জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের অভিঘাত: যে করণীয় জানালেন ড. মুনতাসীর মামুন

  • আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতে ইসলামী ও এর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নির্বাহী আদেশে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এই নিষিদ্ধের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অভিঘাত মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ও গবেষক অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বার্তা২৪.কম-কে দেওয়া একান্ত প্রতিক্রিয়ায় এই আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের কাছে প্রশ্ন ছিল জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধে দেশে ও বিদেশে কি প্রভাব পড়তে পারে। জবাবে তিনি বলেন, ‘এটার (জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধে) একটা অভিঘাত হবে। অভ্যন্তরে এবং বাইরে। অনেকে বলবেন গণতন্ত্র সংকুচিত হচ্ছে, জামায়াত কেন নিষিদ্ধ করতে হবে? আইনি প্রতিক্রিয়া নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলবে। বহির্বিশ্বে একই রকম প্রশ্ন উঠানো হবে।’

বিজ্ঞাপন

কোন দল বা সংগঠন নিষিদ্ধ করলে, সেই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নেও কিছু করণীয় থাকে। সরকারের কি করণীয় এই মুহূর্তে-এমন প্রশ্নে এই ইতিহাসবিদ বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে বর্হিবিশ্বের আমাদের যাঁরা রাষ্ট্রদূত আছেন তাদেরকে সক্রিয় করতে হবে। লবিষ্ট নিয়োগ করতে হলে তাও করতে হবে। বিদেশের মিশনে আমাদের অনেক প্রেস কাউন্সিলর আছেন, তারা কি করেন আমি ঠিক জানি না! তাদের আরও সক্রিয় করতে হবে।’

‘অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে-নাগরিক সমাজ, বিভিন্ন গ্রুপ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসমূহ, আওয়ামীলীগের যাঁরা প্রকৃত কর্মী ছিলেন-সরে গেছেন, এমন সবাইকে একত্রিত করে ঐক্যবদ্ধ ভাবে অভ্যন্তরীণ অভিঘাতটা প্রতিরোধ করতে হবে’-বলেন ড. মামুন।

বিজ্ঞাপন

গবেষণা উপাত্ত তুলে ধরে বিভিন্ন সময়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষকরা দাবি তুলেছিলেন জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসী কর্মকা-ের পেছনে থাকা তাদের শক্তিশালী অর্থনৈতিক কাঠামো ভাঙতে হবে। দলটিকে নিষিদ্ধের পর সেই দাবিতে সোচ্চার মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘মূল বিষয়টা হচ্ছে-আইন করা আর কার্যকর করা; দুইটার মধ্যে কিন্তু তফাৎ আছে। কার্যকর করার ক্ষেত্রে প্রথমেই হচ্ছে, জামায়াতের যে বিশাল অর্থনীতি, সেটা যদি থাকে তাহলে সরকারের পক্ষে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না। কেননা তাদের ক্যাডার বাহিনী গড়ে তোলা-অস্ত্রশস্ত্র সব কিছু তো এইটার সাহায্যেই হয়।’

‘দ্বিতীয়ত হচ্ছে, নিষিদ্ধ করুন ঠিক আছে, প্রকৃত বিষয়টি হচ্ছে আদর্শগত। অর্থাৎ বাংলাদেশে মওদুদী আদর্শ যেন না থাকে। সেই আদর্শিক লড়াইয়ে সরকারকে বিনিয়োগ করতে হবে সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা ক্ষেত্রে।’

এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘ওরা যে অজস্র মাদরাসা-কিন্ডার গার্টেনে করেছে-সেগুলোর নিয়ন্ত্রণের জন্যও আইন করতে হবে। মাদরাসা করবে, আমরা কিছু বলতে পারব না? পৃথিবীর সব দেশে মাদরাসা রেজিস্ট্রেশন হয়, এমনকি পাকিস্তানেও হয়। এখানে পারবে না কেন-এটা আমাদের জানা নেই।’

‘আসলে মূল কথা হচ্ছে, বঙ্গবন্ধু যে মূলনীতি দিয়েছিলেন সেটাই বিষয়। রাজনীতিতে ধর্ম নিয়ে যারা ব্যবসা করবে, তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা। জামায়াত এখন অন্যান্য দলে মিশে যাবে, নতুন দল করবে। জামায়াত শিবিরের চিহ্নিতরা যাতে কোথাও সে সুযোগ না পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে’-উল্লেখ করেন তিনি।

সরকার প্রধানকে ঐক্যবদ্ধভাবে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের অভিঘাত মোকাবেলার আহ্বান জানিয়ে এই ইতিহাসবিদ আরও বলেন, ‘সরকার কতটা সক্রিয় হবে সেটার উপর নির্ভর করবে জামায়াতের উপর নিষেধাজ্ঞা কতটা কার্যকর হবে। তবে আমরা মনে করি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে যখন সবাই বলেছিল, ‘ইমপসিবল’, শেখ হাসিনাই সেটা করেছেন। বলা হয়েছে জামায়াত নিষিদ্ধ করা যাবে না, সেটাও উনি (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) করেছেন। সুতরাং সমমনা সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে তিনিই পারবেন এই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে। কারণ তাঁর উপর মানুষের আস্থা এখনও আছে। অন্য কারোর পক্ষে এটা সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি না।’