ভারতে বিজেপি বিরোধী প্রধান বিকল্প এখন মমতা

  • ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ভারতে বিজেপি বিরোধী প্রধান বিকল্প এখন মমতা।

ভারতে বিজেপি বিরোধী প্রধান বিকল্প এখন মমতা।

নিজে জিতেও কিছুক্ষণ পরেই আবার পরাজিত ঘোষিত হয়েছেন নন্দীগ্রামে। সন্দেহ নেই, পুনঃগণনা, এমনকি আইন-আদালতেও যাবে বিষয়টি। অবশ্য দলের ভূমিধ্বস বিজয়ের পর নিজের ব্যক্তিগত জয়-পরাজয়ের ব্যাপারে চিন্তিত হওয়ার অবকাশ নেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তার সামনে এখন শুধু বাংলা নয়, সারা ভারতের রাজনীতির ভালোমন্দের চিন্তা। কারণ, একা বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম ও শক্তিশালী রাজনৈতিক দলের তকমাধারী বিজেপিকে রুখে ভারতের প্রধান ও বিকল্প বিরোধী মুখে রূপান্তরিত হয়েছেন মমতা। ‘বাংলার মেয়ে’ থেকে তার উত্তরণ হয়েছে সর্বভারতীয় রাজনৈতিক সম্ভাবনার জায়গায়।

আস্ত এক মাসের নির্বাচনী উৎসব শেষে ২০০ প্লাস আসনে বিজয়ী হয়ে তৃণমূল কংগ্রেস মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তৃতীয় বারের মতো পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় অধিষ্ঠানের পথে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) চূড়ান্ত শক্তি প্রয়োগ করেও ক্ষমতা দখলে এবং মমতাকে রুখতে ব্যর্থ হয়েছে। মমতার বিজয় শুধু বাংলায় হয়, সর্বভারতীয় পর্যায়ে আলোড়ন তুলেছে। কংগ্রেস বা রাহুল কিংবা প্রিয়াঙ্কা গান্ধী নয়, একমাত্র মমতাই পারেন মোদি ও বিজেপিকে দমিয়ে বিজয় সুনিশ্চিত করতে, এমন বিশ্বাস সর্বভারতীয় স্তরে সুদৃঢ় হয়েছে মমতার বিজয়ের ফলে।

বিজ্ঞাপন

ফলাফল ঘোষণার পরপরই ভারতের নানা প্রান্তের রাজনৈতিক নেতার ভাষায় মমতা-স্তুতির বহর ছিল লক্ষণীয়। বিজয়ের ফলে মমতার গুরুত্ব যে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে, তা-ও স্পষ্ট হয়েছে।

‘কংগ্রেস নয়, এই ভোটে জিতে গোটা ভারতের প্রধান বিরোধী মুখ হয়ে উঠলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়’ বললেন ভোটকৌশলী প্রশান্ত কিশোর, যিনি পিকে নামে পরিচিত এবং তৃণমূলের জয়ের নেপথ্যের কুশীলব।

‘সবাই মিলে লেগেছিল। তবু পারেনি। ‘মোদি+ অমিত শাহ+ বিজেপি+ সিবিআই+ ইডি+ নির্বাচন কমিশন+ গদি মিডিয়া+ বিশ্বাসঘাতক এই সবকিছু দিদি+ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়+ তৃণমূল কর্মী এবং বাংলার কাছে হেরে গেল’, টুইট করে বললেন ভারতের জাঁদরেল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনের।

‘বাংলার সচেতন নাগরিকরা বিজেপি-র ঘৃণার রাজনীতিকে হারিয়েছেন। মানুষের সেবায় ব্রতী পরিশ্রমী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের নেতাদের শুভেচ্ছা’ টুইটারে শুভেচ্ছা বার্তা দিলেন উত্তর প্রদেশের শীর্ষ নেতা অখিলেশ যাদবের।

‘সাম্প্রদায়িকতা এবং অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই অসাধারণ জয়ের জন্য তাঁকে অভিনন্দন। বাংলার ভোটাররা বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের মনের যোগাযোগ কার সঙ্গে। বাংলায় হেরে বিজেপি বুঝেছে কাদের সঙ্গে লড়তে এসেছিল’, টুইট করছেন কংগ্রেস নেতা ও সাংসদ শশী তারুর।

‘মমতাজীকে এই ঐতিহাসিক জয়ের জন্য আন্তরিক শুভেচ্ছা। সবরকম প্রতিবন্ধকতাকে পার করে এই জয়। আমি পশ্চিমবঙ্গের জনগণকেও অভিনন্দন জানাতে চাই। যাঁরা বিজেপির অপপ্রচারের ফাঁদে না পড়ে দিদির ওপর আস্থা রেখেছেন’, টুইট করে জানালেন বিহারের বর্ষীয়ান নেতা লালু প্রসাদ যাদব।

‘মমতা দিদিকে আন্তরিক অভিনন্দন।পশ্চিমবঙ্গের এই অসাধারণ জয়ের জন্য শুভেচ্ছা তৃণমূলের সব সদস্যকে। পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন কমিশন এবং বিজেপি আপনাদের জন্য সবরকম প্রতিকূলতা তৈরি করেছিল। আপনারা যে সেই সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে বিজয়ী হয়েছেন, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ’, টুইটে লিখলেন কাশ্মীরের নেতা ওমর আবদুল্লাহ।

‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই জয়ের জন্য অভিনন্দন। কী অসাধারণ লড়াই! পশ্চিমবঙ্গের মানুষকেও আমার শুভেচ্ছা’ টুইটে লিখলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল।

‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই অসাধারণ জয়ের জন্য অভিনন্দন। আশা করি আমরা একসঙ্গে মানুষের কল্যাণে এবং অতিমারি নিয়ন্ত্রণে কাজ করব’, বললেন এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ার।

অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা আরও আসবে। কারণ, হিমালয়সম প্রতিপক্ষের সকল প্রচেষ্টা নস্যাৎ করে জয় ছিনিয়ে আনা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক কৃতিত্ব। এ অবদানের জন্য পশ্চিমবঙ্গে তো বটেই, সর্বভারতীয় রাজনীতিতেও তার গুরুত্ব বাড়বে এবং সামনে দিনগুলোতে তাৎপর্যবাহী অবদান রাখার সুযোগ ঘটবে।

নিঃসন্দেহে, ২০২১ সালের নির্বাচনে হ্যাট্রিকের মাধ্যমে অভাবণীয় ও বিরাট বিজয় পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির মতোই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পলিটিকাল ক্যারিয়ারে বিরাট 'টার্নিং পয়েন্ট', যা এই নেত্রীর জীবনে এক সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তারক ঘটনা রূপে দৃশ্যমান হচ্ছে। এবং সম্ভবত, প্রায়-অপ্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি ও নরেন্দ্র মোদির সামনে বিরোধিতার প্রধান বিকল্প রূপে আবির্ভূত হতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।