কুকুরদের সামগান
যতই তাকিয়ে থাকো নির্ঘুম আঁধারে চোখ খোলা রেখে
যতই একাকী হাঁটো করুণ তারার আলোয় পথ দেখে দেখে
তবুও কোথায় লুকোবে বলো নোনাধরা দেয়ালের মতো বিবর্ণ বিষাদ?
মাঝ রাতে জমে ওঠা ঝড়ের নিনাদ
ছাপিয়ে চিৎকার করে ভয়ানক কুকুরের দল
এ কথা শুধায় আমাকে, আর চারপাশে ঘোরে অবিরল।
আমি হাসি, আর বলি, শুধু শোনো
ধরো তবে সামগান—মানে আছে কোনো!
একটা জীবন কেটে যেতে পারে
স্মৃতির ছাইভস্ম গায়ে মেখে মেখে
একটা প্রহর চলে যেতে পারে
ঘামে ভেজা গেঞ্জিটা খুলে পাশে রেখে।
আর যদি কেউ কিছুই জানতে না চায়
যদি কয়েকটা স্ফুলিঙ্গ জ্বলেই আবারও নিভে যায়,
তবু মহাকাল
ঘোরাবে নিস্পৃহ চাকা যেন বা মাতাল,
কে এলো কে গেল দ্যাখে না যে সে…
এই কথা বললাম ওদের, স্মিত হেসে হেসে।
অথবা কেউ কিছুই না শুধায় যদি
তবুও তো বয়ে চলে নদী নিরবধি,
এখানে কী চেয়েছিলে তুমি, কী তোমার মনে
ছিল বলো পাও নাই, তবু ক্ষণে ক্ষণে
মানুষেরই মতো হয়ে ওঠো এইসব ভেবে
কী এমন চাও, যা তা কেউ এনে দেবে?
হা বিষাদ, হা নির্জনতা!
পাঁজরে আঁধার পুরে ঢেকে রাখো তুচ্ছসব কথা
যতই শীর্ণ নদীর মতো এপাশ-ওপাশ করে ধরো ঘুমভাণ
যতই হাজারও জনের সঙ্গে চলো, ধরো ঐক্যতান,
নিষ্ঠুর ব্যাঙ্গের মতো শেষতক ছায়াসঙ্গী কায়া
অতঃপর এ জগৎ ছায়া আর মায়া!
এই সান্ত্বনা তবে শেষাবধি মহার্ঘ পাওয়া!
তবুও তো শেষতক দাঁড় টেনে যাওয়া।
এই তবে জানা হোক, যা-ই বা শুধাও এখন,
রাতের সাথীরা আমার, ঘিরে রাখো আমায় এমন!
অথবা কেউ কিছু না শুধাক
তবু তো বলতে পারো,
এমনিতে কিছু কথা, আবারো, আবারও,
ওদেরও ক্ষুরদাঁতে হাসির ঝিলিক
ওদেরও কালো চোখে খুনের ফিনিক
দেখি আর ভাবি,
বাদামের খোসা যেন, নেই কারো দাবি
কী করো বন্ধু তুমি, কী করো কী করো
এতটুকু কথা নেই, জানবার চাওয়া নেই,
শুধু পথ ছাড়ো! সরে যাও সরো।
জীবনের মহৎ অর্জন এই স্মিত হাসি
এই দেখো রোদ-ঝড়, এই জলে ভাসি।
মুখে কি বলতে হয়, বলা লাগে কোনো
আঁধারের ঝিঁঝিঁপোকা কী যে বলে শোনো...
তবুও তো তোমরা চেয়েছো জানতে,
অন্ধকার নগরীর থমথমে প্রান্তে।
তবুও তো তোমরা পথ আগলিয়ে
অন্নের বিকল্প কিছু নিলে তো বলিয়ে!
এই হাসি দেখে আর অশ্রুর জল,
বিস্ময়ে সমাহিত সারমেয় দল
হেঁটে যায় রাতের মিছিলে
থমথমে বিশ্ব নিথর নিখিলে।
রাতের রাস্তায় একা
এক পথিকের ছায়া যেন দূরে যায় দেখা।