অজ্ঞাত
মতি সাহেবের মন খারাপ। অবশ্য মন না বলে মেজাজ বলাও ভালো। তার উকিল এসে বসে আছেন, তিনি একটু পর পর মতি সাহেবের দিকে তাকাচ্ছেন।
তাকে চা দেওয়া হয়েছে।
উনি খাচ্ছেন না।
মতি সাহেব ধমকের সুরে বললেন, “এই যে চা খাচ্ছেন না কেন?”
“চা খেতে ইচ্ছা হচ্ছে না।”
“আগে বললেই পারতেন।”
“আগে তো আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়নি, এলাম আর দিয়ে গেল।”
মতি সাহেব চুপ করে রইলেন। এই হলো উকিলদের বেয়াদবি। সব কথার উত্তর তাদের কাছে থাকবে।
মতি সাহেব গলা খাকারি দিয়ে বললেন, “আপনাকে বললাম আমার ভাইগ্নার মার্ডার কেসটা দেখেন। আপনি করলেনটা কী? কী রায় আসলো এটা?”
“আপনার ভাগ্নে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আগেই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়ে দিছে। দুদিনের রিমান্ড তার সহ্য হলো না। আমি আর কি করতাম?”
মতি সাহেব ভ্রু কুঁচকালেন।
উকিল বলে যেতে লাগলেন, “দেখেন আমি বলেছিলাম জজকে ম্যানেজ করেন। পেশকার আমার পরিচিত। কিছু টাকা খাওয়ালেই হতো।”
মতি সাহেব বিরক্ত হয়ে বললেন, “আপনি বরং চুপ করেন।”
ভাগ্নের জন্য টাকা খরচ করার মানেই হয় না, জন্ম থেকে তার স্বামীহারা বোনের সাথে থেকে এই বাড়ির অন্ন ধ্বংস করছে। তিনি চাননি ছেলেটা তার রাজনীতিতে জড়াক, পড়াশোনা করাতে চেয়েছেন, তারপর ভালো চাকরি পেলে মাসহ বিদায় দেবেন।
কিন্ত ক্ষমতার আশেপাশে থাকলে তার লিপ্সা তো পেয়ে বসবেই। নিজে থেকেই ক্যাডার হয়ে গড়ে উঠতে লাগল সে।
এই মার্ডার কেস ও সেই ক্ষমতার লড়াই। এক মেয়েকে বিয়ের আসর থেকে তুলে আনতে গিয়ে দুইজনকে কোপ দিয়েছে।
মেয়ে হলো আবার এসপির মেয়ে।
কেমন গাধা হলে এই কাজ করার সাহস হয়। তুই শালা থাকিস মামার বাড়িতে আশ্রিত, নাই পড়াশোনার বালাই।
এসপির ডাক্তার মেয়েকে তুলে আনার সাহস হয় কিভাবে?
মতি সাহেব মৃদুস্বরে বললেন, “এসপি তো ক্ষেপে আছে তাই না?”
“জ্বী, উনি আপনার এন্টি গ্রুপের সাথে হাত মিলিয়েছেন।”
“গতবছরও দশ লাখ টাকা দিলাম শালাকে।”
উকিল সাহেব এইবার আস্তে করে বললেন, “বেয়াদবি না নিলে একটা কথা বলি।”
“আপনি আবার কবে থেকে আদবের ধার ধারতে শুরু করলেন?”
উকিল একটু অপ্রস্তুত হলেন।
“তা জনাব, যা মানুষজনকে দেবেন একটু প্রমাণ রাখবেন। সময়-অসময়ে ভয় দেখাতে কাজে লাগে তো।”
“আপনার বুদ্ধি নিয়া চললে আমার আর বেঁচে থাকতে হবে না দেখছি। নিজের লোকজন পুলিশকে টাকা খাওয়াচ্ছে তা আমি প্রমাণ রাখব?”
“তা অবশ্য না।”
“আপনাকে আমি টাকা পয়সা দিয়ে রাখি, বলি যে কেস তো অনেক আসে, এদিক ওদিকে খবর রাখবেন। তাতে আমাদের অনেকের কুকর্মের প্রমাণ রাখতে সুবিধা হয়। তা তো কিছুই করেন না।”
উকিল সাহেব এইসব শুনে অভ্যস্ত, তিনি চুপ করে রইলেন।
মতি সাহেব বললেন, “কেস নিয়া কী করবেন এখন?”
উকিল সাহেব বললেন, “জনাব একটা সিগারেট।”
মতি সাহেব সিগারেটের প্যাকেট এগিয়ে দিলেন।
লাইটার এগিয়ে দিলেন।
উকিল সিগারেটে টান দিয়ে বললেন, “পাবলিক প্রসিকিউটরকে টাকা খাওয়ান।”
“শুধু টাকা খাওয়ানো? তাহলে আপনি আছেন কী করতে?”
