বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ জন শিক্ষার্থীকে প্রায় ৫ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
জনসংযোগ দফতর থেকে জানা যায়, সোমবার (২০ জানুয়ারি) কোষাধ্যক্ষ কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী শিক্ষার্থীদের হাতে আর্থিক সহায়তার চেক তুলে দেন।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. মোস্তাক আহমেদ, প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক ড. আব্দুলাহ্-আল-মামুন, সমন্বয়ক আব্দুল কাদের, শহিদ ফারহান ফাইয়াজের পিতা আলহাজ্ব শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া এবং শহিদ আবু সাঈদের ভাই মো. আবু হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসার বিষয়টি তত্ত্বাবধানের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি আন্দোলনে আহত ছাত্র-ছাত্রীদের নামের তালিকা চেয়ে প্রত্যেক বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে পত্র প্রেরণ করে। এপ্রেক্ষিতে যেসকল শিক্ষার্থী কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করে, তাদের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।
পুরোনো পদ্ধতিতে পরীক্ষার আবেদন, সার্টিফিকেট উত্তলোনসহ সকল অফিসিয়াল কার্যক্রমে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি নিরসনে অটোমেশনের পূ্র্ণাঙ্গ রোডম্যাপসহ ৪ দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা৷
সোমবার (২০ জানুয়ারী) দুপুর সাড়ে ১২টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে অটোমেশনের পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ প্রকাশ না করা অবধি অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে তার৷
৪ দফা দাবিগুলো হলো-
অনলাইনে সকল পরীক্ষার ফরম পূরণসহ পরীক্ষার সময়সূচি, প্রবেশপত্র, সাময়িক সনদ অনলাইনে প্রকাশ করতে হবে; সকল শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে ডেটাবেজ তৈরি করে আলাদা আইডি করে প্রয়োজনীয় তথ্যের অ্যাক্সেস দিতে হবে; বই ও জার্নালের অনলাইন অ্যাক্সেস প্রদান করতে হবে এবং লাইব্রেরির যাবতীয় প্রশাসনিক কার্যক্রম অনলাইনভিত্তিক করতে হবে; এবং বাস ও পরিবহনসংক্রান্ত সব দরকারি তথ্য অনলাইনে সহজলভ্য করতে হবে এবং অটোমেটেড বাস ট্রাকিং সিস্টেম চালু করতে হবে।
অবস্থান কর্মসূচিতে ইতিহাস ছাত্র সংসদের ভিপি শাকিল আলী বলেন, যে অফিসে ৩ জন কর্মচারী হলেই অফিস চালানো যায় সেখানে ২০/৩০ জন কর্মচারী নিয়োগ দিয়েও বলা হয় লাঞ্চের পরে আসেন। একজন পরীক্ষার্থীর পরীক্ষার জন্য ৪ থেকে ৫ জায়গায় ঘুরতে হয় ফরম পূরণের জন্য যেটা কখনোই কাম্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ২০২৫ সালে এসেও মান্ধাতার আমলে পড়ে আছে এটি দ্রুত সময়ের মধ্যে বেরিয়ে আসতে হবে।
আরেক শিক্ষার্থী নাজিরুল ইসলাম বলেন, ৫ আগস্টের পর বিশ্ববিদ্যালয় নতুন প্রশাসন পেয়েছি, আমরা ধারণা করেছিলাম নতুন প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের যতগুলো সিস্টেম আছে সবগুলো ডিজিটালাইজেশন করবে কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি আজ পাঁচ ছয় মাস হয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোন সিস্টেমের পরিবর্তন করেনি। শিক্ষার্থীদের মূল্যবান সময় ও ভোগান্তি কমাতে সকল সিস্টেমের অনলাইনভিত্তিক করা উচিত।
সর্বশেষ তথ্যমতে প্রতিবেদনটি লিখার সময় পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা অটোমেশনের পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ প্রকাশ করার বিষয়ে অনড় অবস্থানে রয়েছে৷
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপরে হামলা ও পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়া আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় ৭১ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করেও নাম প্রকাশে লুকোচুরি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের।
গত ৫ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৯ তম সিন্ডিকেট সভায় দুই সেমিস্টারের জন্য ৩৩ জন শিক্ষার্থী এবং এক সেমিস্টারের জন্য ২৩ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটি সাবেক ১৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য প্রফেসর ড.মো.শওকাত আলী জানান।
