কুহু কুহু ডাকি, সেও মুহুর্মুহুঃ শোনে

  • সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অলঙ্করণ: আনিসুজ্জামান সোহেল

অলঙ্করণ: আনিসুজ্জামান সোহেল

এই কূলে আমি আর ঐ কূলে স্বামী

মেঘালয় নামে এউগ্যা রাজ্য ভূভারতে
জারি থাকে। মেঘে ঘেমে সারাবেলা বাড়ে।
আমরা তারে চুপিসারে সিলেট বর্ডারে
জাফলং নদীর নিচা পরপার হ’তে

বিজ্ঞাপন

কুহু কুহু ডাকি, সেও মুহুর্মুহুঃ শোনে
সুপারি-উপচানো ঘন টিলায়-টিলায়—
আমাদের আমাদের ভূতেরা কিলায়,
নদীর এই পাড় কালা, বিবিধ দূষণে।

পানিতে পাথর ভাসে, ভারত অবধি
থরে-থরে পাথরের আঁকা-বাঁকা চাকু,
আমাদের কাঁচা-পাকা কেটে-চেঁছে চাখো
প্রত্নপ্রস্তরের অস্ত্রে সশস্ত্র, হে নদী!

বিজ্ঞাপন

দুই পাহাড়ের বিচে ঝুলিছে ঝুলসেতু,
তারির উপরদা ভ্যান ধীরে ব’য়ে যায়
লোলুপ হেডলাইট জ্বালি’; পাছায় বেজায়
আখাম্বা শিবলিঙ্গ ঝোলে, তাকায় আছে সে তো

আমরার ইজ্জত-পানে সিক্স্‌টি-ডিগ্রি কোণে—
আল্লাহ্! কী সুভগা আমরা! কী সৌভাগ্য মানি
প্রভুদের চানমারিতে আমরা যে ফেলানি,
বিগ-গেম হান্টিং। কিন্তু ঐ-যে ঐ ওনে

একটা গোরু পাহাড়ের গায়ে হাওয়া খায়
সে কোন্ জাত? হিন্দু না মুসলিম? না আসামি?
অবশ্য ক্রুশাল প্রশ্ন এইটা আরও, স্বামী :
কী করি’ গমিল গোরু অমন জায়গায়!

ঐ দৃষ্টিকোণ থেনে আমাদের যদি
দেখিতে পেতেম মোরা, দেখাত কী-রূপ
আমাদের শ্রীমঙ্গল, মোদের শ্রীপুর—
আর, নদী, তুমি কও, এই-যে যারা নদী

এস্পার-ওস্পার করে, পাথর-আরোহী,
এই-যে যত্ত ঊহ্যনাসা লুসাই মুরং
মান্দি টিপরা চাকমা খুমি রাখাইন হাজং
এরা সব কোন্ দেশি, এরা কোন্ গ্রহী?

লাল চাঁদ

১.
আমার আকাশে নিভে যেয়ো না গো, চাঁদ!
ওগো চাঁদ, চাঁদ, তুমি হৃৎপিণ্ডের চেয়ে লাল চাঁদ!
সকল গোধূলি আর সকল প্রভাতে
তুমি ল’য়ো আমার সংবাদ
আমার নিষ্প্রভ দিন, আমার কুহেলিধুধু রাত
ধুয়ে দিতে তোমার প্রভা-তে।

২.
খুলি খুলে ব’সে আছি, নিউরনে ঝরিছে লানত;
আমি একলা কালো ঘুঘু, ছায়াহারা ফরগেট-মি-নট—
যতদূরে জ্যোৎস্না যায়, যত দূরে থামে
ততদূর দূরবর্তী তবু সন্নিকট
ঈশ্বরের আব্রহ্মাণ্ড বামে
আমারে পাথর ক’রে রাখিয়াছ তোমার হারামে...

