কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমাধান: হাতে পাঁজি মঙ্গলবার

  • অধ্যাপক ডা. শেখ মো. নাজমুল হাসান, লেখক ও গবেষক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: অধ্যাপক ডা. শেখ মো. নাজমুল হাসান

ছবি: অধ্যাপক ডা. শেখ মো. নাজমুল হাসান

গোঁয়ার্তুমি না করে, কোটা সংস্কার আন্দোলন কতদূর যেতে পারে সুচিন্তিতভাবে সেটা আওয়ামী লীগ ও সরকারের আগেই বোঝা উচিত ছিল। সরকারের প্রতি একশ্রেণির মানুষের ক্ষোভ আছে, ফলে এ আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, আন্দোলন দমনের বিষয়ে 'অতিআস্থা' নামক নির্বুদ্ধিতা ছাড়া সেটা না বোঝার কোনো কারণ ছিল না। এ বিষয়ে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল, আমি নিজেও ছিলাম তারমধ্যে একজন। কোটা আন্দোলনকারীদের প্রতি সাধারণ মানুষের একটা মানসিক সমর্থন ছিল। এই নির্দোষ সমর্থনটা যতটা না ছিল কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতি, তারচেয়ে বেশি সরকারের প্রতি ক্ষোভ ও অনাস্থার জায়গা থেকে উত্থিত।

আওয়ামীবিরোধী বিভিন্ন সংগঠন আন্দোলনকারীদের ব্যানারকে পূঁজি করে সরকারবিরোধী নাশকতা করবে সেটা বুঝতে খুব একটা বুদ্ধিমান হবার দরকার ছিল না। গণজাগরণ মঞ্চের বিরোধিতা, হেফাজতের সমাবেশ, নিরাপদ সড়কের জন্য ছাত্র আন্দোলনের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা তাই বলে। আগের ওসব সরকারবিরোধী ইভেন্টগুলিতে এটাও প্রমাণিত হয়েছে যে, সরকারবিরোধী সংগঠনগুলির বপু যতো বিশাল‌ই হোক-না-কেন তাদের সাংগঠনিক ক্ষমতা প্রায় শূন্যের কোটায়। এদের অবস্থা ব্যঞ্জনবর্ণের চন্দ্রবিন্দুর মতো, অন্যের ঘাড়ের উপরে বসে ছাড়া স্বাধীনভাবে কিছু করার ক্ষমতা এরা রাখে না। ফলে সাংগঠনিক ক্ষমতাহীন এসব সংগঠনসমূহ ব্যঞ্জনবর্ণের চন্দ্রবিন্দুর মতো শিক্ষার্থীদের ঘাড়ে চেপে স্বার্থসিদ্ধির সুযোগ নিয়েছে। এরা যা করেছে তা ঠিক করেনি, খুবই অন্যায় করেছে।
সরকারবিরোধী কাজ করতে গিয়ে এরা রাষ্ট্রবিরোধী অপতৎপরতা চালিয়েছে। রাষ্ট্রের অনেক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। তবে আওয়ামী লীগ‌ও এ ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারে না; কারণ, এই আন্দোলনকে এই পর্যায় পর্যন্ত গড়াবার ব্যর্থতার দায় তাদের আছে। এটা কোনোভাবেই এই পর্যায় পর্যন্ত আসার কথা নয়। 'হাতে পাঁজি মঙ্গলবার' বাগধারার অর্থ, সমাধানের সহজ পথ থাকতে জটিল পথের অবতারণা করা। আওয়ামী লীগ সেই কাজটাই করেছে। এই সমস্যার সমাধান সহজ ছিল যা অঙ্কুরেই সমাধান করা যেতো।