এর আগে তথ্য অনুসন্ধান কমিটি ৭২ জন শিক্ষার্থীর একটি তালিকা জমা দেয়। যা ১০৮ তম সিন্ডিকেট সভায় উত্থাপন করা হয়। পরে ১০৯ তম সিন্ডিকেট সভায় একজনকে মানবিক বিবেচনায় বাদ দিয়ে বাকি ৭১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এইদিকে অর্ধমাস পেরিয়ে গেলেও নামের তালিকা না পেয়ে হতাশ শিক্ষার্থীরা। কাকে কোন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়েছে। এই ৭১ জন কারা সেটি না জানায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে অনেকেই। এছাড়া তাদের শাস্তির ব্যাপারেও অসন্তুষ্ট শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আবু সাঈদ হত্যা ও কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত অনেকেই প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়। অনেকেই এসে পরীক্ষা দিচ্ছেন।
এই ব্যাপারে বেরোবির কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক শারিয়ার সোহাগ বলেন, যে ৭১ জনের তালিকা রয়েছে সেটি ত্রুটিপূর্ণ এবং অসামঞ্জস্যপূর্ণ। কারা কি ধরনের অপরাধ করেছে তার একটি মাপকাঠি তৈরি করে সেই অনুযায়ী তাদের শাস্তি দিতে হবে। সেই অনুয়ায়ী যদি শাস্তি না দেওয়া হয় সেটি তো সুষ্ঠু বিচার হয় না। সার্বিকভাবে যে শাস্তি দেওয়া হয়েছে সেটি ব্যক্তিগত ভাবে আমি সন্তুষ্ট নই। আমি এর বিরোধিতা করে আসছি। আমার সাথে বিশ্ববিদ্যালয় অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা এর বিরোধিতা করছে এবং তারা সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাচ্ছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদাহরণ টেনে তিনি আরও বলেন, রাবিতে অপরাধের মাপ কাঠি অনুযায়ী স্থায়ী বহিষ্কার, হলের সিট বাতিল, অর্থদণ্ড ও যাদের ছাত্রত্ব নেই তাদের সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং তা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। সেখানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এক সেমিস্টার, দুই সেমিস্টার বহিষ্কার করেই দায় সারছেন। যাদের ছাত্রত্ব নেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে প্রশাসন আশ্বস্ত করলেও তা কবে করা হবে এবং কীভাবে করা হবে সে বিষয়ে কোন পরিষ্কার বক্তব্য বা রূপরেখা নেই।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড.মো. ফেরদৌসর রহমানের কাছে নামের তালিকা চাইলে তিনি বলেন, সিন্ডিকেট সভার পর নামের তালিকা রেজিস্ট্রারের কাছে আছে। নামের তালিকা প্রকাশ করা হবে। আগে বিভাগ গুলোতে নোটিশ যাবে।
রেজিস্টার ড. মো. হারুন অর রশিদ কাছে তালিকার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। সাংবাদিকদের তালিকা দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান সাংবাদিকদের এই তালিকা দেওয়া হবে না।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলোসোফি কালচারাল ক্লাবের দিনব্যাপী আয়োজিত হলো শীতকালীন পিঠা উৎসব।
সোমবার (২০ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন এলাকার কাঁঠাল তলায় আয়োজিত উৎসবে শীতকালীন বিভিন্ন পিঠার পসরা সাজিয়ে বসেন শিক্ষার্থীরা। যেখানে শিক্ষক - শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল।
দিনব্যাপী এ পিঠা উৎসবে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের পাশাপাশি হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড এবং কুলিংপয়েন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস লিমিটেডের সহযোগিতায় উৎযাপিত হয় এ উৎসব।
উৎসব সম্পর্কে ফিলোসোফি কালচারাল ক্লাবের সভাপতি ইসরাত জেরিন পায়েল বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় আমাদের এ আয়োজন। শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে দিনব্যাপী এ আয়োজন উৎসবে রুপ নেয়। আগামীতেও এমন আয়োজন অব্যহত থাকবে।
উৎসব সম্পর্কে হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের উপ ব্যবস্থাপক ও হেড অব মার্কেটিং লুৎফুন নাহার আলো বলেন, সামজিক কাজে সম্পৃক্ত থাকতে পেরে ভালো লাগছে। শিক্ষার্থীদের উৎসবমুখর দিনের সহযোগী হতে পেরে আমরা আনন্দিত।
কুলিংপয়েন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, সৃজনশীল ও সহশিক্ষা কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত থাকা উচিত। আমি মনে করি, এসকল কার্যক্রমে যুক্ত থাকলে শিক্ষার্থীদের মনোজাগতিক বিকাশ হবে।