ঢাবি ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা: একই নম্বর পেয়েও হলেন ১ম, ২য় ও ৩য়
ক্যাম্পাস
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ক’ ইউনিটের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত ফলে শীর্ষ তিনজন একই নম্বর পেলেও একটি প্রক্রিয়ায় তাদের মধ্যে ১ম, ২য় ও ৩য় ক্রম নির্ধারণ করা হয়েছে।
ঢাবির এ বছরের ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় আসির আনজুম খান, খালিদ হাসান তুহিন ও জারিফা তাবাসসুম একই নম্বর পেয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
সোমবার (৪ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনস্থ অধ্যাপক আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ফলাফল প্রকাশ করেন।
প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, যিনি প্রথম হয়েছেন- আসির আনজুম এমসিকিউতে পদার্থ বিজ্ঞানে ১৩.৭৫, রসায়নে ১৫, গণিতে ১৫, জীব বিজ্ঞানে ১৩.৭৫ নম্বর পেয়েছেন। এছাড়া লিখিত অংশে পদার্থ বিজ্ঞানে ১০, রসায়নে ৯, গণিতে ১০, জীব বিজ্ঞানে ৮.৫ নম্বর মিলিয়ে মোট ৯৫ নম্বর এবং এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএ’র নম্বর মিলিয়ে মোট ১১৫ পেয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
অন্যদিকে ঢাবির ‘ক’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় ২য় স্থান অর্জনকারী খালিদ হাসান তুহিন পদার্থ বিজ্ঞানে ১৩.৭৫, রসায়নে ১৫, গণিতে ১৫, জীব বিজ্ঞানে ১৩.৭৫ নম্বর পেয়েছেন। এছাড়া লিখিত অংশে পদার্থ বিজ্ঞানে ১০, রসায়নে ৯.৫, গণিতে ৯, জীব বিজ্ঞানে ৯ নম্বর মিলিয়ে মোট ৯৫ নম্বর এবং এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএ’র নম্বর মিলিয়ে মোট ১১৫ পেয়েছেন।
এছাড়া তৃতীয় স্থান অধিকারী জারিফা তাবাসসুমও ভর্তি পরীক্ষায় সব মিলিয়ে ১১৫ নম্বর পেয়েছেন। ভর্তি পরীক্ষায় তিনি পদার্থ বিজ্ঞানে ১২.৭৫, রসায়নে ১৫, গণিতে ১৪, জীব বিজ্ঞানে ১৩.৭৫ নম্বর পেয়েছেন। এছাড়া লিখিত অংশে পদার্থ বিজ্ঞানে ১০, রসায়নে ১০, গণিতে ৯.৫, জীব বিজ্ঞানে ১০ নম্বর।
এ ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান জানান, ভর্তি পরীক্ষায় এক বা একাধিক পরীক্ষার্থী একই নম্বর পেলে বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় এইচএসসি পরীক্ষার এইচএসসির বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর নম্বর অনুযায়ী মেধাতালিকা প্রণয়ন করা হয়।
ভর্তি পরীক্ষার সমন্বয়কারী ও ফার্মেসি অনুষদের ডিন অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছার বিষয়টি স্পষ্ট করে বলেন, ভর্তি পরীক্ষায় আমরা তিনটি বিষয়ে নম্বর দেখেছি। পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন ও গণিতে কে নম্বর বেশি পেয়েছে, সেভাবেই তাদের মধ্য থেকে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ বছর ‘ক’ ইউনিটে আবেদন করেছিলেন ১ লাখ ১৫ হাজার ৬৮৯ জন। এরমধ্যে অংশগ্রহণ করেছেন ১ লাখ ১০ হাজার ৩৭৪ জন। যেখানে ভর্তির যোগ্য বিবেচিত হয়েছেন ১০ দশমিক ৩৯ শতাংশ পরীক্ষার্থী এবং অকৃতকার্য হয়েছে ৮৯ দশমিক ৬১ শতাংশ। ভর্তির যোগ্য বিবেচিত ১১ হাজার ৪৬৬ জনের মধ্যে শেষ পর্যন্ত এক হাজার ৮৫১ জন মেধাক্রম অনুযায়ী বিজ্ঞান অনুষদের বিভিন্ন বিভাগে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেন।
পোষ্য কোটা বাতিল, ফ্যাসিস্ট শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের বিচারের আওতায় আনা এবং আবেদন ফি কমাতে না পারলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রশাসনিক ভবনে অনির্দিষ্টকালের জন্য তালা দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাবি সমন্বয় সালাউদ্দিন আম্মার তার ফেসবুক ভেরিফাইড আইডিতে এক পোস্টে এ হুঁশিয়ারি দেন।