বিজ্ঞাপন

সরকার হয়তো হেফাজতের আন্দোলন দমনের অভিজ্ঞতা থেকে এই আন্দোলন দমনে এক‌ই কৌশল প্রয়োগ করে সফল হবার কথা ভেবেছিল। কিন্তু হেফাজতের আন্দোলন আর এই আন্দোলন যে এক নয়, সেই সহজ হিসাবটা বোঝেনি। হেফাজতের আন্দোলনের সময় গণজাগরণ মঞ্চের ব্যানারে স্বাধীনতার পক্ষের সকল শক্তি যুগপৎভাবে মাঠে ছিল। তারা জানপ্রাণ দিয়ে সকল অপপ্রচার, অপকৌশল, স্যাবোটাজ ইত্যাদি প্রতিহত করেছিল। সে সময়ে সাইবার যুদ্ধে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি কোনোভাবেই যুত করে উঠতে পারেনি।

গণজাগরণ মঞ্চের সমর্থনে সারাপৃথিবীর বাঙালি সমাজ তাদের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিল। ফলে অনলাইন, অফলাইন ও রাজপথে জনমত ছিল সরকারের পক্ষে। স্বার্থ উদ্ধার হয়ে গেলে আস্তাকুড়ে ছুঁড়ে ফেলা আওয়ামী লীগের বৈশিষ্ট্য। গণজাগরণ মঞ্চকেও নানা ছুতোয়, নানা বাহানায় ছুঁড়ে ফেলা হয়েছিল। ফলে আজ সেই সময়ের অধিকাংশ সাইবার যোদ্ধা‌ই এই সময়ে আওয়ামী লীগের পক্ষে লেখেনি, তারা নীরব ছিল। এবার সাইবার জগত চলে গিয়েছে আওয়ামীবিরোধীদের দখলে। সে সময়ে যে ইন্টারনেট ও সাইবার জগত ছিল আওয়ামী লীগের আশীর্বাদ, নিজেদের অনলাইন এক্টিভিস্ট ও লেখকদের আপন না ভাবার ব্যর্থতায় এবার তা হয়েছে আওয়ামী লীগের জন্য অভিশাপ। এ কারণে উপায়ন্তর না পেয়ে সরকারকে ইন্টারনেট বন্ধ করে পিঠ রক্ষা করতে হয়েছে। এভাবে ইন্টারনেট বন্ধ রেখে সরকার দেশের অনেক ক্ষতি করে ফেলেছে। এই কয়েকদিনে দেশের যে পরিমাণ আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস যুদ্ধের সময়ের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির চেয়েও বেশি বলে প্রতীয়মান। আওয়ামী লীগ ও স্বাধীনতার পক্ষের অনলাইন এক্টিভিস্ট ও লেখকরা দেশের স্থিতিশীলতা ও সম্পদ রক্ষায় যে কতোটা শক্তিশালী ভূমিকা রাখে সেটা এবার প্রকটভাবে প্রকাশিত হয়েছে। আমার মতে, আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো সময়োপযোগী করা উচিত। বর্তমান সময়ে 'অনলাইন এক্টিভিস্ট ও লেখক লীগ' জরুরি ভিত্তিতে গঠন করা উচিত। রাজপথের আন্দোলনের চেয়ে অনলাইনের আন্দোলন এখন বেশি জরুরি। তাছাড়া অনলাইনের এক্টিভিস্টরা যে রাজপথেও অগ্রগামী থাকে, গণজাগরণ মঞ্চ তার জ্বলন্ত উদাহরণ।

বিজ্ঞাপন

গণজাগরণ মঞ্চ চলার সময়ে রাস্তা বন্ধ করার জন্য যে রোড-ব্লকগুলো দেওয়া হয়েছিল সেখানে লেখা ছিল 'রাস্তা বন্ধ, জাতি সংস্কারের কাজ চলছে'। গণজাগরণ মঞ্চ জাতি গঠনের জন্য আওয়ামী লীগকে ক্লিয়ার মেসেজ সম্বলিত 'ব্ল্যাংক চেক' দিয়েছিল। মেসেজটা ছিল- এ দেশ মুক্তিযুদ্ধের, কখনো মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের হবে না। আওয়ামী লীগ সেই ব্ল্যাংক চেককে কাজে লাগাতে পারেনি। আওয়ামী লীগের পক্ষে যুদ্ধ করে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে যুদ্ধ করে গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠকদের এই আওয়ামী লীগের সময়েই জীবন বাঁচাতে দেশের বাইরে গিয়ে এসাইলাম নিয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। যারা দেশে আছেন তারাও সবাই অবমূল্যায়িত। অথচ রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় সাপোর্ট দেবার জন্য এনাম মেডিকেলের মালিককে কেবিনেটে স্থান দেওয়া হয়েছিল।

রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরাও সাভারে গিয়ে দুর্ঘটনা কবলিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল। আমি নিজেই একটানা তিনদিন সাভারে ছিলাম। যে রক্তক্ষয়ী পথে গিয়ে কোটা সমস্যার সমাধান হলো এমন সাংঘর্ষিক ও রক্তক্ষয়ী পথ কাম্য ছিল না। কাম্য ছিল সহজ সমাধান এবং সেটা সম্ভবও ছিল। এখন যেভাবে সমাধান হলো তাতে সমাধানের সাথে আরও কিছু ক্ষোভ, হতাশা, আশঙ্কা, অনাস্থা, অবিশ্বাস ইত্যাদি যোগ হয়ে সমাধান হলো। এগুলো সহজে নির্মূল হবে না, জনমনে থেকে যাবে। পরবর্তীতে ছোটখাটো কোনো সমস্যা দেখা দিলেও সেখানে এগুলোর মাত্রাতিরিক্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটবে। সমস্যা সমাধান করে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলার মতো অবস্থানে থেকে আওয়ামী লীগ সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। মুখে যা-ই বলুক-না-কেন আওয়ামী লীগের কপালেও চিন্তার ভাঁজ দেখা যাচ্ছে।

যে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে আওয়ামী লীগের অন্ন সংস্থান হয়, অতিআস্থায় একগুঁয়েমি করে সেটাকে এমন রক্তক্ষয়ী পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে সমাধান করলো যে, নতুন প্রজন্মের কাছে সেই মুক্তিযুদ্ধ‌ই কিছুটা হলেও সম্ভ্রম হারাল। ফলে শুধু মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের অন্ন জুটবে বলে মনে হয় না। এ কারণে আওয়ামী লীগের আমলানির্ভরতা আরও বাড়বে। গণমানুষের মধ্য থেকে জন্ম নেওয়া একটি পুরানো ও অভিজ্ঞ রাজনৈতিক দলের জন্য এটা একটা বড়ো নৈতিক পরাজয়। যদিও ইতোপূর্বেই তাদের এই নৈতিক পরাজয় হয়ে গেছে, এখন সেটার পুরুত্ব অবিচ্ছেদ্য স্তরে চলে গেলো।

আওয়ামী লীগ একটা অভিজ্ঞ রাজনৈতিক দল, উপরন্তু তারা সরকারে আছে। যে নাশকতাগুলো করা হয়েছে সেগুলোর তথ্য কেন আগে থেকেই সরকার পেলো না, এটি খানিকটা বিস্ময়ের। সুযোগসন্ধানী ব্যঞ্জনবর্ণের চন্দ্রবিন্দুদেরকে বলি- এভাবে আন্দোলন করে সফল হ‌ওয়া যায় না। এ মানুষগুলোর মৃত্যুর দায় আপনাদেরও। এটি প্রতীয়মান যে, বিতর্কিত ইশ্যুগুলিকে সরাসরি নিজেরা না করে আদালতের মাধ্যমে করানো আওয়ামী লীগের একটি কৌশল। যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আওয়ামী লীগের আন্দোলনের ফসল ছিল, সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে আওয়ামী লীগ‌ই আদালতের মাধ্যমে কবর দিয়েছে। কোটা ইশ্যুতেও আওয়ামী লীগ একই কৌশল নিয়েছিল। কোটা নির্ধারণের দায়িত্ব নির্বাহী বিভাগের। নির্বাহী বিভাগ থেকে আইন বিভাগ হয়ে এটা বিচার বিভাগে যাবার কথা। আওয়ামী লীগ আগেই সেটা বিচার বিভাগের হাতে তুলে দেওয়ার কৌশল অবলম্বন করেছে। ফলে কোটা আন্দোলন শুরুর দিকে আওয়ামী লীগের ভাবটা এমন যেন- আমি কিছু জানি না, ভাজা মাছটা কেমনে উল্টে খেতে হয় তাও জানি না, আদালত সব জানে। যদিও সরকার চাইলে ৩৬৫ দিনের যে-কোনো দিন, যে-কোনো সময় আদালত বসিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এক্ষেত্রেও তাই করা উচিত ছিল।