“আমার কিছু করার নাই, কেস আপিল ডিভিশনে যাবে। নতুন করে কিছু বলারও নাই। জজ, উকিল সবার পিছনে ঢালেন। আমি কন্সিডার করতে পারি আমারে দিতে হবে না, আমি সবাইরে ম্যানেজ করে দেব।”
“তাইলে আপনি এসপিরেই তো একটু ম্যানেজ করতে পারেন।”
“উনি ম্যানেজ হবেন না, আপনার এন্টি গ্রুপ উনার কাছে ভালো ইস্যু পেয়েছে।”
“বাহ। কী ভাগ্য আমার।”
দুই.
মেয়েটার বয়স কত হবে? ২৫-২৬? না আরো বেশি। হালকা সোনালি একটা শাড়ি পরা, সিল্কি চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া, কানে কালো টব। চোখে হালকা কাজল।
মতি সাহেব একট ইতস্তত বোধ করলেন। সুন্দরী নারী নিয়ে তার খুব বেশি আগ্রহ নেই। এই সংযমী স্বভাবের কারণে জীবনে উপরে উঠতে তার বেশি বেগ পেতে হয়নি, তাকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টাও সফল হয়নি।
যুবক বয়সে এক অতিব সুন্দরী নারীকে তুলে এনেছেন, বিয়ে করেছেন, এই তার একমাত্র স্ক্যান্ডাল বলা চলে।
অবশ্য ডাকসাইটে রাজনৈতিক নেতারা মেয়ে তুলে বিয়ে করবে এইটাও স্ট্যাটাসের মধ্যেই পড়ে।
তবুও এই বয়সে এসে এই নারীকে দেখে তিনি একটু টলমল হলেন।
যথাসম্ভব নিজেকে সামলাতে চেষ্টা করলেন।
মেয়েটা রাজহংসীর মতো তার মখমলের সোফায় বসে আছে।
মতি সাহেব একটু দূরত্ব রেখে বসলেন অন্য সোফায়, সামনাসামনিও বসলেন না।
তারপর গলা খাকারি দিয়ে বললেন, “আপনার নাম?”
“রেশমী।”
“আগে পরে কিছু নাই?”
“ছদ্ম নামের আগে পরে আবার কী থাকবে?”
“জ্বী জ্বী সেটাও ঠিক।” মতি সাহেব বাধ্যগত ছেলের মতো মাথা নাড়লেন।
রেশমী এবার তার দিকে তাকাল।
মতি সাহেব ঢোক গিললেন। অস্থিরতা ঢাকতে সিগারেট ধরালেন।
ধোঁয়া ছেড়ে বললেন, “আপনাকে তো কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাই না?”
রেশমী মৃদু স্বরে বলল, “হ্যাঁ। কিন্ত একই সাথে তিনজনকে ফাঁদে ফেলা, আমার রেন্ট তো বেশি।”
মতি সাহেব আঘাতপ্রাপ্ত হলেন। জগতের সবচে সুন্দরী নারীর মুখে, আমার রেন্ট বেশি শুনতে ভালো লাগে না।
কত আর বেশি? এই দুনিয়ার সমস্ত কিছু যার পায়ে ঢেলে দিতে ইচ্ছা হয়...
মতি সাহেব স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। তিনি এসব কী ভাবছেন? ছি ছি।
রেশমী একজন উচ্চমূল্যের পতিতা ছাড়া কিছু নয়।
সে তার শরীর দিয়ে তার শত্রুপক্ষকে ফাঁদে ফেলবে চুক্তি করেছে।
সেখানে তিনি এসব কী ভাবছেন।
তার মায়ের মুখ ভেসে উঠল, তিনি সহজ সরল মহিলা ছিলেন।
তিনি বলতেন, “আরেকজনরে ফাদে ফেলবি না বেটা, একদিন নিজে পড়বি।”
তিনি বাধ্যগত সন্তান ছিলেন না। মায়ের কোনো কথাই শোনেননি, ফাঁদে কি কম ফেলেছেন মানুষকে?
হ্যাঁ, মন টলেছে অনেকবার, সামলেও নিয়েছেন।
ব্যাপার না।
রেশমী নীরবতা ভাঙল, “সিগারেটের আগুন নিভে গেছে।”
“হু?” মতি সাহেন বাস্তবে ফিরে এলেন।
“আপনার সিগারেটের আগুন নিভে গেছে।”
“ও হ্যাঁ হ্যাঁ, মতি সাহেব লজ্জিত বোধ করলেন। সিগারেটটা এশট্রেতে ফেলে দ্রুত স্বরে বললেন, “যত লাগে, যা লাগে, নিয়ে নিবেন। আমার এসিস্ট্যান্টকে বলে দেব।”
রেশমী মৃদু স্বরে বলল, “আচ্ছা।”
“কোনো কিছু চাইতে লজ্জিত বোধ করবেন না।”
“আপনি হয়তো ভুলে যাচ্ছেন আমার লজ্জা নাই।”
রেশমী রহস্যময় ভাবে হাসল।
মতি সাহেব আবারও ইতস্তত হলেন। ধরা পড়ে যাচ্ছেন কি?
