সমান্তর

  • পাপিয়া জেরীন
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অলঙ্করণ শতাব্দী জাহিদ

অলঙ্করণ শতাব্দী জাহিদ

বাতাসে বারিন্দার দিকের কপাট ঠাস্ ঠাস্ কইরা একবার খুলতেছে আরেকবার বন্ধ হইতেছে। মনি উইঠা বসে। পাশে তারেক শোয়া, গভীর ঘুমে সে—তারপরও বুকের উঠানামা আর চোখের পাতা দেইখা বোঝা যায় যে স্বপ্নটা সে দেখতেছে সেইটা অস্বস্তিকর। মনি আস্তে তারেকের গায়ে হাত রাখে, অমনেই তারেক স্থির হয়া যায়। আহা! বেচারা ঘুমাইতেছে শিশুর মতো। মনি খাট থিকা সাবধানে নামে।তারেকরে না জাগানোই ভালো। গত দশ পনের দিন ধইরা রাতে একটুও ঘুমায় না সে। প্রায় একমাস ধইরা তার মনে হইতেছে কেউ তারে ফলো করে, এমনকি তার প্রত্যেকটা মুভমেন্ট কেউ একটা খাতার মইধ্যে টুইকা রাখতেছে। মনি এমন অদ্ভুত কথা জীবনেও শোনে নাই। গত পরশু রাতে তারেক স্বপ্নে দেখছে—একজন মানুষ হুবহু তার নিজের মতোই। সে নাকি তারেকরে বলছে, তোমার শেষদৃশ্যটা মর্মান্তিক, কিন্তু কেমনে মরবা তা জানি না। সিঁড়ি থিকা পইড়াও মরতে পারো, ঠাডা পইরাও মরতে পারো। তুমি কোনডা চাও?

মনির হাত পা ঠান্ডা হয়া আসে এইসব শোনার পর।
অথচ এই তারেক এমন ছিল না কোনোদিন। একটা সময় ছিল, সে পুরাটা কলাভবন জমায়া রাখত। ক্লাস থিকা বাইর হইয়াই মনি দেখত, তারেকরে ঘিরা মেয়েরা বইসা আছে। একের পর এক মেয়ে গিয়া তারেকের হাত ধরতেছে, আর তারেক সেই মেয়ের সম্পর্কে আজগুবি সব কথা বইলা যাইতেছে চোখ বন্ধ কইরা। মনির খুব রাগ হইত তখন। মনে হইত, মেয়েগো হাত ধরনের জন্য কত রকম ধান্দা করে ছেলেমানুষ। কিন্তু দুইদিন না যাইতেই মনি গিয়া দাঁড়ায় তারেকের পাশে :
— হাই তারেক ভাইয়া! আমি মনি, ৩৭ ব্যাচ। আমার হাতটা একটু দেইখা দেন না!
— আমি তো হাত দেখি না। আপনি আমার কব্জি বরাবর দুইহাত শক্ত করে ধরবেন। আমি আপনার বিষয়ে যা দেখতে পাব, তা বলব।আমি কিন্তু অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ আলাদা করতে পারি না। যেসব দৃশ্য আসে তাই বলি।
— অনেক শক্ত করে ধরা লাগব?
— হু, শরীরের সব শক্তি দিয়ে। এইতো!
মনি, আপনার স্বামী একজন লেখক। আপনি অন্ধকার সিঁড়ি দিয়ে তর তর করে উঠে যাচ্ছেন ছাদে। আপনার স্বামী ছাদে বসে কিছু লিখছে, আবার কলম দিয়ে কাটছে। মনি সাবধান! আপনি সন্তানসম্ভবা। আপনার প্রথম একটা মিসক্যারেজ হয়েছে। আপনি আবারও পড়ে যেতে পারেন। প্লিজ সাবধানে...
— আপনে কী বলেন এইসব! আমি অবিবাহিত। আজাইরা প্যাঁচালের জায়গা পান না?
— জানি না, মনি। এইসব মনে হলো আমার। আরেকটা বিষয়। খুবই আশ্চর্যের বিষয়! আপনার সাথে আমার বিয়ে।
— ধুর মিয়া। সবাইরে এইসব বলেন, না? মাইয়া পটানি?

