দিয়ে যান না? আমরা আমাদের যাপিত জীবনে জীবনের বিভিন্ন প্রশ্নের বিচিত্র উত্তর খুঁজে বেড়াই, হয়তো পাই , হয়তো কখনো পাই না। ঠিক তেমনি তাদের জীবনেরও নানা প্রশ্নের উত্তরের মীমাংসা হয়তো জানা হয়ে উঠে না।

বিজ্ঞাপন

রুপালি পর্দা এবং ক্রীড়াজগতের ভালো দিকটি হল এটি এখানে প্রতিষ্ঠা পেতে গেলে আত্মোৎসর্গতা, শৃঙ্খলা, কঠোর পরিশ্রমের দাবি করে। এখানে প্রতিষ্ঠা পাওয়া খুব সহজ বিষয় নয়। ক্যারিয়ারের যে ধাপগুলো সুশান্ত সিং রাজপুত আরোহণ করেছিলেন সেই একই মই যা মহেন্দ্র সিং ধোনিকে সাফল্যের বিরল উচ্চতায় নিয়ে এসেছিল। এবং যার জীবন রাজপুত দক্ষতার সাথে চিত্রিত করেছেন ২০১৬ সালের 'এমএস' ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ চলচ্চিত্রে। ক্রিকেট এবং চলচ্চিত্রের তারকাখ্যাতি যা ভারতে প্রায়শই বিভিন্ন স্তরে মিশে যায় সুশান্ত সিং রাজপুত ‘এম.এস.ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’-তে তা একত্রে নিয়ে এসেছেন।

ক্রিকেট তারকাদের সিনেমার জগতে আনতে সবাই আগ্রহী। ভারতের সফল ক্রিকেট অধিনায়ক মনসুর আলী খান পাতৌদি বিয়ে করেছেন চলচ্চিত্র তারকা শর্মিলা ঠাকুরকে এবং তাদের ছেলে সাইফ আলি খান মুম্বাইয়ের একজন চলচ্চিত্র তারকা। ১৯৭৪ সালে, তরুণ সুনীল গাভাস্কার একটি মারাঠি সিনেমা ‘সাভেলি প্রেমাচি’, যার অর্থ ‘ভালোবাসার ছায়াছবিতে অভিনয় করেছিলেন।

চাকচিক্য এবং গ্ল্যামারের মোহ মারাত্মক ঝুঁকিকে লুকিয়ে রাখে। লোকেরা ক্রিকেট এবং চলচ্চিত্রের তারকাদের জীবন, ওয়ার্লিতে তাদের পেন্টহাউস, বান্দ্রার বাংলো, বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ এবং পয়সার ঝনঝনানি দেখে। তবে প্রায়শই তার জন্য যে মূল্য দিতে হয় তা দেখে না। মানসিক নিরাপত্তাহীনতা এবং জীবনের অনিশ্চয়তা যেখানে সাফল্য এবং ব্যর্থতা নির্ভর করে অন্য লোকের মর্জিতে, দলের নির্বাচক, পরিচালক এবং প্রযোজক, খামখেয়ালী শ্রোতার চাওয়ার ওপর।

অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে আঘাত জর্জরিত শারীরিক ফিটনেস এবং ক্ষণস্থায়ী ত্বকীয় সৌন্দর্য। তাই অ্যালকোহল এবং মাদকাসক্তি ক্রীড়া এবং চলচ্চিত্রের তারকাদের জীবনের নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। যা কাউকেই অবাক করে না। সোনার খাঁচা থেকে বাঁচার জন্য মরিয়া প্রচেষ্টা। এমনকি যারা কখনও সুশান্ত সিং রাজপুতের সাথে দেখা করেননি বা তার সিনেমা দেখেননি তারা তার অকাল মৃত্যুর বেদনা অনুভব করেছেন।

জীবনের সমস্যাগুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য মানসিক স্থিরতা এবং শক্তি প্রয়োজন। হতাশাজনক সময়ে আত্মঘাতী সিদ্ধান্তগুলো এড়িয়ে স্বচ্ছতা খুঁজে পেতে মনের অভ্যন্তরীণ শক্তি প্রয়োজন। নিয়ত পরিবর্তনশীল মানসিক নিরাপত্তাহীনতা এবং অনিশ্চয়তাপূর্ণ মহাবিশ্বে কেউই একা নয়, তারা তারকাই হোক বা সাধারণ মানুষ।

আমরা জীবনের চড়াই-উতরাই, ব্যর্থতা-সাফল্য, এবং সুখ-দুঃখের এক অনিশ্চিত যাত্রায় রয়েছি। এই যাত্রায় আমরা কখনই একা নই। এই পৃথিবীতে কেউই আমাদের অপরিচিত নেই, কেবল আমাদের সাথে এখনো দেখা হয়নি এমন বন্ধুরা রয়েছে।

মো. শরীফ হাসান: শিক্ষক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।