উনি সহজ স্বরে বললেন, “একেবারে লজ্জাহীন হওয়া কারো পক্ষেই সম্ভব না।”
রেশমী উত্তর দিল না।
তিন.
ফোনের ওপাশ থেকে একটা গম্ভীর গলা শোনা গেল।
“হ্যালো। আমি মতিউর বলছিলাম।”
ওইপাশে নীরবতা। কতক্ষণ কাটল কে জানে? অবশ্য মতি সাহেব এই নীরবতা উপভোগ করছেন।
কিছু নীরবতা জয়ধ্বনির মতো মনে হয়।
“হ্যাঁ বলুন।”
“আশা করি আপনি এতক্ষণে সব জেনে গেছেন এসপি সাহেব।”
আবার নীরবতা।
“আপনাদের মতো হারামিদের টাকা দিয়ে হাতে রাখা যায় না। আপনারা খেয়ে দেয়ে ভুলে যান। না ভোলার জন্য এই ব্যবস্থা।”
ওইপাশ থেকে মৃদু স্বরে কী বলা হলো মতি সাহেব বুঝতে পারলেন না।
“এখন বলেন আপনি কেস উঠিয়ে নেবেন। এবং আমার কাছে এসে পা ধরে ক্ষমা চাইবেন।”
“জ্বী।”
“কাজটা আমি আমার ভাগ্নের জন্য করিনি, নিজের জন্যই করেছি, বুঝতে পেরেছেন?”
“জ্বী।”
“বাহ, এখন সব বুঝে ফেলছেন দেখছি। আগে ভাবতাম টাকা দিলে মানুষ সহজে বুঝে যায়, সেই দিন পার হয়েছে।”
নীরবতা।
মতি সাহেব ফোন রেখে দিলেন।
ঝামেলা মিটে গেছে, রেশমী অন্যদের হাতে আনার কাজও করে দেবে।
এখন তিনি নিশ্চিন্ত, সিগারেট ধরালেন।
চার.
রেশমী অবাক হয়ে তাকাল।
“আপনি বলছেন আপনি আমাকে ভালোবাসেন?”
“জ্বী।”
“এত সহজ ভালোবাসা?”
মতি সাহেব বিব্রত বোধ করলেন। পতিতার কাছ থেকে ভালোবাসার সংজ্ঞাও শুনতে হবে।
রেশমী তার দিকে কঠিন চোখে তাকাল।
“জ্বী হ্যাঁ, পতিতারা অনেক নকল ভালোবাসা দেখে বলেই আসলের সাথে পার্থক্য করতে পারে।”
মতি সাহেব চমকালেন, তিনি তো কিছু বলেননি। বুঝল কিভাবে এই মেয়ে।
তিনি একটু ভয় পেলেন। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, “তাহলে আরেকটু ভালোভাবে পরখ করে নাও। হয়তো ভুল হচ্ছে।”
রেশমী বলল, “আপনার ভিমরতি ধরেছে। আমি জানতাম আপনি সচ্চরিত্র মানুষ।”
“তুমি মানুষের চরিত্র খারাপ করে দাও, দাগ লাগিয়ে দাও, তাহলে কি একটু সাবধানে থাকতে পারতে না?”
মতি সাহেব হাসলেন।
রেশমী বিরক্ত হলো, “আমার সাবধানে থাকার কিছু নেই। সবার উচিত আমার থেকে সাবধানে থাকা।”
মতি সাহেব চমৎকৃত হলেন।
“তোমাকে ভালোবাসার অন্য কারণও আছে, তুমি বুদ্ধিমতী মেয়ে।”
“যদি ভালোই বাসতেন, বুঝতে পারতেন আমি বুদ্ধিমতী না।”
মতি সাহেব সিগারেট ধরালেন।
তারপর বললেন, “তুমি কি এই জীবন থেকে মুক্তি চাও না?”
রেশমী হাসল, তারপর বলল, “সিনেমার ডায়লগ আর দিয়েন না।”
মতি সাহেব বিব্রত হলেন।
“ঠিক আছে, তোমার বারোভাতারি জীবন আমার ভালো লাগে না বলেই উপকার করতে চেয়েছি।”
“আপনি একটাই উপকার করতে পারেন, সেটা হলো উপকার করতে না চাওয়া।”
মতি সাহেব হঠাৎ বললেন, “আচ্ছা, আমার তো মনে হয় আমার শত্রুরা তোমার খোঁজ পেয়ে গেছে। তুমি কার জন্য এই কাজ করলে। তারা কি বেশি টাকা সাধছে না?”