৩.
তুমিহীন আমি শুধু মৃত্যু নয়, জন্মরোধ নয়,
জন্মপূর্ব মৃত্যু আহা, সে যে এক দ্বিতীয় অন্বয়
অন্য কোনো ঈশ্বরের, ভিন্ন কোনো আকাশে, রাতুল,
সেখানে ঢাউস ঢেউয়ে কোনো চোখা রুপালি মাস্তুল
ক্রমশঃ বাবেল হ’য়ে উঠিতেছে আমার জন্যই:
বিপরীত গূহ্যদ্বারে বিপরীত শূল!

৪.
সে-ছবিও দেখেছিনু মায়ের জঠরে,
চোখে নয়—সারা গায়ে টক্কা টরে টরে
বেজেছিল আতঙ্কের পারা—
তৎক্ষণাৎ তোমার ইশারা!
তৎক্ষণাৎ রিরংসার জোনাকিরা মাথার ভিতরে,
তারাখচা আকাশের আরেক চেহারা...

৫.
বেরিয়ে এলেম বাইরে। ঈশ্বর, অবিনশ্বর শাপ,
আমাদের মধ্যে তুমি ইথারের মতো ফুলে আছো;
সব-আলো-বাঁকিয়ে-দেওয়া কাচও
এহেন অরাল নহে; এমন করাল নহে সাপ:
আমার চাঁদেরে তুমি শূন্যে ধর্ষিয়াছো,
তার খসমেরও আবরু লুণ্ঠিয়ো না, বাপ!

৬.
ভিড় ক’রে আসে জল, আন্ধারের গন্ধকের পানি,
দিগন্তের চক্রব্যূহ ব্যেপে তীব্র, অম্ল কলকলানি,
তারল্যের তেজাব-আক্রোশ—
আমারে শুষিয়া লহো, অয়ি শশীরানি,
চৌচির করো আরশিখানি,
ঝুরঝুর ঝরিয়া যাক পঞ্চকোণ আল্লাহ্-র আরশ।

জন্মদিনের ইন্তাজারে মরণ-জাড়ে কাঁপছে যে[-]মন

আমারে কে জানি কী দিবে, কে জানে কী দিবে,
তারই লাগি ঝড় গরজি উঠিছে ত্রিদিবে।
কত কাল গেল তারে ডাকি’-ডাকি’,
ডাল থেকে ডালে উড়ে ম’ল পাখি,
জন্মান্ধের কালো তিরটা কি
ষণ্ড-চক্ষু বিঁধিবে—
আমারে সে জানি কী দিবে, কে জানে কী দিবে।

আজিকে আমার জন্মপূর্ব রজনি,
আপনাত্মীয় বলিতে এনারা ক’জনই:
একজনা আছে পুরা অজ্ঞান,
দুসরার মুখে-কানে খালি গান,
তিসরা স্বজন কেবলই দেখান
নাঙ্গা শিশ্ন ও যোনি;
কী সে নজরানা দিবে আনজানা সজনি?

হাশরের মাঠে রড়ে এরস আর থ্যানাটস,
সমীপবর্তী সারা-গায়ে-চোখ আনারস,
মাঝারে বিরাজে আলোহিম ফিল্ম্
দু’-পাশে দু’-কাল, সে নিজে অসীম;
সারাটা স্পার্টা সমাধির হিম:
হেলেন-বিহীন মেনেলৌস—
জার্সি বদলি’ খ্যালে এরস আর থ্যানাটস।

জাগিয়া থাকহ, পেয়ারা ভাইয়োঁ, বহিনোঁ,
যের’ম আমিও মরিয়াও জিয়ে রহিনু—
অন্ধকারের বরফের চাপে
প্রত্যয় পশি’ প্রকৃতির খাপে
দীর্ঘশ্বাসে আর অভিশাপে
গঠিবে, ঘটাবে কোহিনুর!
কোনোদিনও যাহা কহি নাই, তাহা কহিনু।