তদন্তে ঝুলে আছে শেকৃবি ছাত্রীদের যৌন নিপীড়নের অভিযোগ

  • শেকৃবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন নিপীড়ন ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠে দেড় বছর আগে। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও আলোর মুখ দেখেনি তদন্ত প্রতিবেদন এবং বিচারিক প্রক্রিয়া।

২০২৩ সালের ২৮ মার্চ শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) ফাইন্যান্স এন্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবু জাফর আহমেদ মুকুলের বিরুদ্ধে এই যৌন ও মানসিক হয়রানির অভিযোগ দায়ের করে এগ্রিবিজনেস অনুষদের বেশকিছু ছাত্রী। শিক্ষার্থীদের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তখনকার প্রশাসন যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধকল্পে একটি কমিটি গঠন করে এবং তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও আলোর মুখ দেখেনি তদন্ত প্রতিবেদন। তবে সেই কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল বলে জানা যায়।

বিজ্ঞাপন

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র থেকে জানা যায়, সে বছর শিক্ষার্থীরা মুকুলের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানিসহ বেশকিছু অভিযোগ প্রক্টরের কাছে জমা দেয়। অভিযোগপত্রে এক ছাত্রী বলেন, তিনি (আবু জাফর আহমেদ মুকুল) বিভিন্ন সময়ে আমাকে তার সঙ্গে একাকী দেখা করতে বলেন। আমি তাকে এড়িয়ে চললে সে আমার বাসার সামনে এসে আমাকে তার সঙ্গে রেস্টুরেন্টে যেতে বলে। আমি ফোন রিসিভ না করলেও তিনি আমাকে ফোন দিতেই থাকেন। আমাকে বিভিন্ন জায়গায় তার সঙ্গে একা ঘুরতে যেতে বলেন।

এছাড়াও নম্বর বেশি দিয়ে শিক্ষক বানানোর প্রলোভনে কাছে টানার চেষ্টা, প্রতিদিন সকালে রুটিন মাফিক কল-মেসেজ, গভীর রাতে ভিডিও কল, একা কফি শপে ডাকা, ছাত্রীদের বাসার সামনে গিয়ে ঘুরতে বের হতে বলা, অসময়ে কল করে অপ্রাসঙ্গিক কথা বলে উত্যক্ত করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ক্লাশে ব্যক্তিগত হয়রানির প্রতিবাদ করায় এক শিক্ষার্থীকে পাগল ও অটিস্টিক বলে সম্বোধন করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। ছাত্রীদের উত্যক্ত ছাড়াও একাডেমিক কার্যক্রমে অনিয়মের অভিযোগও উঠে এসেছে তার বিরুদ্ধে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় ও ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছিলেন, ক্লাশে তিনি নিজেকে লাইসেন্সধারী মাস্তান এবং শিক্ষার্থীদের লাইসেন্স বিহীন মাস্তান বলে সম্বোধন করেছেন। তার বিরুদ্ধে কেউ যেন অভিযোগ তুলতে না পারে এজন্য প্রতি সেমিস্টারে তার ক্লাশ থাকায় তার কাছ থেকে 'নিস্তার নেই' জানিয়ে শিক্ষার্থীদের হুমকি দেন। মনগড়া সিলেবাসে এবং সিলেবাসের বাইরে থেকে পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রায়ই বিপদে ফেলতেন এই শিক্ষক। এছাড়া ক্লাসে খারাপ ব্যবহার এবং প্রশ্নফাঁসের অভিযোগও উঠে এসেছে।

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, তিনি নিজ স্বার্থে শিক্ষার্থীদের অনুষদের ডিন ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য চাপ দিতেন। প্রতিদানে আন্দোলনকারীদের প্রশ্নপত্র বিতরণ করতেন মুকুল। অসম নম্বর বন্টন এবং পছন্দের শিক্ষার্থীকে নম্বর প্রদানে সুবিধা দেওয়ার অভিযোগও করে শিক্ষার্থীরা। নিয়ম বহির্ভূতভাবে উত্তরপত্রে রেজিস্ট্রেশনের পাশাপাশি নাম লিখাতেন তিনি। অভিযোগপত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে হেয় করার অভিযোগও উঠেছে। উপাচার্যের নির্দেশের পরও পরীক্ষা না নেওয়া এবং পরবর্তীতে উপাচার্যের কল রিসিভ করেননি বলে দাম্ভিকতা প্রদর্শন করেন শিক্ষক মুকুল।

তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার শেখ রেজাউল করিম বলেন, আগের কমিটি একটা রিপোর্ট জমা দিয়েছে। রিপোর্টের প্রেক্ষিতে তাকে বরখাস্ত এবং শোকজ করা হয়েছে। তিনি (মুকুল) এটার জবাব দিয়েছেন। সেই প্রেক্ষিতে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলাম আগের প্রশাসন দিয়ে। যার প্রধান ছিলেন সাবেক প্রো ভাইস চ্যান্সেলর। এখন তো আগের প্রশাসন নেই, তাই কাজটি আর করা হয়নি। এখন নতুন প্রো ভাইস চ্যান্সেলর জয়েন করেছেন, আমাদের ফাইল রেডি আছে, ছুটির পরেই আমরা নতুন কমিটি গঠন করবো।