বিজ্ঞাপন

মনির কথা শুইনা তারেক সেইদিন হা হয়া গেছিল। মনির স্পষ্ট মনে আছে ,ঐদিনও তারেকের চিকন নাকটা চিকচিক করতেছিল ঘামে। বিয়ার পরে মনি খেয়াল করল—শুধু নাক মুখ না, তারেকের সারাটা শরীর ঘামে। আর সেইটা ঘুমের মইধ্যেই বেশি।

চা খাওয়া দরকার। এই শরীর নিয়া অন্ধকার সিঁড়ি বাইতে ইচ্ছা করে না মনির, যদিও প্রত্যেকটা স্টেপ তারা গোণা। প্রায় একশো বছরের পুরানা বাড়ি, তার দাদা-শ্বশুরের আব্বার আমলের। অন্ধকার সিঁড়ির বাঁকের দেওয়ালে ছোট ছোট চিলমন্ রাখার খোপ। সন্ধ্যার আগেই চিমনী ঝকঝকা কইরা মুইছা বাত্তি দেওয়া হইত সেই খোপগুলিতে । মনি এ গল্প শুনছে আসমা খালার কাছে। আসমা খালা আসলে তারেকের দূর সম্পর্কের ফুপু, কিন্তু তারেক ছোটবেলা থিকা তারে খালা ডাকে। মনি দশমিনিট ধইরা দাঁড়ায়া আছে বারিন্দায়, আসমা খালারে আশেপাশে কোথাও দেখা যাইতেছে না। আকাশ কালো হইয়া রইছে, ঝড় উঠব মনে হয়। ঝড় উঠলে আবার আসমা খালা পাগল হয়া দৌড়ায়া আসব। জানালা দরজা আটকায়া ঘরের মইধ্যে বইসা দোয়াকালাম আর কান্দাকাটি শুরু কইরা দিব।একবার এমন ঘটনা, মনি তখন নতুন বউ। সিজন মতো ঝড়বাদলা। উঠান ভইরা বড় বড় আম পইড়া ভইরা যাইতেছে। মনি আম টোকাইতে বাইর হইব, অমনি আসমা খালার চিৎকার :
— নতুন বউ! কই যাও? আমি জানি কই যাও তুমি! ভুলেও ওদিকে যাইও না।
— খালা, কত্ত আম!
— বউ, এই বাড়িতে ঠাডা পইড়া জোড়া মানুষ মরছে। তোমার শউর-শাউরী। তুমি জানো হেই কথা?

মনি আসলেই জানত না, তারেক একবারও বলে নাই তারে। তবে তারেক বিজলী চমকাইলে ভয় পায় সেইটা সে জানে। একবার বৃষ্টির দিনে প্রান্তিকে বইসা আছিল তারা দুইজন। হঠাৎ আলোর ঝলকানিতে সে মাথা নিচা কইরা মনির পেটের কাছে আইসা জড়ায়ে ধরছিল। অদ্ভুত শিহরণ হইছিল মনির। তারেকরে তখন মনে হইতেছিল ছয় সাত বছরের বাচ্চা।

গল্পের এইখানে লেখা স্টপ কইরা শাহেদ বইসা আছে। গল্পটা বিয়োগান্তক, এইটা সহ্য করতে পারবে না মিলি। মিলি তার বউ, আর মিলির সমস্যা হইল—তার লেখক স্বামীর গল্প-উপন্যাসে হ্যাপি এন্ডিং থাকা লাগব। তা না হইলে পাণ্ডুলিপি, স্ক্রিপ্ট সব ছিঁড়া কুটিকুটি করা তার অভ্যাস। ভাগ্য ভালো সে জাইগা নাই, নইলে এতক্ষণে এই দুই পৃষ্ঠা লেখার সাথে সাথে ছোঁ মাইরা নিয়া যাইত। তারপর শুরু হইয়া যাইত নাচ। এইখানে এমন ক্যান, শুরুটা এমন হইলে ভালো হইত....ঘ্যান ঘ্যান। শাহেদ যতটা গল্প লিখছে, সবগুলিই এডিট কইরা নতুন প্লটে আনতে হইছে, তার একটাই কারণ হইল মিলি।

