ওমিক্রনে অমানিশা

  • সৈয়দ ইফতেখার
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

ইসরাইল এক আজব অঞ্চল। দেশ বলবো না একে। কারণ তারা আগ্রাসী ও দখলদার। যে অন্য হিসেব। তবে যে জন্যে এই এলাকাটির নাম মুখে আনলাম সেটি হলো, তারা নাকি চতুর্থ ডোজ দেওয়া শুরু করছে। করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন মোকাবিলায় সেখানকার কর্তৃপক্ষ টিকার চার নম্বর ডোজটি দেওয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। সুতরাং তারাই বিশ্বে প্রথম দেশ যারা কোভিডের টিকার তৃতীয় ডোজের পর আরও এক ডোজ দিচ্ছে। ওমিক্রন ঠেকাতে এ প্রস্তুতি তাদের। এটা একটু বেশি বেশি মনে হচ্ছে আমার কাছে। তৃতীয় ডোজ দেওয়ার পর চতুর্থ নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু ছিল বলে মনে করি না। কারণ বিশ্বের অধিকাংশ দেশে যেখানে এক ডোজই দেওয়া সম্ভব হয়নি সেখানে দখলদারদের এমন কাজ রীতিমতো নিন্দার বটে। তাদের উচিত ছিল অন্য দেশগুলোকে সহযোগিতা করা। ভ্যাকসিনের সুষ্ঠু বণ্টনে অংশীদার হওয়া। তারা সেটি না করে স্বার্থপরের মতো কাজ করছে।

মহাসংক্রামক ওমিক্রন ঠেকাতে অনেক দেশ দিচ্ছে তৃতীয় ডোজ বা বুস্টার। এটাই হওয়ার কথা। আমাদের দেশে সেটা শুরু হয়েছে। তবে যথারীতি মানুষ সেভাবে জানে না। কারা কারা পাবে তাও এখনও স্পষ্ট নয়। কীভাবে পাওয়া যাবে তাও নিয়ে ধোঁয়াশা। মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তায় (এসএমএস) চলে যাবে বলা হলেও অনেক বয়স্ক ব্যক্তি তা পাননি। দেশে রীতির নড়চড় ঘটে প্রতিনিয়তই, এ জন্য ভরসা রাখা কঠিন। আরও বেশি প্রচারণার দরকার ছিল। তাছাড়া আমাদের উচিত ছিল ডিসেম্বর আর জানুয়ারির মধ্যে বুস্টার ডোজগুলো সম্পন্ন করা। পাশাপাশি যারা এক ডোজও পাননি তাদের দ্রুত টিকার আওতায় আনা। কিন্তু ধীরগতির মনোভাবের কারণে এটি সম্ভব হচ্ছে না তা আজ স্পষ্ট বটে।

বিজ্ঞাপন

করোনাকালের এতোগুলো মাস গেলো, তবুও টিকার সংকট আমাদের গেলো না। সরকার কিন্তু এ কথা স্বীকার করছে না। আমি জানি না কেন এমন আচরণ তাদের। বিশ্ববাজার থেকে কিনতে সরকারকে প্রতিযোগিতা দিতে হয়, পাশাপাশি ধার-দেনার টিকা পেয়ে বড়াই! এসব করে আর কত! বছর ঘুরে গেলো বানর বানর করতে। বঙ্গভ্যাক্স যেন বানর থেকে বের হতে পারলো না। গেলো মাসে সেই অবস্থা থেকে বের হয়েছে বটে। কিন্তু সরকার কি সহযোগিতার মাত্রা বাড়িয়েছে তাদের? এই প্রশ্ন আরও জোরালোভাবে করা উচিত। কেবল গ্লোব বায়োটেকের তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা বঙ্গভ্যাক্স মানুষের শরীরে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের অনুমতি পর্যন্তই কাজ সীমাবদ্ধ। একটা টিকাকে কি তুলে আনার ন্যূনতম কোনো প্রয়াস আছে সরকারের! মোটেই তা দেখা যাচ্ছে না, ঝুঁকি নিয়ে সে কথা বলতেই যায় আজ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেখানে সরকারের সরাসরি তৎপরতায় কয়েক মাসের মধ্যে টিকা বানায় এবং তা প্রয়োগ ঘটনা, রফতানিও করে, সেখানে আমরা কীভাবে পেছন থেকে টানতে পারি একটা ভালো উদ্যোগকে সেই চেষ্টাই চলমান! এসব হতাশার দিনরাত্রির শেষ নেই এ দেশে। আমরা আদতে জাতি হিসেবেই কারো ভালো দেখতে পারি না। ভালোর সঙ্গে থেকে সেটিকে আরও দ্রুতগতি দিতে পারি না। যদি পারতাম তাহলে অন্তত বুস্টার ডোজ হিসেবে দেশীয় টিকাই গ্রহণ করতে পারতাম।

যাইহোক, লেখার মূল বিষয়ে ফিরি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ কাঁপছে ওমিক্রনের অমানিশার কথা ভেবে। আমরা হারাচ্ছি না তো সেই কালো দিনে আবার! পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে এটা সরকারও বোঝে, কিন্তু মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ তেমন একটা নেই। পরিস্থিতি খারাপ হলে লকডাউন আগেভাগেই কার্যকর করা উচিত। যেন সব শেষ হওয়ার আগেই শুরু করা যায়। গেলোবারের মতো পরিস্থিতি যেন ভয়াবহ না হয়। মানুষ যেন তার জীবনের মূল্য পায়। শেষ কথা একটাই, আমাদের বাবা-মা-ভাই-বোন-আত্মীয়-স্বজনদের যেন আর কাতরাতে না হয়। শায়িত হতে না হয়।

বিজ্ঞাপন

সৈয়দ ইফতেখার: লেখক, সাংবাদিক।