আল মাহমুদকে স্থানীয়রা ‘পিয়ারু মিয়া’ বলে ডাকতেন

  • আল মামুন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপেেন্ডন্ট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

কবি আল মাহমুদ / ছবি: সংগৃহীত

কবি আল মাহমুদ / ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ। শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১টা ৫ মিনিটে রাজধানীর ইবনে সিনা হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই মৌড়াইল মহল্লার মোল্লাবাড়িতে জন্ম নেওয়া আল মাহমুদ দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে ছিলেন সবার বড়। স্থানীয়রা তাকে পিয়ারু মিয়া বলে ডাকতেন।

বিজ্ঞাপন

পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকার কারণে মাঝে-মধ্যে অল্প সময়ের জন্য পৈত্রিক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসতেন তিনি। তবে বছর খানেক আগে থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসা-যাওয়া কমিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুর খবরে শোক নেমেছে তার প্রিয় জন্মভূমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। মরদেহ যেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সমাহিত করা হয়, সেটাই চাইছেন তার শুভাকাঙ্ক্ষিরা।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Feb/16/1550316217410.jpg

কবি আল মাহমুদ সম্পর্কে ভাষা সৈনিক মুহাম্মদ মুসা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় আল মাহমুদ স্বাধীন বাংলা পররাষ্ট্র দফতরে চাকরি করতেন। কাবলি বোন নামে একটি বইয়ে লেখার জন্য তাঁকে জেলে পাঠানো হয়। পরে বঙ্গবন্ধু তাকে জেল থেকে মুক্ত করে শিল্পকলা একাডেমিতে প্রকাশনা পরিচালকের দায়িত্ব দেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘তাঁর ছোট ভাই মীর ফরহাদ হোসেন মারা গেছেন আরও আগেই। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কবি আল মাহমুদের পৈতৃক ভিটা আছে কিন্তু নিজের ঘর নেই। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যখন আসতেন, উঠতেন ছোট ভাইয়ের বাসায়।’

কবির আপন ভাতিজা মীর রব্বান হোসেন (রবিন) বলেন, ‘স্থানীয়রা কাকাকে পিয়ারু মিয়া বলে ডাকতেন। তিনি মাঝে মাঝে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আসলেও নিজ পৈতৃক ভিটাতে থাকেননি প্রায় এক যুগেরও বেশি সময়। আর অসুস্থতার কারণে গত এক বছর যাবত তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসেননি। কাকার মৃত্যুতে স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষিরা চান তাঁর মরদেহ নিয়ে এসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কবর দিতে। কিন্তু ঢাকার বুদ্ধিজীবীরাও চাইছেন ঢাকায় কবর দিতে।’

তিনি বলেন, ‘কাকার পৈতৃক ভিটায় আগের দিনের একটি চৌচালা ঘর ছিল। যখন উনি আসতেন ওই ঘরে অবস্থান করতেন। সেখানে ঘরটি ভেঙে এখন ভবন করা হয়েছে। এতে তিনি মনে অনেক কষ্ট পেয়েছেন। এরপর থেকেই কাক ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসা কমিয়ে দিয়েছিলেন।’

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Feb/16/1550316233917.jpg

রবিন বলেন, ‘নিজ বাড়িতে যখন আসতেন তখন তার ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের ভিড় লেগে থাকত। তাদের সঙ্গে গল্প করে অনেক সময় কাটাতেন। দিনে বেশির ভাগ সময় বসে থাকতেন বাড়ির সামনের পুকুর ঘাটে। অনেক সময় বড়শি দিয়ে মাছও শিকার করতেন। যখন তার ইচ্ছে হয়েছে চলে যেতেন তিতাস নদীর পাড়ে, সেখানে গিয়ে তিনি লেখালেখি করতেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘মুরব্বিদের মুখে শুনেছি, কাকা অনেক সময় একা একা চলে যেতেন শহরের শিমরাইলকান্দি শ্বশানে। সেখানে বসে লেখালেখি করতেন। শ্বশানে যাওয়ার জন্য বড়রা পিয়ার কাকাকে অনেক বকাঝকা করত।’

কবি আল মাহমুদ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭৪ সালে গণকণ্ঠের সম্পাদক থাকাকালে কারাবরণ করেন। ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরিচালক পদ থেকে অবসর নেন তিনি। সাহিত্যকর্মের জন্য আল মাহমুদ একুশে পদক, বাংলা একাডেমিসহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন।

 https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Feb/16/1550316399620.jpg

কবি আল মাহমুদের রচনার মধ্যে রয়েছে- কাব্যগ্রন্থ লোক লোকান্তর, কালের কলস, সোনালী কাবিন, মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো, অদৃষ্টবাদীদের রান্নাবান্না, বখতিয়ারের ঘোড়া, একচক্ষু হরিণ, দোয়েল ও দয়িতা, দ্বিতীয় ভাঙ্গন, নদীর ভিতরে নদী, না কোনো শূন্যতা মানি না, বিরামপুরের যাত্রী, বারুদগন্ধি মানুষের দেশ, সেলাই করা মুখ, তোমার রক্তে তোমার গন্ধ ইত্যাদি।

কবির সাড়া জাগানো উপন্যাসগুলো হলো- কাবিলের বোন, পানকৌড়ির রক্ত, উপমহাদেশ, ডাহুকি, যেভাবে বেড়ে উঠি, আগুনের মেয়ে, যমুনাবতী, চেহারার চতুরঙ্গ, যে পারো ভুলিয়ে দাও, ধীরে খাও অজগরী ইত্যাদি।