পোস্টে তিনি লিখেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন ফি ৫০০/৬০০/৭০০ টাকা। আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২০০ টাকার বেশি। আবেদন ফি বাণিজ্য একটি সফল ব্যবসা। যেটাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ওস্তাদ। বিজয়ের পর এমন প্রশাসন দেখে লজ্জা লাগে। তারা শিক্ষার্থীবান্ধব কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। শুধু চেতনার কথা শুনায়।’
ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন,‘পোষ্য কোটা বাতিল, ফ্যাসিস্ট শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের বিচারের আওতায় আনা এবং আবেদন ফি কমানো এই সব সিদ্ধান্ত এই প্রশাসন নেওয়ার ক্ষমতা পেয়েও করেনি। তাদের হাতে আর ৫দিন সময়। এর মধ্যে না করলে ২ জানুয়ারী থেকে প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলবে অনির্দিষ্টকালের জন্য।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাবির উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, ‘এই মূহুর্তে মন্তব্য করার মতো কিছুই নেই। আমি রাজশাহীর বাহিরে আছি ফিরে এসে বিষয়টা দেখব।’
শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে ২০২৪-২০২৫ সেশনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) ভর্তি পরীক্ষায় ১০টি আলাদা ইউনিটে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে ৭টি ইউনিটে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটি। এছাড়া ভর্তি পরীক্ষার অনলাইন আবেদনের সময় ১ জানুয়ারি থেকে পিছিয়ে ৩ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (শিক্ষা) ও কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব সৈয়দ মোহাম্মদ আলী রেজা।
ডেপুটি রেজিস্ট্রার সৈয়দ মোহাম্মদ আলী রেজা বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিবেচনায় ভর্তি পরীক্ষার ইউনিট সংখ্যা ১০টি থেকে ৭টি করা হয়েছে। একইসাথে ভর্তি পরীক্ষার ফী কমিয়ে আনা হবে। তবে কত টাকা কমানো হবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। অতি দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব আলী রেজা আরও বলেন, কিছু নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার কারণে ভর্তি পরীক্ষার আবেদনের তারিখ ১লা জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা ৩রা জানুয়ারি থেকে পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। আজকের সভায় পাশ মার্ক ৩৩ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৩৫ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া একটি বিভাগে ৪ জনের বেশি পোষ্য কোটায় ভর্তি না করারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷
এবার ভর্তি পরীক্ষায় এ ইউনিটের অন্তর্ভুক্ত গাণিতিক ও পদার্থ বিজ্ঞান অনুষদে সাথে যুক্ত হয়েছে ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড টেকনোলজি। একইসাথে সি ইউনিটের অন্তর্ভুক্ত কলা অনুষদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউট এবং আইন অনুষদ৷ এছাড়া বাকি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার বিষয় অপরিবর্তিত থাকবে।
এর আগে গত ১৯ ডিসেম্বরে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ১ জানুয়ারি শুরু হয়ে ২১ জানুয়ারি শেষ হবে। মোট ১০ ইউনিটে এবারের ভর্তি পরীক্ষা সম্ভাব্য ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত (শুক্রবার ও শনিবার ব্যতিত) চলবে। এ, বি, সি ও ডি ইউনিটের প্রতিটির জন্য ৯০০ টাকা, ই ইউনিটের জন্য ৭৫০ টাকা, সি-১, এফ, জি ও এইচ ইউনিটের জন্য ৬০০ টাকা এবং আই ইউনিটের জন্য ৫০০ আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জোর আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ইউনিট সংখ্যা ও ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি কমাতে উদ্যোগ নেয় প্রশাসন।