মুক্তিযুদ্ধপ্রীতি প্রমাণের বহু অপশন আছে। আওয়ামী লীগ অনেককিছুই করেছে। কিন্তু এ বিষয়ে সাধারণ মানুষের অনুভূতি ছুঁয়ে মনে দাগ কাটতে পারে এমনভাবে কাজগুলো করতে পারেনি। নিজেদের জ্ঞাতিগোষ্ঠীর নামে এতো বেশি কিছু করে ফেলেছে যে, মানুষ তাতে ত্যক্তবিরক্ত হয়েছে, ফলে অন্য সবকিছু এই বিরক্তির নিচে চাপা পড়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, মানুষকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা- ইত্যাদি ইত্যাদি অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়গুলো সব অর্জনকে খেয়ে ফেলেছে। এই 'না-পারার' ব্যর্থতা ঢাকতে দলটি মুক্তিযোদ্ধা কোটা অতিরিক্ত রেখে মুক্তিযুদ্ধপ্রীতি প্রমাণের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল। শেষপর্যন্ত তা ধরে রাখতে পারল না। কোটা সংস্কার আন্দোলনের এই সমাধানটা আওয়ামী লীগের জন্য নাকে খত দিয়ে নিজেদের ফেলানো থুথু নিজেদের জিহ্বা দিয়ে চেটে খাবার মতো হয়ে গেলো।

বাকশাল করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের এক সর্বনাশ হয়েছিল, কোটা নিয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক বন্ধ্যত্বের কারণে এবার আরেক ক্ষতি হলো। সেইসাথে এ দেশের সেরা অর্জন, সেরা ত্যাগ একাত্তরের অর্জন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি মানুষের ভক্তিশ্রদ্ধা প্রশ্নসাপেক্ষ হলো। আওয়ামী লীগের এই জেদ, নতুন প্রজন্মের কাছে রাজাকার আর মুক্তিযোদ্ধার নামকে কিছুটা হলেও এক‌ই কাতারে নামিয়ে আনতে ভূমিকা রাখল। মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধাকে এমন অশ্রদ্ধার জায়গায় আনার দায় আওয়ামী লীগের আছে। কোটা সংস্কারের মতো একটি 'তিল' আওয়ামী লীগের জিদ, গোঁয়ার্তুমি ও বুদ্ধিবৃত্তিক ব্যর্থতার কারণে 'তাল' হয়ে তালগোল পাকিয়েছে। এরপর যে সমাধান হয়েছে তার জন্য আওয়ামী লীগ বুক চিতিয়ে যেভাবে কৃতিত্ব দাবি করছে তা বুদ্ধিবৃত্তিক বন্ধ্যত্ব, বিবেকহীন ঔদ্ধত্য ও নির্লজ্জতা। অনেক মায়ের বুক খালি হয়েছে। অনেকগুলো তরুণ তাজা প্রাণ কেড়ে নেওয়ার দায় কে নেবে? দায় নিলেই-বা কি! যে গেছে সে গেছে, যার গেছে সে বুঝতেছে কষ্ট কাকে বলে!

