প্রগতির মতো হাত বাড়ানো ট্রাফিক-পুলিশ

  • শিবলী শাহেদ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অলঙ্করণ: কাজী যুবাইর মাহমুদ

অলঙ্করণ: কাজী যুবাইর মাহমুদ

১.

সন্ধ্যা হয়ে এলো অথচ কোনো প্যাসেঞ্জার নেই
রাস্তার প্রান্তমুখে দাঁড়িয়ে রিকশাচালক
ভাবছে—সারাদিনে আয় মাত্র দেড়শো টাকা
এ-দিয়ে কি চলবে পেট, সংসারের চাকা?
শার্টের এককোণা দিয়ে সে চোখ মোছে
তারপর আত্মবিশ্বাসের চেয়েও জোরালো শব্দে
ঘণ্টা বাজায়
যত জোরে ঘণ্টা বাজবে যেন ততই বেড়ে যাবে
আহার্য মিলে যাবার সম্ভাবনা।
রক্তকণিকা নিংড়ে অতঃপর সে আওয়াজ তোলে—
হই, যাইবো এগারো নাম্বার৷ নয় নাম্বার?
কেউ যায় না
কেউ যাবে না।
স্বপ্নবিভূতির আশায়
রিকশাচালক যতই এগোয়
ততই তাকে গ্রাস করে নেয়
অন্ধকারের আড়াল।
কেউ দেখেনি, কেবল নির্বিকার দাঁড়িয়ে
এই দৃশ্য দেখেছে দুটো ল্যাম্পপোস্ট
তিনটি ধূসর বেড়াল।

২.

বিজ্ঞাপন

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছে অজস্র রোগী
নিঃশ্বাস নিতে পারছে না।
পৃথিবীতে এত অক্সিজেন অথচ
এইটুকু অক্সিজেনের জন্য
তারা কেমন পেরেশান হয়ে আছে!
নিশ্চয়ই এমন দৃশ্যের পর
একজন মানুষ শূন্যবাদী হয়ে উঠতে পারে।
ওই তো রবিবারের প্রার্থনা শেষে
চার্চ থেকে বেরুচ্ছেন ফাদার নিকোভিয়া।
–ফাদার! আপনি বলতে পারেন মানুষের এত কষ্ট কেন?
ম্যাথিউ-এর সুসমাচারে এর উত্তর কি পাওয়া যাবে?
ফাদার আমার হাত ধরে
টেনে নিয়ে যান প্রগতির শেষ গলিতে।
–জানো তো বাছা সব প্রশ্নের উত্তর হয় না
তারচেÕ দেখো কিভাবে আমাদের কান্নাগুলো ঘনীভূত হয়।
আমি দেখি, লক্ষকোটি জলকণা
লবণাক্ত বিষাদে উড়ে উড়ে
এইবার দূরপাল্লার মেঘেদের সাথে
অপস্রিয়মাণ হয়
অতঃপর সমাধি থেকে সমুদ্র পর্যন্ত
ঝরে ঝরে পড়ে...

৩.

ওশো, আমার মন খারাপ
আমি একটি ভালো কাজ করতে চাই৷
আমাকে একটি ভালো কাজের কথা বলুন।
ওশো বললেন, কিছুমাত্র আগে মরে গেছে
এমন মানুষ খুঁজে বার করো,
মানুষটির পাশে বসে থাকা আত্মীয়ের পাশে দাঁড়াও
তার কাঁধে হাত রাখো।
আর বলো—প্রতিটি দুঃখই একদিন
কর্পূরের মতো উবে যাবে...
আমি এক মৃত মানুষ খুঁজে নিলাম।
তার আত্মীয়ের কাঁধে হাত রেখে বললাম—
প্রতিটি দুঃখই একদিন কর্পূরের মতো উবে যাবে।
আমার ভালো লাগল।
পালকের মতো শরীর নিয়ে
রাস্তায় বেরুতেই দেখি এক বৃদ্ধ
হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করছে।
দেখতে অবিকল হেরাক্লিটাসের মতো
কাছে যেতেই তিনি হেসে বললেন, নাও, এইটুকু হাওয়াই মিঠাই,
না খেয়ে বরং হাওয়ায় উড়িয়ে দাও।
আমি হাওয়ায় উড়িয়ে দিলাম আমার হাহাকার।

বিজ্ঞাপন

৪.

চলে যাচ্ছে চলমান দৃশ্যের মতো স্থবির—
ল্যাম্পপোস্ট, প্রগতির মতো হাত বাড়ানো
ট্রাফিক-পুলিশ।
চলে যাচ্ছে গাড়ি, গন্তব্য, রিকশার মিছিল।
ধাবমান, প্রবহমান তরঙ্গ-স্রোতে
ভেসে যায় সব।
কেবল
ক্যাফেতে বসে কারো পোর্ট্রেট—
কাগজে ধরে রাখার মতো ভালোলাগা
আমার সাথে সাথে থাকছে।

৫.

মন্দিরে কিসের ঘণ্টা বাজছে?
গির্জায় কে গাইছে গসপেল থেকে গান?
এশাÕর আজানে কি মুয়াজ্জিন বলছে, এসো কল্যাণের দিকে এসো?
পরিশ্রুত রাতের অববাহিকায়,
পৃথিবীর সমস্ত প্রার্থনা থেকে সহস্র জোনাকি
উড়ে উড়ে এইসব প্রশ্ন রাখছে।
তাই ভালো লাগছে।
আবেস্তাÕর পৃষ্ঠা থেকে বাষ্পীভূত হয়ে যাচ্ছে
পাখি ও প্রায়শ্চিত্ত।