বাকবিতণ্ডায় জাকসু নির্বাচন বিষয়ক সভা স্থগিত

  • জাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বাকবিতণ্ডায় জাকসু নির্বাচন বিষয়ক সভা স্থগিত/ছবি: সংগৃহীত

বাকবিতণ্ডায় জাকসু নির্বাচন বিষয়ক সভা স্থগিত/ছবি: সংগৃহীত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে উপলক্ষ্য করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আয়োজিত সভায় জাকসুর সভাপতি ও উপাচার্য অসুস্থতাজনিত কারণে উপস্থিত না থাকায় পরিচয় পর্ব শেষে সভা স্থগিত ঘোষণা করা হয়৷ সভা স্থগিত করার পর ছাত্রশিবিরের উপস্থিতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বামপন্থী সংগঠনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অন্যান্য সংগঠনের শিক্ষার্থীদের বাকবিতণ্ডা হয়।

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের কাউন্সিল কক্ষে জাকসু নিয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভা স্থগিতকালে অন্যান্য সংগঠনের শিক্ষার্থীদের সাথে বামপন্থীদের বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে।

বিজ্ঞাপন

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান অসুস্থতাজনিত কারণে সভায় উপস্থিত না হওয়ায় উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ ও প্রক্টর অধ্যাপক রাশিদুল আলম সভা শুরু করেন। প্রাথমিকভাবে প্রশাসনের সাথে বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা জাকসুর গঠনতন্ত্র প্রণয়ন নিয়ে বিভিন্ন দাবি পেশ করতে থাকে। সভার এক পর্যায়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সোহাগি সামিয়া উপস্থিত সদস্যদের কে কোন সংগঠন থেকে এসেছে তা জানতে চেয়ে পরিচিতি পর্বের দাবি জানায়। তার এ দাবির প্রেক্ষিতে পরিচয় দিতে শুরু করেন বিভিন্ন সংগঠন থেকে আসা প্রতিনিধিরা৷ তবে পরিচিতি পর্বের মাঝে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) উপস্থিত বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন জাকসুর সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য না থাকায় আজকের সভাটি পরিচিতি পর্ব শেষে স্থগিত করা হবে।

উপ-উপাচার্যের সভা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়ার পরবর্তী সময়ে মো. শরীফ নামে এক ছাত্রদল কর্মী পরিচয় দেওয়াকালে শিবিরের উপস্থিত থাকার কারণ জানতে চাইলে সেখানে থাকা অন্য সংগঠনের প্রতিনিধিরা পরিচয় পর্বের মাঝখানে অতিরিক্ত কথা বলায় আপত্তি জানান।

বিজ্ঞাপন

এসময় উপ-উপাচার্য পরিচিতি পর্ব শেষে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সবার মতামতের ভিত্তিতে জাকসু নির্বাচন চায়। আজকে উপাচার্য না থাকায় আজকের সভা মুলতবি করা হলো। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়ে সভার আহ্বান করবে।’

এদিকে, সভা মুলতবি করায় সাংস্কৃতিক জোটের সহ-সভাপতি প্রাপ্তি তাপসী প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে প্রতিবাদ জানালে উপ-উপাচার্য তার ব্যাখ্যা দিতে গেলে ছাত্রফ্রন্টের সজীব আহমেদ জেনিচ ও সোহাগী সামিয়া উচ্চবাচ্য শুরু করেন। এসময় উপস্থিত অন্যান্য সংগঠনের সদস্যরা তাদের উচ্চবাচ্যের প্রতিবাদ জানায়।

এসময় উপ-উপাচার্য উপস্থিত প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা। এটি আমাদের বিষয় না।’

