কনসার্ট ফর বাংলাদেশ'র জর্জ হ্যারিসন

  • ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ঐতিহাসিক কনসার্ট ফর বাংলাদেশ-এ জর্জ হ্যারিসন, ছবি: সংগৃহীত

ঐতিহাসিক কনসার্ট ফর বাংলাদেশ-এ জর্জ হ্যারিসন, ছবি: সংগৃহীত

বিংশ শতাব্দীর অত্যন্ত প্রতিভাবান একজন জনপ্রিয় গায়ক এবং গিটারিস্ট জর্জ হ্যারিসন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামের পক্ষে সাংস্কৃতিক তৎপরতা ও সামাজিক জনমত গঠনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তার নাম। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পন্ডিত রবি শংকরের অনুরোধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের ম্যাডিসন স্কয়ারে গার্ডেনে ১৯৭১ সালের ১ আগস্টে এক বেনিফিট সঙ্গীত অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। 'কনসার্ট ফর বাংলাদেশ' নামের সেই অনুষ্ঠানে সংগৃহীত ২ লাখ পঞ্চাশ হাজার মার্কিন ডলার বাংলাদেশের উদ্বাস্তুদের জন্য দেওয়া হয়েছিল এবং বাংলাদেশের পক্ষে তৈরি করা হয়েছিল আন্তর্জাতিক সমর্থন।

জর্জ হ্যারিসন ১৯৪৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারিতে ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০০১ সালের ২৯ নভেম্বর আমেরিকায় মারা যান।

বিজ্ঞাপন

জর্জ হ্যারিসন ছিলেন বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী। তবে তার বিচরণের ক্ষেত্রব্যাপ্ত ছিল সঙ্গীত পরিচালনা, রেকর্ড প্রযোজনা এবং চলচ্চিত্র প্রযোজনায়। বিখ্যাত ব্যান্ড সঙ্গীত দল 'দ্য বিটলস' এর চার সদস্যের একজন হিসেবেই তিনি বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। মূলত, লীড গিটারিস্ট হলেও বিটলসের প্রতিটি এলবামেই হ্যারিসনের নিজের রচিত ও সুর দেওয়া দু’একটি একক গান থাকতো যা তার প্রতিভার পরিচায়ক।

১৯৭১ সালে যখন বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলছিল, তখন জর্জ হ্যারিসন তার বন্ধু রবি শংকরের পরামর্শে নিউইয়র্কের বিখ্যাত ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেন প্রাঙ্গনে দাতব্য সঙ্গীতানুষ্ঠানের (কনসার্ট) আয়োজন করেন। তাতে জর্জ হ্যারিসন, রবি শংকর ছাড়াও গান পরিবেশন করেন বিশ্বখ্যাত গায়ক বব ডিলান, এরিক এবং আরও অনেকে। সঙ্গীতানুষ্ঠানে জর্জ হ্যারিসন তার নিজের লেখা বাংলাদেশ নামক গানটি পরিবেশন করেন। কনসার্টের টিকেট, সিডি ও ডিভিডি হতে প্রাপ্ত অর্থ বাংলাদেশ যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের জন্য ইউনিসেফ ফান্ডে জমা করা হয়।

১৯৬০ এর মাঝামাঝি সময় থেকে হ্যারিসন ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হন এবং আধ্যাত্মিক জগতের সঙ্গে সংযোগ গড়ে তুলেন। ১৯৬৬ সালে তিনি তার স্ত্রী প্যাঁটিকে নিয়ে ভারত ভ্রমণে আসেন। তিনি নিরামিষ খাবার ও প্রাচ্য জীবনধারার প্রতি আকৃষ্ট হন।

১৯৯৭ সালে হ্যারিসনের গলায় ক্যান্সার ধরা পড়ে। তখন তাকে রেডিওথেরাপি দেওয়া হয় যা সফল হিসেবে মনে করা হয়েছিলো। ২০০১ সালে তার ফুসফুস থেকে ক্যান্সার টিউমারটি অপসারণ করা হয়। আর ২০০১ সালে ২৯ নভেম্বর হ্যরিসন ৫৮ বছর বয়সে মেটাস্টাটিক নন-স্মল সেল লাং ক্যন্সারে মারা যান। হলিউড ফরএভার সিমেট্রিতে তাকে দাহ করা হয়। এরপর তার দেহভস্ম ভারতের কাশির নিকট গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতী নদীর ত্রিবেণী সঙ্গমে ছড়িয়ে দেয়া হয়। ভারতে হিন্দুরীতিতে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়।

হ্যারিসনের শেষ এলবাম ব্রেণয়াশড (Brainwashed) ২০০২ সালে তার দুই সন্তান শেষ করেন। এলবামটিতে ভগবত গীতা থেকে একটি উক্তি ছিল, যাতে বলা হয়েছে, 'There never was a time when you or I did not exist. Nor will there be any future when we shall cease to be.'