চিরবিদায়, সাংবাদিক ও উদ্যোক্তা বি ডি মুখার্জী

  • সৈকত রুশদী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

চৌকশ ব্যক্তিত্ব। ইংরেজি মাধ্যমের তুখোড় সাংবাদিক। দুর্দান্ত ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়। সফল ব্যবসায়ী।

বিজ্ঞাপন

সর্বোপরি, প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর এক মানুষ। যাঁর সান্নিধ্য ও স্মিত হাসি মুখ মন ভালো করে দেয় অন্যদের।

তিনি বুদ্ধ দেব মুখোপাধ্যায়। অবশ্য এই নামে কেউ চিনবে না তাঁকে। খ্যাত ছিলেন বি ডি মুখার্জী নামে।

বিজ্ঞাপন

দীর্ঘদিন রোগভোগের পর জাতীয় প্রেস ক্লাবের স্থায়ী সদস্য বি ডি মুখার্জী বছরের শেষ দিনে আজ (৩১ ডিসেম্বর ২০২৪) পাড়ি জমিয়েছেন অনন্তলোকে। ঢাকায়।

অধুনালুপ্ত ইংরেজি দৈনিক 'দ্য বাংলাদেশ অবজারভার'-এর সাবেক জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এবং চা বাগান ব্যবসায়ী ছিলেন বি ডি মুখার্জী।

পারিবারিক সূত্রে পাওয়া হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুরে অবস্থিত বৈকুণ্ঠপুর চা বাগানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন তিনি।

বন্ধু কবি হেলাল হাফিজের বিদায়ের (১৩ ডিসেম্বর ২০২৪) দুই সপ্তাহের মাথায় তিনিও চিরবিদায় নিলেন। তিনিও অকৃতদার ছিলেন।

অত্যন্ত স্নেহশীল বি ডি মুখার্জী আমার অত্যন্ত প্রিয়জন। তিনি আমাকে অনুজ জ্ঞান করতেন।

১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে যখন সাংবাদিকতায় আমার হাতেখড়ি, সেই সময় থেকে তরুণ আমাকে যাঁরা সার্বক্ষণিক উৎসাহ ও সাহস যুগিয়েছেন, নানাভাবে প্রশ্রয় দিয়েছেন, নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে অভিভাবক হিসেবে আগলে রেখেছেন, বি ডি মুখার্জী তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য।

জ্যেষ্ঠ ক্রীড়া সাংবাদিক মুহম্মদ কামরুজ্জামান, বি ডি মুখার্জী ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আলমগীর হোসেন সাংবাদিকতায় আমার অলিখিত মেন্টর।

আর সাহিত্য প্রচেষ্টায় কবি আহসান হাবীব, কবি আল-মুজাহিদী ও কবি হেলাল হাফিজ।

সেই সময়ে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী। মুহসীন হলে থাকি। শুরুতে মাসে পাঁচশো টাকা বেতনের খণ্ডকালীন ক্রীড়া সাংবাদিক।

কাজের জন্য ঢাকা স্টেডিয়াম ও সংলগ্ন ক্রীড়াঙ্গন সহ নানা স্থানে যাতায়াতের ফাঁকে বিশ্রাম নিতে ও দুপুরের খাবার খেতে চলে আসতাম জাতীয় প্রেস ক্লাবে। সময় কাটাতাম ক্লাবের গ্রন্থাগারে।

অল্প আয়ের আমি স্বল্প মূল্যে স্বাস্থ্যকর খাবারের জন্য কর্মক্ষেত্রের নিকটবর্তী জাতীয় প্রেস ক্লাবের ক্যাফেতে গিয়ে বসতাম। কিন্তু প্রেস ক্লাবের নিয়ম হলো সদস্য ছাড়া কেউ খাবারের নির্দেশ দিতে পারবে না।

প্রেস ক্লাবের সেই সময়ের নির্বাহী পর্ষদের কর্মকর্তাদের ভ্রুকুটিকে পাত্তা না দিয়ে আমাকে নিজের অতিথি হিসেবে স্থায়ীভাবে ঘোষণা করে দিয়েছিলেন বি ডি মুখার্জী ও কবি হেলাল হাফিজ।

সেই সুযোগটি সেকালে আমার যে কতো বড় উপকার করেছিল, তা' বলে ও লিখে বোঝানো যাবে না।

আমার অগ্রজপ্রতীম ও অভিভাবকসম এই দুই সাংবাদিকই গত হলেন এই ডিসেম্বর মাসে! মাত্র আঠারো দিনের ব্যবধানে।

ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান বি ডি মুখার্জী বাল্যকালে দার্জিলিং-এ কনভেন্ট স্কুলে ইংরেজি মাধ্যমে লেখাপড়ার কারণে ইংরেজি ভাষায় তাঁর দখল ছিল ঈর্ষণীয়।

সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়ন বি ডি মুখার্জী অসাধারণ খেলোয়াড় ছিলেন।

১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে দিল্লিতে এশিয়ান গেমস-এর সংবাদ কাভার করতে যাওয়ার জন্য সকল প্রস্তুতি সত্ত্বেও স্বৈরশাসক এরশাদের নির্দেশে আমার কর্মস্থল 'দৈনিক দেশ'-এর মালিক ও প্রকাশক মাইদুল ইসলাম মুকুল গ্রেফতার হয়ে যাওয়াতে আমি আর যেতে পারিনি।

দিল্লি ঘুরে আসা কয়েকজন সাংবাদিক আমার জন্য স্যুভেনীর উপহার এনেছিলেন। বি ডি মুখার্জীও এনেছিলেন একটি অসাধারণ উপহার।

১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে আমি দেশে ফিরে তাঁকে ব্রিটেন থেকে আনা একটি বিশেষ ধরণের গ্যাস লাইটার উপহার দিলে ধূমপায়ী বি ডি দা ভীষণ খুশী হয়েছিলেন।

প্রয়াত বি ডি মুখার্জীর বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করছি।

টরন্টো

৩১ ডিসেম্বর ২০২৪