গুড নাইট কবিতা, ফালতু কবি, গুড নাইট
যাপন
হয়তো কেউ ফাস্টফুডের দোকানের ব্যবসা করে। তার বাচ্চাগুলো ভালো স্কুলে পড়ে। আগোরায় বাজার করে এসে বাসায় ফিরে স্যান্ডো গেঞ্জি গায়ে দিয়ে দুধ-চায়ে মুড়ি ভিজিয়ে খায়। কারো-কারো বারান্দায় শুকাতে দেয়া হয় ভেজা লুঙ্গি। বৃষ্টি হলে সেই লুঙ্গি ভেজা বলে কেউ আর ঘরে নেয় না। বাতাসে বৃষ্টিতে লুঙ্গিটা ভিজতে থাকে। কোনো-কোনো শিশু জানে না তার বাবা কী করে, মা-ই বা কই যায় প্রতিদিন। সকাল-সন্ধ্যা ভাইবোনগুলো তাদের যাওয়া-আসা দ্যাখে। বাইরে কত রোদ থাকে মাঝে-মাঝে। ঘামে ভিজে ভ্যানে প্যাডেল চালাতে থাকে একজন মাঝবয়সী লোক। ভ্যানে করে কোনো মেস-বালকের মাল-সামান নিয়ে যান তিনি। অটোতে করে কোনো জেলা-শহরে গোপন প্রেমের বিয়ে করার জন্য আচমকা বোরখা-পরা অপ্রাপ্তবয়স্কা কোনো মেয়ে তার মাকে ফোন করে, অজানা কারণে মাফ চাইতে থাকে। কোনো প্রেমিক সিনেমা দেখতে-দেখতে নায়িকার-মতো-দেখতে কোনো মেয়ের জন্য পাগল হয়ে যায় আর-কোনো কারণ-ছাড়া। একজন মধ্যবয়স্ক নারী রান্না করতে-করতে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখে আঁচারের বয়াম উলটে গেছে। একজন বৃদ্ধ তার নাতনির জন্য যত্ন করে নিজের গাছের আম প্যাকেট করে কুরিয়ার সার্ভিসের অফিসে যায়। সন্ধ্যাবেলা সুর করে পড়া মুখস্থ করে বাচ্চারা কোনো-কোনো ঘরে। রাস্তা থেকে এখনো সেই পড়া শুনতে-শুনতে হেঁটে যায় কর্মজীবী কোনো নারী।
শ্রেণিশত্রু
আজকেও নেত্রকোণার বড়বাজারে ধান নিয়ে এসেছিল এক কৃষক
সবাই মিলে তার কাছ থেকে কম দামেই কিনেছে ধান
পেশিবহুল শরীর বেয়ে নেমে গেছে রক্ত-নিংড়ানো ঘাম
দিকে-দিকে হুংকার দিয়ে উঠছে পচে-গলে-যাওয়া মাতাল
মানুষদের কুকুরগুলো
বাজারে চলছে হরেক বেচাকেনা
দোকানে দোকানে আলোর সাইনবোর্ড
আতশবাজি-প্রেম লেনাদেনা
বিদ্যুতের খুঁটিযুক্ত রাস্তা থেকে নেমে যাওয়া আইল ধরে
আরো অনেক গভীরে সেই কৃষকের ঘর
সেদিকেই সে বাজার করে নিয়ে তারপর ফিরবে
পেছনে পড়ে থাকবে আগুন, মানুষ মরছে নীরবে।
ডানা
সে অনেককাল আগের কথা। তখন দেশে পঞ্চায়েত বিরোধী যুবক ছিল! কথা ছিল, ভাষা ছিল, কন্ঠস্বর ছিল। তারপর তারা চাকরি পেল। পুলিশ তাদের চাকরি দিল। বিয়ে হলো, বর-বধূর মিলন হল। রাত জেগে হলো নানাবিধ পার্টি। বাড়িতে বসাল বার, তাই বারে মদিনা নিয়ে অনেক আলাপও হলো সেই দেশে। তবে সেমিনারে এখনো তাদের একত্রে দেখা যায়, অদ্ভুত জুটি—কাক, চিল রান্না করে খায়। আশ্চর্য হলেও সত্য, কাক ও চিলেদের মৃত আত্মাগুলো তাদের নেকাব হয়ে যায়। ডেডবডিগুলো সোজা মঞ্চে, ময়ূরপঙ্খি নায়।
বৃষ্টি ২০১৭
আমিও সত্যি সত্যিই ছিলাম আর আছি।
তুমিও। আমরা কোনো নাই দুনিয়ায় থাকি না।
তুমিহীন ভাষায় আমি লিখে যাই তোমারই নাম
খাচ্ছে বাদাম-মালিকেরা দিচ্ছে না দাম
ঢাকার বাতাসে তোমার নিঃশ্বাস খুঁজছি
আকাশের দিকে তাকিয়ে হয়ে আছি আয়না
সবচেয়ে অন্ধরা নিজেদের দেখছে
সেই আয়নাতে সবচেয়ে বেশি
বধিরেরা চলে যাচ্ছে মার্কেটের আলোতে
আমার চোখ ছোট হতে-হতে
ছোট হতে হতে মেট্রোপলিটন-জাদু দ্যাখে না।
আমি তখন হেঁটে যাচ্ছিলাম
পুরুষরা সব অসহায়ের মতন ছাতা সামলায়
ভিজতে ভিজতে চলে গেলাম নিজস্ব বাসায়
একবার একটু ঘুমাব এই আশায়
আমি প্রতিদিন দরজা খুলি নিজের বাসায়।
গুড নাইট
গুড নাইট হে পৃথিবীবাসী গুডনাইট
গুড নাইট হে ভাসমান হাতিয়া গুড নাইট
গুড নাইট আধাপাকা প্রেম গুড নাইট
গুড নাইট কাঁথা-কম্বল, বিদেশি পুতুল, গুড নাইট
গুড নাইট গিলে ফেলা ব্যথা-কথা, গুড নাইট
গুড নাইট গল্প, গল্পের বই; গুড নাইট
গুড নাইট দুধ চা, সাদা সোনাপাতা, গুড নাইট
গুড নাইট কবিতা, ফালতু কবি, গুড নাইট