ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির ৩১ সদস্যের মধ্যে সাংগঠনিক কার্যক্রমে ১৮ জনের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয় থাকার অভিযোগ। ফলে সাংগঠনিক কার্যক্রমে রয়েছে ধীরগতি, ক্ষুণ্ণ হচ্ছে দলীয় ইমেজ। এর আগে ২০২১ সালের ১৬ জুন ৩১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হলেও ফ্যাসিবাদী আওয়ামী শাসনামলে দলের দুঃসময়ে দীর্ঘদিন দেখা যায়নি বেশিরভাগ নেতাকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২১ সালের ১৬ জুন লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষের সাহেদ আহম্মেদকে আহ্বায়ক এবং ইংরেজি বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের মাসুদ রুমী মিথুনকে সদস্য সচিব করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের ৩১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে কমিটি ঘোষণার পরপরই সংবাদ সম্মেলন করে পদ পাওয়া ১২ জন সদস্য দলীয় নীতিমালা না মেনে বিবাহিত, অছাত্রদের পদ দেয়ার অভিযোগ তুলে কমিটি প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে আহ্বায়ক কমিটি সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক আনোয়ার পারভেজ, আহসান হাবীব, সবুজ হোসাইন ও সদস্য সাব্বির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের হস্তক্ষেপে বিষয়টির সমাধান হয়। তবে একাংশের বিরোধীতার মুখে কমিটি টিকে গেলেও সাংগঠনিক কার্যক্রমে দেখা যায় স্থবিরতা।
পরবর্তীতে শাখা ছাত্রদলের কমিটিতে জায়গা পাওয়া অধিকাংশ নেতার বিরুদ্ধেই উঠেছে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ। এদের অনেকেই আবার বিবাহিত, অপরিচিত, অছাত্র ও চাকরিজীবী। শাখা ছাত্রদলের নিয়মিত নেতাকর্মী ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য মতে, ৩১ সদস্যের কমিটিতে বিবাহিত, চাকরিজীবী ও নিষ্ক্রিয়ের তালিকায় রয়েছেন যুগ্ম আহ্বায়ক আবু দাউদ, ওমর শরীফ, নাজমুল ইসলাম, নৌশিন তাবাসসুম ও সদস্য মাহমুদুল হাসান মৃদুল। দীর্ঘদিন ধরে সাংগঠনিক কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয়দের মধ্যে রয়েছেন যুগ্ম আহ্বায়ক শাহানুর হোসেন, মো. সবুজ হোসাইন, মেহেদী হাসান হিরা, মনিরুল ইসলাম, সোলাইমান চৌধুরী শিহাব, সদস্য জিতু আহসান ও ওসমান আলী। কমিটিতে অপরিচিত মুখ হিসেবে আছেন যুগ্ম আহ্বায়ক তুহিন হোসাইন, লিমন হোসাইন, সদস্য রাজু আহমেদ, সম্রাট হোসাইন, সানজিদা ইসলাম ও রুনা খাতুন।
এব্যাপারে ছাত্রদলের কর্মী আলামিন বলেন, ২০২১ সালে যে ৩১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি দেওয়া হয়েছিল তারা বেশীরভাগই নিস্ক্রিয়। সেখানে যাদের নাম এসেছিলো, বেশীরভাগকেই আমি চিনি না। এভাবে তো একটা সংগঠন চলতে পারেনা। অন্যান্য সংগঠনের সাথে রাজনীতির ময়দানে টিকে থাকতে হলে সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল করতে হবে। এই কমিটিতে তেমন কোনো সক্রিয় নেতৃত্ব নেই তাই অতিদ্রুত এই কমিটি বিলুপ্ত করে ত্যাগীদের মূল্যায়ন করে নতুন কমিটি গঠিত হোক। কমিটির নেতৃবৃন্দ অধিকাংশ নিষ্ক্রিয় থাকায় আমরা সাংগঠনিক দিকনির্দেশনা যেমন পাচ্ছিনা তেমনি নতুন নেতৃত্বও আসছে না। আমরা দ্রুত এই অবস্থার সমাধান চাই।
জানতে চাইলে শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মাসুদ রুমি মিথুন জানান, আমাদের কমিটির ৩১ জন হলেও অনেকেই কাজ করছে। কমিটি দেওয়ার পরে অনেকে কাজ করতে পারে নাই, কথা বলতে পারে নাই। আমাদের কমিটি তো কেন্দ্র থেকে দেয়, অনেকেই চেনাজানা ছিল না কিন্তু কমিটিতে ছিলো, অনেকেই মিছিল মিটিং করতে ভয় পেয়েছে। এখন কমিটি তো কেন্দ্র করে, এগুলোও যার যার ব্যাপার, কেও ইচ্ছা হলে আসবে আবার কেও না আসতেই পারে। তবে আমরা কেন্দ্রে বলেছি যে আমাদের ৩১ জনের কমিটি হলেও দলীয় কর্মসূচীতে এই কয়জনকে পাই, বাকীদের পাওয়া যায় না। এখন কেন্দ্র থেকে এব্যাপারে যেটা ভালো হয় সেই সিদ্ধান্ত নিবে।
সার্বিক বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নিষ্ক্রিয় বা অপরিচিতরা কীভাবে আছে সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক আর সদস্য সচিব বলতে পারবে। আমাদের তো আসলে সবার সাথে কথা বলার সুযোগ হয়না, এগুলো সংশ্লিষ্ট কমিটির নেতারাই দেখে। দীর্ঘদিন কমিটি হয়েছে, অনেকেই চলে গেছে অনেকে চাকরি করছে। এখন তো আর আগের মতো সময় নাই, এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা ইতিমধ্যে কাজ করছি। একসাথে তো সব কমিটি করা যায় না, একে একে কাজ করা হবে। খুব দ্রুতই আমরা নতুন কমিটি গঠন করব।