বিদেশ

  • স্নিগ্ধা বাউল
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অলঙ্করণ: কাজী যুবাইর মাহমুদ

অলঙ্করণ: কাজী যুবাইর মাহমুদ

আজ ন’ বছর রাহেলা বেগমের সাথে সন্তানের দেখা নেই। অল্প বয়সে বিয়ে হলেও বিয়ের চৌদ্দ বছরের পর জন্ম একমাত্র সন্তানের। বড় আদর করে নাম রেখেছিলেন রাজা। দেখতে হয়েছিল একদম রাহেলা বেগমের বাবার মতো, যেমন গায়ের রঙ তেমনি উঁচু নাক। ছেলের নাক একটু বেশিই উঁচু ছিল। বাবার মৃত্যুর পরপরই সব ছেড়ে পাড়ি জমায় আমেরিকা। রাহেলা বেগমের কাছে যেটি বিদেশ। ওখানেই বিয়ে, নাতি-নাতনি। মাঝে মাঝেই রেইনবোর মতো ফোন আসে, একসময়ে আসত টেলিফোন। আবদার করেছেন অনেক—
বাবারে মাকে দেখতে ইচ্ছে করে না?
ও! মা করে।কিন্তু এত ব্যস্ততা!
আমার তো ব্যস্ততা নেই রে। কেবল তোরে দেখতে ইচ্ছে করে।

এরপর রাহেলা বেগমের দিন কাটে গৃহকর্মীর সাথে। ভিন্ন শ্রেণীর দুজন নিঃসঙ্গ মানুষ, এক মেরুতে খুলে যায় তাদের জীবনদর্শন। পরস্পরকে তারা আঁকড়ে থাকে কয়েকগুণ আন্তঃআণবিক সম্পর্কে। জীবন দেয়নি এবং নেয়নি যেন কিছুই তাদের কাছে বরং তারা উপলব্ধি করতে শেখে সঙ্গনিরোধের প্রতিটি সূর্যাস্তের সাথে নিজেদের অস্তিত্ব। তারা নিজস্ব জমিতে রোপণ করে দেয় মৃত্যুর সম্ভাব্য বীজ।

বিজ্ঞাপন

তবুও মোবাইল নাম্বার আর স্ক্রিনে ভেসে আসা জলীয়বাষ্পের মতো কয়েকটি মুখ রাহেলা বেগমের দিনগুলো যাচিয়ে নেয়। অপেক্ষায় থাকেন ছেলের ব্যস্ততা কমে আমেরিকার শহর থেকে নেমে আসবে উড়োজাহাজটি তার ছোট্ট মফস্বলি চিঠির খামে। যেখানে জড়িয়ে ধরতে চান প্রতিটি কোষ আর হাত পা সমেত সন্তানের শরীরটি।

বড় শহরের ব্যস্ত সন্তানের শরীরটি তখন ভয়াবহ ভাইরাসে আক্রান্ত। মায়ের চিরন্তন কোয়ারেন্টিন কাল অতিক্রম হবার আগেই ছেলে ঢলে পড়ে মৃত্যুর কোলে আর মা তখন পরিচারিকার সাথে গল্প করছেন—নতুন সন্তানের জন্মকালীন একই গল্প, সম্ভবত কয়েক শততমবারের মতো।