উপ-উপাচার্যের বক্তব্য শেষে অন্যান্য সংগঠনের প্রতিনিধিরা কক্ষ ত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এসময় সাংস্কৃতিক জোটের প্রাপ্তি তাপসী উচ্চবাচ্য করেন এবং ছাত্রফ্রন্টের সজীব আহমেদ জেনিচ ও জাহাঙ্গীরনগর বাঁচাও আন্দোলনের প্রতিনিধি অমিত ‘জ্বালোরে জ্বালো, আগুন জ্বালো’ বলে স্লোগান দিতে শুরু করেন। তাদের সাথে ছাত্রদলের কর্মী পরিচয় দেয়া কয়েকজনকেও স্লোগান দিতে দেখা যায়। এসময় উপস্থিত অন্যান্য সংগঠনের প্রতিনিধিরাও ‘বাকশালের দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান’ বলে পাল্টা স্লোগান দিতে থাকেন। পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিতে দিতে উভয়পক্ষ কাউন্সিল কক্ষ থেকে বের হয়ে যায়। এছাড়া জেনিচকে কুরুচিপূর্ণ গালাগাল করতে দেখা যায়।

সজীব আহমেদ জেনিচ বলেন, জাকসু নির্বাচন নিয়ে প্রশাসন একটি মিটিং কল করে। মিটিংয়ে এসে আমরা জানতে পারি ১৯৮৯ সালে নিষিদ্ধ হওয়া ইসলামি ছাত্রশিবির উপস্থিত আছে। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম মিটিং ওয়াক আউট করবো। ছাত্রদলের একজন কথা বলতে গেলে এসময় একটি প্ল্যাটফর্মের একজন বাধা দেয়। এক পর্যায়ে ওই ছাত্র স্লোগান দেয়া শুরু করে। আমাদের বলে আমরা বাকশালী ও মুজিববাদী। তার স্লোগানের প্রতিবাদে আমরা স্লোগান দিয়েছি।

অপরদিকে জুলাই গণহত্যা বিচার নিশ্চিত পরিষদের সংগঠক মোঃ শোয়াইব বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জাকসু নিয়ে একটি সভার আয়োজন করে। আজকের এই মিটিংয়ে আমরা আশা করেছিলাম জাকসু নির্বাচন নিয়ে একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। কিন্তু আমরা দেখতে পেয়েছি সভা শুরু করার পর থেকেই কতিপয় ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা যাদের কোনো কমিটি নাই তারা একটা হট্টগোল শুরু করেন। তাদের এই হট্টগোলের প্রতিবাদে আমরা সভা স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হই।

তিনি আরও বলেন, কবীর হত্যাকে রেফারেন্স করে যারা একটি সংগঠনের সাথে বসতে চায় না, তাদের উচিত কামরুল, শামীম হত্যার সাথে জড়িত ছাত্রদলের সাথেও না বসা। কোনো রাজনৈতিক দলই সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। প্রত্যেকেরই ভুল আছে, সমালোচনা আছে। জুলাইয়ের এই আন্দোলনের পর আমরা একটি সুষ্ঠু রাজনৈতিক বন্দোবস্ত চাচ্ছি। আজকে মিটিংকে কেন্দ্র করে কতিপয় সংগঠনের প্রতিনিধিরা যা করেছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। ঐতিহাসিক দায়ভার নিলে বাকশালে যারা অংশীদার ছিল তাদেরও নিতে হবে।

এ বিষয়ে ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি হারুনুর রশীদ বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক অধিকার নিয়মবহির্ভূতভাবে ফ্যাসিবাদী কায়দায় বিরত রাখার হীন চেষ্টাকে ফ্যাসিবাদের ধারাবাহিকতা বলেই মনে করি। সব বৈধ ছাত্রসংগঠনের কাছে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক আচরণ এবং প্রশাসন আগের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে ব্যর্থতা থেকে বের হয়ে আসবে বলে আশা করে ছাত্রশিবির৷ আমাদের লক্ষ্য, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিনির্মাণ। শিক্ষাঙ্গনেও থাকবে না কোনো দখলদারত্ব, কোনো প্রকার আইনের তোয়াক্কা না করে ফ্যাসিবাদী কায়দায় কোনো ছাত্রসংগঠনের অধিকারকে হরণ করে নেওয়া হবে না। প্রতিটি রাজনৈতিক সংগঠন তার মতামত প্রকাশের অধিকার পাবে, ছাত্র সংসদের বৈধ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে গণতান্ত্রিক চর্চাকে সমুন্নত রাখবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, উপাচার্য অসুস্থতার কারণে আজকের সভায় উপস্থিত না থাকায় সভা মুলতবি ঘোষণা করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে তারিখ ঘোষণার মাধ্যমে এ বিষয়ে আবারও বসা হবে।