রেশমী রহস্যময় হাসি দিল আবার।
মতি সাহেব বিব্রত বোধ করলেন আবার।
“সুযোগ তো তোমার কাছেই আছে, নিচ্ছো না কেন। ধ্বংস করে দাও আমাকে।”
রেশমী বলল, “বেশ্যারা ভালোবাসা বুঝে না, তাই তারা ধ্বংস করতে জানে না। তারা শুধু ব্যবহৃত হয়।”
মতি সাহেব অনেকক্ষণ চুপ রইলেন।
রেশমী চলে গেল ধীরে ধীরে।
মতি সাহেব শুধু অবাক হয়ে ভাবলেন, একবার বিদায় নেবারও প্রয়োজন মনে করল না?
পাঁচ.
তারও অনেকদিন পর মতি সাহেব মারা গেলেন।
তার ব্যক্তিগত উকিল একটা উইল প্রকাশ করলেন।
সেখানে রেশমী নামক একজনের জন্য বেশ কিছু পরিমাণ সম্পত্তি রাখা আছে।
কিন্ত রেশমীর পূর্ণ পরিচয় নাই, নামও শুধু ‘রেশমী’ লেখা।
ঠিকানার জায়গায় লেখা, ‘ঢাকা।’
মতি সাহেবের ছেলে আবির খুব বিপদে পড়ল।
প্রায় ২ কোটি টাকার সম্পত্তি।
কাকে এসব দিয়ে যাওয়া হলো? এই রেশমী কে?
যদিও সে তার মায়ের কাছ থেকে উইলের ব্যাপারটা চেপে গেল। তিনি হাইপ্রেসারের রোগী। এই শক নিতে পারবেন না।
উকিলকে টাকা পয়সা খাইয়ে বিদায় করে দিল, উইলের কাগজটা ছিঁড়ে ফেলল। কেউ না জানলে জানিয়ে আপদ ডেকে আনার কাজ নেই।
দেখা যাবে একশো রেশমী হাজির হয়েছে, আসল রেশমীর খবর নাই।
যদিও তার আসল রেশমীকেও দেবার ইচ্ছা নেই, বাবার মুহূর্তের উত্তেজনার বলি তো পুরো পরিবারকে হতে দিতে পারে না।
তারও অনেকদিন পর বাবার পুরনো কাগজপত্র ঘাঁটতে গিয়ে একটা চিঠি নজরে এলো তার।
তখন তার ১৫ বছর বয়সী ছেলে পাশে বসে ছিল। সে ছেলেকে বলল, “বাইরে গিয়া বসো।”
ছেলে বলল, “কেন?”
“আরে যা বলছি।”
ধমক খেয়ে ছেলে ম্লান মুখে রুমের বাইরে চলে গেল। আবির দরজা বন্ধ করে দিল। সে জানে এই চিঠি কাকে লেখা—
প্রিয় রেশমী,
এই চিঠি কোনোদিন তোমার হাতে পড়বে না আমি জানি।
কিন্ত কেউ না কেউ পড়বে।
তুমি যাওয়ার পর তোমাকে আর খুঁজিনি, এসিস্ট্যান্ট দিয়ে তোমাকে ডাকিয়েও আনতে পারতাম, তাও বারবার এত লজ্জা লেগেছে।
তোমার আসল নামটাও জানি না। উইল করেছি একটা, তোমার শেষ জীবন সুখে কাটুক আমি চাই।
এই উইলের কথা কাউকে বলতে সাহস পাইনি। তোমাকেও না, ডেকে নিয়ে হয়তো বলাতেও পারতাম। আমি ভালো মানুষ না, জীবনে অনেক অন্যায় করেছি, এটাও হয়তো অন্যায়, নাকি ন্যায়।
তুমি ভালোবাসাটা বিশ্বাস করোনি, হয়তো ভালোবাসাও ছিল না, স্নেহ ছিল, মায়া ছিল।
আমার একটাই চাওয়া, যদিও অসম্ভব। তাও আমি চাই, এই উইল তোমার কাছে পৌঁছাক।
ছয়.
এই ঘটনার পর কী হলো। খুঁজলে তো ভগবানকেও পাওয়া যায়। কে এই রেশমী সে খোঁজ বের করাও অসম্ভব না। আবির চিঠিটা ছিঁড়ে ফেলল।
দরকার নেই তো, বাবার প্রেমিকাকে বাবার ভালোবাসার প্রমাণ দেবার দায় নেই তার।