প্রতিষ্ঠার ৫৪ বছর অতিক্রম করে ৫৫ বছরে পদার্পন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)। বর্ণাঢ্য আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন৷
রোববার (১২ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ চত্বরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং ভাষণ প্রদানের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন করেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান৷ উদ্বোধনী ভাষণের পর শান্তির প্রতীক পায়রা এবং বেলুন উড়ানো হয়৷ পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের সামনে থেকে একটি বর্ণিল শোভাযাত্রা শুরু হয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে এসে শেষ হয়।উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামরুল আহসানের নেতৃত্বে এ শোভাযাত্রায় উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মাহফুজুর রহমান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সোহেল আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আবদুর রব, রেজিস্ট্রার আজিজুর রহমানসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ড. এ বি এম আজিজুর রহমাননের সঞ্চালনায় উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, প্রাণের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘ ৫৪ বছর পার করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির বয়স আমাদের দেশের বয়সের সমান। ফলে দেশের প্রতি আবেগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেগ মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়৷ বর্তমান প্রশাসনের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে ৫৪ বছরে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে যাঁরা এতো দূর এনেছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং যারা বর্তমান প্রশাসনের প্রতি আস্থা রেখেছেন, তাদের সেই আস্থার উপযুক্ত হয়ে ওঠার চেষ্টা করা৷
উপাচার্য আরও বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের যে জায়গাগুলোতে অংশীজনের প্রত্যাশা রয়েছে, প্রাণের দাবি রয়েছে, একাডেমিক থেকে শুরু করে প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষা করে পরিবেশ বান্ধব উন্নয়নের যে যে জায়গাগুলো রয়েছে, সেখানে বর্তমান প্রশাসন সবকিছু দিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি করার চেষ্টা করবে৷ এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করছি৷
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর উপাচার্যের নেতৃত্বে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। আনন্দ শোভাযাত্রায় বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, হল প্রভোষ্ট, প্রক্টর, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং শুভানুধ্যায়ীগণ অংশগ্রহণ করেন। আনন্দ শোভাযাত্রা সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে গিয়ে শেষ হয়। পরবর্তীতে জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহতদের সুস্থতা এবং শহীদদের আত্মার শান্তি কামনায় দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষ্যে দিনব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্যে আরো ছিল- রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্মৃতিচারণ, পুতুল নাচ, মহিলা ক্লাব পরিচালিত রাগিনী সংগীত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রীতি ফুটবল এবং নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রীতি হ্যান্ডবল ম্যাচ এবং সন্ধ্যায় সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র এবং শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্রের উদ্যোগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।
এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া চত্বরে পিঠা মেলা এবং চারুকলা বিভাগের আয়োজনে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে আল্পনা ও গ্রাফিতি প্রদর্শন করা হয়। সর্বশেষ নকশীকাঁথা ব্যান্ডের গান পরিবেশন ও জমকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ৫৪'তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়৷
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম আহসান এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শুভ উদ্বোধন করেন।
এর আগে ১৯৭০-১৯৭১ শিক্ষাবর্ষে ৪ জানুয়ারি অর্থনীতি, ভূগোল, গণিত এবং পরিসংখ্যান-এই চারটি বিভাগে ভর্তিকৃত (প্রথম ব্যাচে) ১৫০জন ছাত্র নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ড. সুরত আলী খান। বিশিষ্ট রসায়নবিদ অধ্যাপক ড. মফিজ উদ্দিন আহমদ প্রথম উপাচার্য হিসেবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ দিনটিকে 'বিশ্ববিদ্যালয় দিবস' হিসেবে পালন করে আসছে।
দেশের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ^বিদ্যালয় হিসেবে ১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি যাত্রা শুরু করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়। পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশসেরা শিক্ষক ও গবেষকদের নেতৃত্বে অসংখ্য অর্জনের মাধ্যমে খ্যাতি অর্জন করেছে এ বিদ্যাপীঠ।