সম্প্রতি আলোচিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) প্রভোস্ট কাউন্সিলের ১৪০তম সভায় শিক্ষার্থীদের হলে প্রবেশের সময়সীমা সংক্রান্ত ঘোষিত নির্দেশনা শুধু শীতকালীন ছুটিতে কার্যকর থাকবে বলে নিশ্চিত করেছেন প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতি অধ্যাপক ড. শেখ এ.বি.এম জাকির হোসেন। উক্ত আইন অনুযায়ী ছেলেদের রাত ১১ টার মধ্যে এবং মেয়েদের মাগরিবের আযানের ১৫ মিনিটের মধ্যে হলে প্রবেশ করতে হবে।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) রাতে প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতি অধ্যাপক ড. শেখ এ.বি.এম জাকির হোসেনের সাথে ইবি ছাত্রশিবিরের প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎকালে এ বিষয়ে নিশ্চিত করেন তিনি।
কাউন্সিলের সভাপতি বলেন, হলে বহিরাগত প্রবেশ করে থাকে, এসব রোধে আমরা সাধারণ কাউন্সিল সভায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা একটা পরিবার হিসেবে বিবেচনা করি। শীতকালীন ছুটিতে নিরাপত্তা জোরদার স্বার্থে এই প্রবেশসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে স্পেসিফিক ভাবে শীতকালীন শব্দটা না আসায় শিক্ষার্থীদের কাছে ভুল বার্তা গিয়েছে।
এসময় শাখা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান, সংগঠনটির ছাত্রকল্যাণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। এছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইবির সহ-সমন্বয়ক গোলাম রাব্বানী উপস্থিত ছিলেন।
এসময় প্রতিনিধি দল শিক্ষার্থীদের অধিকার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দাবি পেশ করেন। যার মধ্যে হলেগুলোতে নতুন করে কোনো সিন্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মতামত নেয়া, হলের অভ্যন্তরে ক্যান্টিনের ব্যবস্থা করা, সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা ও মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট চালু করা।
এবিষয়ে জানতে চাইলে সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান বলেন, প্রত্যেক আবাসিক হলে বিশেষ করে ছাত্রীদের হলে ক্যান্টিনের ব্যবস্থা করা এবং নারী মেডিক্যাল এসিস্ট্যান্ট ও জরুরি ওষুধের সরবরাহ রাখার জোর দাবি জানিয়েছি। পাশাপাশি হল টিউটর নিয়মিত অবস্থান করে তাহলে অনেক সমস্যা কেটে যাবে। স্যার আশ্বস্ত করেছেন যে সময়সীমাটা ছুটিকালীন সময়ের জন্য নির্ধারণ করেছে। অন্যান্য দাবিসমূহ শীতকালীন ছুটির পর কাউন্সিল মিটিং এ আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন।
এছাড়াও নারীদের আবাসিক হল অভ্যন্তীণ সীমানায় অবাধ চলাফেরা করার সুবিধার্থে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ সমন্বয়ক গোলাম রাব্বানী।
বেকারত্ব যখন আমাদের সমাজব্যবস্থার প্রধান অন্তরায়, তখন সেই বেকারত্বের ছাপ মুছে দিতে নিজ দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ছাত্র অবস্থায় উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন শিক্ষার্থীরা। নানামুখী প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে তারা এগিয়ে চলেছেন স্বপ্ন পূরণের পথে।
কথায় আছে, ‘যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে’। এই প্রবাদটিকে বাস্তবরূপ দিতে পড়াশোনা আর ব্যবসা দুটোই সামলাচ্ছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) কয়েকজন শিক্ষার্থী। নিজের পড়াশোনার খরচের পাশাপাশি পরিবারও সামলাচ্ছেন তারা।
উদ্যোক্তা হওয়ার যাত্রায় এগিয়ে যাওয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা হয় এ ব্যাপারে। যারা পড়াশোনার পাশাপাশি সমানতালে তাদের ব্যবসা সামলিয়ে যাচ্ছেন। এদেরই একজন সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী বর্ষা।
তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘উদ্যোক্তা হতে খোলামেলা পোষাক বা পরিচিতির প্রয়োজন নেই, ইচ্ছাশক্তিই যথেষ্ট। উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন আমার অনেক দিনেরই। এদিকে আমর ব্যাচমেট এবং রুমমেট কক্সবাজারের। তো হঠাৎ চিন্তা করলাম কক্সবাজার জেলার কিছু ঐতিহ্যবাহী পণ্য দিয়ে ক্যাম্পাসে বিজনেস শুরু করলে কেমন হয়? তারপর বান্ধবীর সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলাম অল্প পুঁজি দিয়ে আপাতত শুরু করি। সে থেকে মাত্র ১০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে কক্সবাজারের আচার, শুঁটকি, বালাচাও এবং বাদাম নিয়ে ব্যবসা শুরু করি গত সেপ্টেম্বরে। আলহামদুলিল্লাহ, এখন আমি নিজের খরচ নিজেই চালাতে পারি। আমাদের ক্যাম্পাসে মেয়েদের মধ্যে আমরাই প্রথম যারা অনলাইন ও অফলাইনে এ ধরনের ব্যবসা শুরু করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদিও আপাতত এটি ক্যাম্পাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তবে ইনশাআল্লাহ, ভবিষ্যতে দেশজুড়ে আমাদের পণ্য ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, ছেলে বা মেয়ে হওয়া কোনো বিষয় নয়; হালাল উপার্জনটাই আসল।’
বর্ষা বলেন, ‘শুরুর দিকে অনেক মানুষের নেতিবাচক কথা শুনতে হয়েছে, এমনকি কাছের মানুষদের থেকেও সাপোর্ট পাইনি। কিন্তু ধৈর্য ধরে নিজের লক্ষ্যে অটল ছিলাম। আজ আমি বলতে পারি, মেয়েরা চাইলে সবকিছু করতে পারে। তবে তার জন্য খোলামেলা পোশাক বা অতিরিক্ত পরিচিতির প্রয়োজন নেই। আমার ক্যাম্পাসের বোনদের প্রতি আহ্বান থাকবে—আপনারাও উদ্যোক্তা হোন। ব্যবসা শুরু করতে বেশি পুঁজি নয়, ইচ্ছাশক্তিই যথেষ্ট।’
আরেকজন ক্ষুদে উদ্যোক্তা সালমান (ছদ্মনাম), বিয়ে করে বউ নিয়েই ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। এদিকে ক্যাম্পাসের আশেপাশে টিউশনিও তেমন সহজলভ্য নয়। কিন্তু সংসার চালাতে ভালোই খরচাপাতি দরকার হয়। তাই সিদ্ধান্ত নিলেন মানুষের নিত্যদিনের ব্যবহার্য ইলেক্ট্রনিক্স জিনিসপত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে স্টল নিয়ে বসার।
যেই কথা সেই কাজ! শুরুতে কিছুটা সংকোচ বোধ করলেও সময়ের পরিক্রমায় এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছেন তার ছোট্ট ব্যবসায়। ক্লাস চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝাল চত্বরে এবং সন্ধ্যার পর হল সংলগ্ন জিয়া মোড়ে দেখা মেলে তার।
তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমি বিবাহিত, তাই আমাকে সংসারের বিষয়ে ভাবতে হয়। তাছাড়া টিউশনি করতে হলে কুষ্টিয়া বা ঝিনাইদহ শহরে যাওয়া লাগে। সেখানে যাওয়া আসায় ২ ঘণ্টা সময় নষ্ট হয়। তার থেকে ভালো আমি যদি ২ ঘণ্টা সময় এখানে দেই, আমার টিউশনি থেকে ভালো টাকা উপার্জন হয়। আমাদের দু’জনের ভালোভাবেই চলে যায়।’
তিনি আরও জানান, ‘শুরুতে আমি যখন উদ্যোগ গ্রহণ করি, তখন কাউকে দেখতাম না। এখন দেখলাম অনেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে এদিকে ঝুঁকছে। কেউ টিশার্ট, কেউ ছোট খাবারের দোকান দিয়ে উদ্যোক্তা হচ্ছেন। আমার পরামর্শ থাকবে, এখান থেকে কেউ উদ্যোগ নিতে পারলে ভবিষ্যতে যে কোনো একটা জায়গায় গেলে সে ভালো করতে পারবে। কারণ এখানে একজন মানুষ তার জীবন সম্পর্কে ধারণা পেতে পারে। তাছাড়া কেউ চাকরি করলে সে অন্যের অধীনে চাকরি করবে, কিন্তু উদ্যোক্তা হলে সে আরেকজনকে চাকরি দিতে পারবে। তাই আমি বলবো- শিক্ষার্থীদের উদ্যোক্তা হতে এগিয়ে আসতে।
আরেকজন উদ্যোক্তা মিলি (ছদ্মনাম) জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের যে খাবার! তা মানুষের গলা দিয়ে নামতে কষ্ট হয়। সেই হল লাইফের শুরু থেকেই রান্নাবান্না করা হতো। শখের বশেও অনেকসময় রান্নাবান্না করা হয়। তারপর ভাবলাম যে, রান্নাবান্না করে ছোট পরিসরে বিজনেস করলে কেমন হয়! রান্নার প্রশংসা করতো সবাই, সাহসও দিয়েছে যে, ‘এটা দিয়েই শুরু করতে পারিস কিছু একটা!’