— শাহেদ, শুনছো! শাহেদ!
— ওহ্ মিলি। কী হইছে?
— আমারে পানি দাও।ওহ্! গলা শুকায়ে কাঠ হয়ে গেছে।
— কী হইছে বলো।
— খারাপ স্বপ্ন দেখছি। আমি এই বাড়িতে আর এক মুহূর্তও থাকব না। এটা একটা হন্টেড প্লেস।
— এত নির্জন সুন্দর বাড়ি কই পাবা তুমি? লেখালেখির জন্য এমন একটা জায়গা কত খুঁজছি জানো? আমি তো বাড়িটা কেনার কথা ভাবতেছি।
— তুমি থাইকো এখানে একা একা। ভূতের গল্প লেইখো।
— মিলি, মাই হরর কুইন! ভূতের গল্প তুমিই লেখো। আমি নতুন গল্পে হাত দিছি। কিন্তু একটা কথা, গল্পের নায়ক শেষদৃশ্যে মারা যাবে। কাহিনী এইটাই ডিমান্ড করে সোনা! প্লিজ আমার কথাটা শোনো।
— মানে? কী বলতে চাও তুমি শাহেদ! তোমার মনে নাই, তুমি প্রমিজ করছো আমারে! মনে নাই ‘ঘাত’ উপন্যাসের সময়ে আমার মিসক্যরেজ হইল! তুমি কী চাও আাসলে? আবারও এমন কিছু ঘটুক?
— ঐটা একটা কোইন্সিডেন্স, মিলি!
— কোনো কোইন্সিডেন্স না। আমি আবারও কনসিভ করছি। এতো বড়ো কোইন্সিড্যান্স আমার লাগবে না। দেখি কী লিখছো!
— এই নেও। ছিঁড়বা না প্লিজ। মাথা ঠান্ডা রাখো।
— বাহ্! নায়কের নাম দেখতেছি তারেক। ক্যান, আর নাম নাই?
— ইয়ে, নামে আপত্তি থাকলে চেঞ্জ করা যাবে, সমস্যা নাই। ও, ভালো কথা… মা তারেকরে দিয়া গাছের শফেদা পাঠাইছে। ও আসছিলো অাধঘণ্টা আগে।
— আসছিল মানে? তুমি ডাকো নাই ক্যান আমারে!
— আজব, তুমি ঘুমাইতেছিলা তখন। আমি তারপরও তারে বসতে বলছি। সে বলল পরে আসবে।তুমি নাকি তারে বলছো, বেত্থুন খাবা। সে কারওয়ানবাজারে যাবে বলল বেত্থুনের খোঁজে। যাক্, আমাদের বাচ্চা খুব লাকি, এমন একটা মামা পাইতেছে। তারেক ভাই তোমার আপন ভাই হইলে কী যে করত সেইটাই ভবতেছি।
— তোমার সমস্যা কী? তারেকরে কি আমি জীবনে অাপন ভাই ছাড়া আর কিছু ভাবছি? আমার বাপ তো তার নিজের বোনের ছেলেরে নিয়া আসছিল পালতে। সে তো আমাদের আপনই।
— ওকে বাদ দেও। লেখার বিষয়ে কথা বলো।
— না, লেখার বিষয়ে কথা হবে না। তারেকরে নিয়া সমস্যা কী তোমার? তোমারে আগেই বলছি, তারেক আমারে পাঁচ থিকা ছয়বার সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখ থিকা ফিরায়া আনছে।
— এইজন্যে তারে তাবিজ বানায়া রাখতে হবে? আমাদের হানিমুনেও সে উপস্থিত ছিল।
— অসম্ভব, সে যায় নাই। আমি জানি।
— আমি তারে দেখছি সী বীচে, মিলি! আমি অন্ধ না।ওকে এসব নিয়া কথা বলতে চাই না আমি। তুমি গল্পে ফোকাস করো।
— গল্পটার শুরুটা ভালো। মনে হইতেছে তারেক ও মনি এ বাসায়, আমাদের এই দোতলা রুমটাতেই আছে। গল্পের নায়িকা আমার মতোই প্রেগনেন্ট। গল্পের শুরুতে যদি লোকেশনটা বলে দিতা দারুণ হইত...
পুরান ঢাকার বানিয়ানগরে একটা বাড়ি, যার ওউনার থাকে কানাডায়। বাড়ির উঠানে তিনটা আমগাছ আর ঠিক মাঝখানে বিশাল এক বান্দর লাঠি গাছ। পলকা হাওয়ায় হলুদ ফুলের পাপড়ি উইড়া আসে দোতালার বারান্দায়...
— বাহ্! সুন্দর! তুমিই লেখো মিলি। ভালো হইতেছে।

মিলি খুব হাসতেছে। শাহেদ অবাক হইয়া তাকায়ে আছে মিলির দিকে। হঠাৎ অচেনা লাগতেছে মিলিরে, সে তো এত হাসে না! হাসতে হাসতে খাটে একদম শুয়া পড়ল সে। শরীরে দুলুনী আর চোখে পানি। শাহেদ বোকা বোকা একটা হাসি দিয়া ভাবতেছে, এমন হাসির কী কারণ হইতে পারে!

