চাঁদ ও নারীর সেই চিরপ্রতীকতা

  • মোস্তাক আহমাদ দীন
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অলঙ্করণ: আনিসুজ্জামান সোহেল

অলঙ্করণ: আনিসুজ্জামান সোহেল

প্রবাস

একলা প্রবাসে আছে, ঘরে কবে ফিরবে ধীবর?
এপারে করচ গাছ, অড়হর, সকলে একাকী;
বাকিরাও চুপচাপ, পথপাশে জননী ও জায়া
ফিরবে হিঙ্গুল রাতে, যদি পায় গোধূলির বর?

বিজ্ঞাপন

শিকারি ঘনিষ্ঠ হলে টের পায় তিত্না ও পুটি;
জাল ফেলা হয়ে গেলে, নিরুপায় মাছেদের ভিড়;
তবু তো সকলে সেই স্বর-অন্ধ, কিছুই শোনে না :
কোথায় মাৎস্যন্যায়, কোন স্থানে ধীবরের ত্রুটি।

জলদাসী খরাগ্রস্ত, ঘূর্ণিবাত্যা, হৃদয় বেহাল
নাগর-গঞ্জিত দেখে সধবাও হেলে-দুলে হাসে;
গুঞ্জরন, বিলপারে, কথা ওঠে ধীবরপাড়ায় :
ধীবর ফিরলে ঘরে, ফের সে কি হাতে নেবে জাল?

পরিবর্তন

চাঁদ ও নারীর সেই চিরপ্রতীকতা
ঋতুর জটিল ভেদে ম্লান হয়ে গেছে

সকল নদীকে তাই লীলাহীন বয়ে যেতে দেখি

অন্ধকারে ভেঙে যায় পাড়

অনিশ্চয়

কখন ভেসেছে ভেলা, আজও দেখি জল বিচলিত

নদীর দু-পাড় কাঁপে, তীরগাছে ছায়া
কাণ্ড ও পাতার আধো-মৃদু আলোড়নে
যত গদ্যপদ্য লেখা হয়ে গেছে আগে
জলবর্ণে, তাম্রপত্রে, ধূলির পাতায়—
সেই সব মনে পড়ে বিকেলের পরে

না জানি গোধূলিক্ষণে কী যে ভেসে আসে
আর ওই দূরপথে কী যে ভেসে যায়...

বেনোজল

অন্ধকারে নিবিড় হলো জল
এই কারণে মন্দমৃদু গীতি
কানের কাছে উতোর দেয় ফুল,
পাখির মুখে চাপান-তোলা স্মৃতি?

পাখির গানে নৃত্যরত শিরা
বিধুর স্বরে অন্তরিত তাই,
আমরা দুটি পাখি কিংবা তুমি
যুগলরূপে শরীরে নাও ঠাঁই।

উথাল করে পাথাল করে মন
আমায় তবে স্পর্শ করে ছল?
হৃদয়জুড়ে সকলই তছনছ,
ভাসিয়ে দেয় অকাল বেনোজল।

এখন আমি দিব্যজ্ঞানহীন
লক্ষ্ণী ছেড়ে যেমন গেছে গোরা
হৃদয়মনে কানাই-রাধা একই—
সরস্বতী-পাঞ্জাতনে মোড়া।

শিল্পী

গাছ তার নিজের ছায়ায়
মুগ্ধ হয়ে সমপ্রেমে ডুবে
নিঃশব্দ ছবি এঁকে যায়

ভূতব্যস্ত মগ্ন আর একা

নিচে শুয়ে আছে এক মগ্ন
নিরজন আলোর রমণী

নিশি

নিশিপরিদের ফাঁদে পড়ে দেখি
জোছনায় ডহর বিলে
দূরে দূরে রাধানৌকা যায়

ওই পথে ঘুরে ঘুরে রজনি বিফল

ডিঙিও কাঁপছে আর
ফাঁকতালে পড়ে দেখি শূন্য
রজনির প্রাণ