নজরুলের গানের সুর বিকৃতি: প্রতিবাদে সরব বাংলাদেশের শিল্পীরা
বাংলাদেশের জাতীয় কবি ও অবিভক্ত পরাধীন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ‘তূর্যবাদক’ কাজী নজরুল ইসলামের অমর সৃষ্টি জাগরণী সঙ্গীত ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ এর সুর বিকৃতির অভিযোগে অস্কারজয়ী সঙ্গীত পরিচালক ও সুরকার এ আর রহমানের বিরুদ্ধে নিন্দা ও প্রতিবাদ চলছে বাংলাদেশ ও ভারতের সর্বত্র।
বলিউড পরিচালক রাজা কৃষ্ণ মেননের 'পিপ্পা' সিনেমায় অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের 'কারার ঐ লৌহ কপাট' গানটির বিকৃতির খবর ভারতীয় গণমাধ্যমে ও স্যোশাল মিডিয়ায় আসার পর থেকেই বাংলাদেশের নজরুলপ্রেমীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। এবার এই অপকর্মের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে ইউটিউবসহ সকল প্রচার মাধ্যম থেকে বিকৃত সুরে করা গানটি অপসারণের দাবি জানালেন বাংলাদেশ নজরুলসংগীত সংস্থা।
সংবাদ সম্মেলনে কবির নাতনি মিষ্টি কাজী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে জাতীয় কবির গানের সুর বিকৃতির ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ দাবি করেন। নজরুল সঙ্গীতের অগ্রগণ্য শিল্পীরা এসময় জানান, বাংলাদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ঢাকার ভারতীয় দূতাবাসে প্রতিবাদ জানাতে উদ্যোগ নেবেন তারা।
শনিবার বিকেলে ঢাকার নজরুল ইনস্টিটিউটের ঐতিহাসিক কবি ভবনে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও নজরুলসংগীত সংস্থার সভাপতি খায়রুল আনাম শাকিল। লিখিত বক্তব্যে খায়রুল আনাম শাকিল বলেন, ‘জাতীয় কবি নজরুলের সৃষ্টিকর্মের একটি প্রধান অংশ সঙ্গীত যাতে তাঁর অবদান মৌলিক ও অনন্য। এটি বাংলা সঙ্গীতের বিশেষ ধারা হিসেবে ‘নজরুল-সঙ্গীত’ নামে প্রতিষ্ঠিত ও চর্চিত।’
ইতিহাসে আচড় দেওয়ার ধৃষ্টতা দেখালেন এ আর রহমান!
তিনি উল্লেখ করেন, ‘সম্প্রতি ভারতের জিটিভির প্রযোজনায় এ আর রহমান ও সঙ্গীয়দের অংশগ্রহণে নজরুলের একটি বিখ্যাত ও জনপ্রিয় গান ‘কার ঐ লৌহ কপাট’ নতুনভাবে একটি বিকৃত সুরে প্রযোজনা করে ইউটিউবে আপলোড করা হয়েছে। এই গানটি নজরুলের ‘ভাঙার গান’ গ্রন্থে গ্রন্থিত ও নজরুল সুরারোপিত গান যা ১৯৪৯ সালে গিরীন চক্রবর্তীর কণ্ঠে রেকর্ডে প্রকাশিত হয়েছিল। এই গানটি অবিকৃত সুরে বিভিন্ন চলচ্চিত্রেও ব্যবহৃত হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামে মুক্তিসংগ্রামী ও যোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।’
শাকিল অভিযোগ করে বলেন, ‘এই গানটির নজরুল সুরারোপিত আদি রেকর্ডটির প্রাপ্যতা সত্ত্বেও বিকৃত সুরে এর পরিবেশনা কেবল অন্যায় ও বেআইনীই নয়, নজরুল সৃষ্টির প্রতিও অবজ্ঞা প্রদর্শনজনিত কারণে নিতান্ত ঘৃণ্য ও হীন অপকর্ম।’
বিকৃত সুরে করা নজরুলের গানটি দ্রুত ইউটিউব থেকে সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে খায়রুল আনাম শাকিল বলেন, ‘নজরুল সঙ্গীত শুধু বাঙালি জাতির নয় বরং মানবজাতির সম্পদ। একে বিকৃত করার অপরাধে কবি নজরুল ইনষ্টিটিউট এ আর রহমানসহ তার সঙ্গীয় অন্য সকল অপকৌশলীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ নজরুল সঙ্গীত সংস্থা ও সকল শিল্পী সমাজের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং সকল ইউটিউব থেকে তা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সংগীতশিল্পী শাহিন সামাদ, জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলিন পরিষদের সহসভাপতি বুলবুল ইসলাম, নজরুল সংগীতশিল্পী সালাউদ্দিন আহমেদ, লীনা তাপসী খান, ইয়াসমীন মুস্তারী, সুজিত মুস্তাফা, নজরুল গবেষক রাশেদুল ইসলাম ও মাহবুবুল হক।