রাত তিনটা চল্লিশ। শাহেদ টেবিলে বইসা লিখতেছে। হঠাৎ মনে হইল তার পিঠের উপর কেউ নিঃশ্বাস ফেলতেছে। মিলি খাটে শোয়া বেঘোর ঘুমে। শাহেদ ভালো কইরা জানে, তার পেছনে কেউ দাঁড়ায়া নাই। তবু সে একবার পেছনে তাকায়। কেউ না, সব মনের ভুল। সে লিখতে শুরু করে।

তারেকরে ট্রাঙ্কুয়ালাইজার দিয়া ঘুম পাড়ায়া রাখা হইছে। মনির খালু হেদায়েতউল্লাহ গম্ভীর ভঙ্গিতে কথা বইলা যাইতেছে। উনি একজন সাইক্রিয়াটিস্ট।।
— মা মনি, একদম টেনশন করবা না। সব ঠিক হয়ে যাবে। পর্যাপ্ত ঘুম দরকার ওর।
— খালুজান, তারেক কি সিজোফ্রেনিক?
— না রে, মা। তারেক কিশোর বয়সে তার বাবা-মা দুইজনকে হারায়। তাদের মৃত্যুটাও খুব প্যথেটিক ছিল। দাদা ও ফুপুর কাছে মানুষ হয়েছে সে। তার ফুপু একজন কুসংস্কারে আচ্ছন্ন মহিলা, তারেকের ছোট বেলাটা সে স্পয়েল করেছে ভয় দেখায়ে দেখায়ে। এটা বিষয় না, মা। তারেকের ভেতরে মৃত্যুভয়ের শিকড় ছিল আগে থেকেই। দাদার মৃত্যুর পর সে হোস্টেলে হোস্টেলে ছিল বেশি। এ বাড়িতে থাকা হয়েছে কম। কিন্তু বিয়ের পর তোমরা যখন এ বাড়িতে আসলে ওর মৃত্যুভয়টা আবারও... বুঝলে তো?
— এখন কী করা যায়! কী করতে পারি আমি?
— সবচে ভালো হয়, তোমরা আপাতত অন্য কোথাও শিফট্ করো। দুঃসহ স্মৃতি মানুষকে অনেকভাবে তাড়িত করে, মা! ভূতের ভয়ের চেয়েও এটি মারাত্মক।
— কিন্তু, খালুজান... এত সুন্দর বাড়ি। আমি এ বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও যাওয়ার কথা ভাবতেই পারি না।
— আচ্ছা, আপাতত তুমি টেনশন কমাও। নিজের ও শিশুটার কথাও তো ভাবতে হবে।
— জ্বী জ্বী।
— এইবার আমি যাই মা, কোনো সমস্যা হলে আমাকে কল করো।
— জ্বী খালুজান।

সকাল নয়টা। তারেক ঘুম থেকে উইঠা নাস্তা করতেছে। টোস্টেড ব্রেড গলায় আটকায়ে গেছে একবার। মনি যত্ন কইরা ওর মুখে স্যুপ তুইলা দিতেছে। তারেকরে খুব চিন্তিত মনে হইতেছে...