এই দেশে, যে ছাত্র আন্দোলনের ফসল ভাষা আন্দোলন এবং তার‌ই ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ, সেই ছাত্রের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে বাংলার রাজপথ। যে তরুণ সমাজ স্বাধীনতার জন্য ব্রিটিশ শাসিত ভূখণ্ডে রক্ত দিয়েছে, ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছে, পূর্ব পাকিস্তানকে বাংলাদেশ করার জন্য রক্ত দিয়েছে, সেই তরুণ সমাজকে আজ স্বাধীন বাংলাদেশে একটা চাকরির জন্য রক্ত দিতে হচ্ছে! ধিক্ দেশের ৫৩ বছরের রাজনৈতিক নেতৃত্ব।

অতিআত্মবিশ্বাসে আহাম্মকি করে নিজেদের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগকে আওয়ামী লীগের কোন নেতারা মাঠে নামিয়েছিল জানি না। তাদের এই অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের ফলে মানুষ বিরক্ত হলো, নিজেদের সহযোগী সংগঠনটির নেতাকর্মীদের‌ও প্রাণ গেলো, খালি হলো অনেক মায়ের বুক। কেউ কারো না, যে যায় সে যায়‌ই। পরে যদিও ছাত্রলীগকে ঘরে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে কিন্তু তার আগেই এই ঐতিহ্যবাহী সংগঠনটির ভয়াবহরকম ক্ষতি হয়ে গেছে। ফলে ছাত্রলীগ থেকে দল ত্যাগের হিড়িক‌ও লক্ষ করা গেছে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতির রুম ভাঙচুর হয়েছে। এতে ছাত্রলীগের কোমর অনেকটাই ভেঙে গেলো। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবার পথ কঠিন হয়ে গেলো। ছাত্র সংগঠন হয়েও এখন ছাত্রদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে হবে। ঐতিহ্যবাহী ছাত্রলীগের ঐতিহ্য প্রশ্নের সম্মুখীন হলো।

তৃণমূল পর্যায়ে সম্পৃক্ততাহীন লোকজনকে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক নৈকট্য এবং নেত্রী-জিকির কোটায় নেতা বানানোর খেসারত তো দিতে হবে। এই বুদ্ধিবৃত্তিক বন্ধ্যত্বগুলো তার‌ই ফল। বর্তমান নেতৃত্ব আওয়ামী লীগের অনেক বড়ো ক্ষতি করে ফেলল। যে রক্তাক্ত ইতিহাস তৈরি করল তা দলটির জন্য কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে। বর্তমান নেতৃত্ব আগামীর নেতৃত্বের জন্য চ্যালেঞ্জ রেখে গেলো। জিরো টলারেন্স ঘোষণা করে দুর্নীতিবাজদের দমনের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার একজন দুর্নীতিবাজের প্রাণ‌ও নিতে পারেনি। কোটা সংস্কারের দাবিতে রাজপথে থাকা তরুণদের তাজা প্রাণ কেড়ে নিতে পেরেছে। কোটা সংস্কারের দাবি করা তরুণটি আওয়ামী লীগের শত্রু, কিন্তু দেশটাকে লুটেপুটে খাওয়া দুর্নীতিবাজরা আওয়ামী লীগের শত্রু নয়। তারা আঁচলের তলে বেড়ে ওঠে।

সরকারি চাকরির বাইরে কর্মনিশ্চয়তা সৃষ্টি করুন। প্রতিবছর ২২ লাখ তরুণ কর্মবাজারে প্রবেশ করছে। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে চাকরি পাচ্ছে গড়ে ৩ হাজারের‌ও কম, যা মাত্র ০.১৪%, বাকি থেকে যাচ্ছে ৯৯.৮৬%। যে তরুণ আজ গবেষণা করবে, সমাজ গড়বে সেই তরুণ আজ চাকরির জন্য জীবন দিচ্ছে। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরে দেশের এ অবস্থার জন্য এই তরুণ সমাজ দায়ী নয়। এ দায় আপনাদের। আপনারা স্বাধীনতার বেনিফিসিয়ারি, ওই তরুণ সমাজ নয়। স্বাধীন ভূখণ্ড ছাড়া সে আর কিছু পায়নি। একটা জীবন পেয়েছিল সেটাও বিলিয়ে দিয়ে গেলো!