‘তারপর আর কি! যেই ভাবা সেই কাজ! আমি আর আমার বান্ধবী দু’জনে সিদ্ধান্ত নেই যে, রান্নাবান্না করে বিক্রি করার। এদিকে মেয়েদের হলের সামনে সেরকম খাবারের দোকান নেই। আর ক্যাম্পাস জুড়ে সেরকম ভ্যারিয়েশন ও নেই খাবারের।’
তিনি জানান, প্রথম একদিন সাহস করে প্রি অর্ডার নিয়ে ফেলি খাবারের৷ ‘নান আর চিকেন’ সাথে চিকেন বার্গার এবং স্যানডউইচ। এতো বেশি সাড়া পাই অকল্পনীয় ছিল! তারপর থেকে সবার ভলোলাগা আর চাহিদা বাড়তে থাকে। এরপরে সাহস করে হলের সামনেই নিজেদের ছোটখাটো একটা স্টল দিয়ে ফেলি! শীতে গরম গরম চিকেন স্যুপ, চিকেন চাপ। পাশাপাশি লুচি-ডালের স্বাদে, সুবাসে আমাদের ছোট্ট স্টলের সামনে জমতে শুরু করে মানুষের ভিড়। এমন ও হয় এখন আমরা স্টলে বসার আগে থেকেই অনেকে এসে অপেক্ষা করে, যাতে আগে থেকে খাবার পায়। অনেক প্রেশার হয় তখন কিন্তু অদ্ভুত একটা ভালো লাগা কাজ করে যখন তৃপ্তি নিয়ে সকালকে খেতে দেখি। এটাই প্রাপ্তি।
নতুনদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, একটা কথাই বলবো, যে যে বিষয়ে দক্ষ সে বিষয়ে পণ্যের মান আর কাস্টমারের চাহিদা বুঝে বিজনেস শুরু করুন। আর অবশ্যই কোয়ান্টিটি নয়, কোয়ালিটিতে ফোকাস করুন।
তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা ব্যবসাকে হালাল এবং সুদকে করেছেন হারাম। তাছাড়া রাসুল (স.) নিজেও একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি তার উম্মতকে সৎ উপায়ে হালাল পদ্ধতিতে ব্যবসার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। পৃথিবীতে সবচেয়ে বরকতময় পেশার একটি হলো ব্যবসা। সৎ ব্যবসায়ীকে আল্লাহ তায়ালা শহীদের মর্যাদা দিবেন। সেই থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমি ছোট্ট পরিসরে ব্যবসাটি শুরু করলাম।
মাসুদুর রহমান বলেন, এখানে আমি ২ টাকা পিস সিঙ্গাড়া, ৫ টাকা পিস গুলগুলা, ১০ টাকা প্লেট ছোলা দিয়ে শুরু করেছি। আমি যেহেতু ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং এর স্টুডেন্ট, আমার পড়াশোনার বিষয়ও ছিল ব্যবসা কেন্দ্রিক। তাই নিজের অভিজ্ঞতাটা চাকরি ক্ষেত্রে না লাগিয়ে ব্যবসায় কাজে লাগালাম।
নতুনদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তাদের নিজেকে আগে প্রশ্ন করতে হবে সে আসলে কী চায়? জোর করে বা হুজুগে কিছু হয় না। যদি মনে করে কেউ তাকে ব্যবসা টানছে তাহলে সে এদিকে আসুক৷ আর যদি মনে করে চাকরি করবে তাহলে সেদিকেই যাক।