— মনি, এইটা কোনো রিয়েল ওয়ার্ল্ড না। আমরা একচুয়েলি একটা গল্পের দুইটা চরিত্র। মজার বিষয় হইল একজন গল্পকার আমাদের নিয়া এই গল্পটা লিখতেছে ঠিক এই বাড়িতে বইসা।
— কী বলো এইসব! মাথা ঠিক আছে?
— একদম ঠিক। গল্পকার চাইতেছে গল্পের নায়ক, মানে আমাকে মাইরা ফেলতে। কিন্তু তার বউ আবার সেইটা চায় না। এই বাড়িতে দুইটা প্যরালাল জোন তৈরি হইছে। সবচেয়ে মজার বিষয় হইল, এই সমান্তরে তুমি আর লেখকের বউ কনস্ট্যান্ট মোডে। তুমি কিংবা সেই মহিলাই পারো আমারে বাঁচাইতে।
— তারেক, চুপ করো তুমি। আমরা এক সপ্তাহের মইধ্যে এই বাড়ি ছাইড়া চইলা যাব।
— আমরা জীবনেও এই বাড়ি ছাইড়া যাইতে পারব না। আমরা আটকা পইড়া গেছি মনি। আমরা এই গল্পে বন্দি। এই যে জানালা দিয়া আকাশ দেখতেছো... এর বাইরে আমাদের জন্য কিছু নাই।
— আর আমার খালুজান যে আইসা তোমারে চিকিৎসা দিয়া গেল, সেইটা কী। কোনখান থিকা আসলো সে? আজাইরা কথা বলবা না।
— গল্পের প্রয়োজনেই খালুজানকে আনা হইছে।
— হু,আজাইরা।
— মনি, আমারে মেরে ফেলবে সে। তুমি বাঁচাও প্লিজ। তুমি পারবা, আমি জানি!

মনি তারেকরে বুকে চাইপা ধরে। সে কী করবে বুঝতে পারে না।

...এইটুক লেখার পর শাহেদের চোখ ঘুমে জড়ায়া আসতেছে। তার চোখের পাতা পাথরের মতো ভার হয়া আসতেছে। লেখা বন্ধ করে সে। খাটে গিয়া শরীর মেইলা দিবে, এমন সময় মিলি চিৎকার দিয়া ওঠে :
— কে আপনি? আপনি আমার বিছানায় কী করেন? একদম কাছে আসবেন না।.... শাহেদ! শাহেদ!
— মিলি! কী হইছে তোমার? মিলি।

অাতঙ্কে মিলি খাট থিকা ধপ কইরা নামে। সিঁড়ি দিয়া নামতে যাবে এমন সময় জড়ায়া ধরে শাহেদ। মিলি শাহেদরে ঝটকা মাইরা ফালায়া সিঁড়ি দিয়া নামতে নামতে দেখে, শেষ ধাপে শাহেদ বইসা আছে একটা মেয়েরে কোলে নিয়া, মেয়েটার মুখ দেখা যাইতেছে না। মিলি দেখে মেয়েটার শরীরের নিচের অংশ রক্তে ভাইসা যাইতেছে। মিলি প্রচণ্ড ব্যথায় সিঁড়িতে বইসা পড়ে।সে অবাক হয়া চাইয়া দেখে, দুইটা শাহেদ সিঁড়ির দুইপ্রান্তে হাউমাউ কইরা কানতেছে।
— মিলি! মিলি! কী হইছে তোমার। তুমি দৌড় দিলা কী মনে কইরা?
— শাহেদ, আমার কী হইছে? আমি উল্টা পাল্টা দেখতেছি। ঐটা স্বপ্ন ছিল কিনা জানি না।
— আমারে বলো! কী হইছে?
— একটা অপরিচিত লোক আমার খাটে বইসা ছিল।আমাকে জড়ায়া ধরতে চেষ্টা করতেছিল।
— আরে বোকা! আমিই ছিলাম ঐটা।
— উহ্ শাহেদ! প্রচণ্ড ব্যথা আমার। তুমি প্লিজ আম্মারে ফোন দেও। আমারে হসপিটালে নিয়া চলো।

ভোরবেলা মিলি একটা পুত্রসন্তান জন্ম দেয়। বাচ্চাটা মাত্র আটাইশ সপ্তাহের। ওর ফুসফুসে একটু জটিলতা, এইজন্য ইনকিউবেটরে রাখা হইছে। ডাক্তার বলছে ভয়ের কিছু নাই, জাস্ট কয়েকটা দিন অবর্জারভেশনে রাখা... এই আরকি।

(আট বছর পর একদিন)
বানিয়া নগর, কাঠের পোল লেনের বাড়িটা শাহেদ খুব অল্প দামে কিনে নিছে। এটারে এখন আর ভূতুইড়া বাড়ি মনে হয় না। শাহেদ ও মিলির আজকে বিয়ে-দিবস। ওদের একমাত্র ছেলে মনন.... তার মা-বাবার পক্ষ থেকে কেক কাটতেছে। বাইরে ভীষণ বৃষ্টি। শাহেদ আর মিলি ছাদে যাবে, বৃষ্টিতে ভিজবে। মননের খুব ইচ্ছা করতেছে তাদের সাথে ভিজতে কিন্তু মিলি কিছুতেই রাজি হইতেছে না।