ক্ষতিপূরণ দিতে নারাজ সেলফি কর্তৃপক্ষ, জাবিতে আটক ১৫ বাস

  • মাহমুদুল হাসান, জাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

ঢাকা-মানিকগঞ্জ রুটের মরণফাঁদ সেলফি পরিবহনের একটি বাসের ধাক্কায় গত ৭ ডিসেম্বর ঘটনাস্থলেই মারা যান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাবেক শিক্ষার্থী মো. রোবেল পারভেজ। এরই প্রেক্ষিতে ২৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে চার দিন ধরে সেলফি পরিবহনের ১৫টি বাস আটক করে রেখেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

রোববার (১০ ডিসেম্বর) বিকেলে ৫টায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রিয় খেলার মাঠে সেলফি পরিবহনের ১৫টি বাস রাখা আছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে ক্ষুব্ধ হয়ে দুর্ঘটনার দিন বৃহস্পতিবারই ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে চলমান সেলফি পরিবহনের ২০টি বাস আটক করেন শিক্ষার্থীরা। পরদিন শুক্রবার সকালে আরও ৫টিসহ মোট ২৫টি বাস আটক করা হয়। পরে মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ১০টি বাস ছেড়ে দেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

একইদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রুবেল পারভেজের হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা ডেইরি গেইট সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আরিচাগামী লেনে মানববন্ধন করেন।

শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা যায়, সেলফি পরিবহনের বেপরোয়া গতি এবং চালক-হেলপারদের খারাপ আচরণ, হাফ ভাড়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ ইত্যাদি কারণে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ছিল তাদের। বাসের চাপায় রুবেল পারভেজের নিহত হওয়ার পর এ ক্ষোভ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই শিক্ষার্থীরা সেলফি পরিবহনের রুট পারমিট বাতিলসহ ভুক্তভোগী পরিবারকে ২৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ না দেওয়া পর্যন্ত বাসগুলো ছাড়তে অসম্মতি জানান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায় সেলফি পরিবহনের নাম দিয়ে বর্তমানে ২৮০ থেকে ৩০০টি বাস আছে এই রুটে। এরমধ্যে প্রতিদিন রাস্তায় চলাচল করে ১৮০ থেকে ২০০টি বাস। প্রতিদিন গাড়িপ্রতি কমপক্ষে ২,৫০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। আর এসব টাকা তুলে থাকেন কোম্পানির নিয়োগ করা চেকাররা।

বিজ্ঞাপন

হিসাবে অনুযায়ী ২০০ বাস থেকে সেলফি পরিবহনের একদিনে চাঁদা ওঠে ৫ লাখ টাকা। মাসে ১ কোটি ৫০ লাখ, আর বছরে প্রায় ১৮ কোটি টাকা। যদিও লপরিবহনের ফান্ডে তেমন কোনো অর্থ নেই বলে দাবি করেছেন মালিকপক্ষ। এবং শিক্ষার্থীদের ২৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের দাবির টাকা দিতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছে সেলফি পরিবহন কর্তৃপক্ষ।

তবে প্রথম আলোচনায় ৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়েছিল তারা। এ নিয়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এক হয়ে দুই দফায় সর্বশেষ শনিবার রাতেও আলোচনায় বসে সেলফি পরিবহন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে, তবে এতেও আসেনি কোনো সুস্পষ্ট সমাধান।

নিহত রুবেল পারভেজ ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। পড়াশোনা শেষে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের হরিরামপুর শাখায় ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ও দেড় বছরের কন্যাসন্তান রেখে গেছেন। এছাড়া বাড়িতে বয়স্ক মা আছেন। তার ছোট ভাইয়েরা এখনো পড়াশোনা করছেন বলে জানা যায়।

সমস্যার সমাধানের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বার্তা২৪.কমকে জানান, গতকাল শনিবার এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল ভুক্তভোগী পরিবার ও সেলফি পরিবহনের মালিকপক্ষের সঙ্গে। এসময় ভুক্তভোগী পরিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আবদুল্লাহ হেল কাফি স্যারকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেটাই মেনে নেবেন ভুক্তভোগী পরিবার। সবকিছু বিবেচনা করে ও সবার সঙ্গে আলোচনা করেই ওই পরিবারকে ২৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু মালিকপক্ষ তিন লাখ টাকা দিতে রাজি হয়েছে।

তিনি আরও জানান, শেষ মুহূর্তে কিছু সমস্যার কারণে আলোচনা অনেক দূর এগিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত আর সমাধান হয়নি। রুবেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী হওয়ায় আমরা চেষ্টা করছি তার পরিবারের পাশে দাঁড়াতে। আশা করছি মালিকপক্ষ ও রুবেলের পরিবারের সম্মতিতে দ্রুতই এর একটা সমাধান হবে।