দুবাইতে কাব্যছবির দৃশ্য ও পাঠ উন্মোচন...

  • নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

দুবাইতে কাব্যছবির দৃশ্য ও পাঠ উন্মোচন...

দুবাইতে কাব্যছবির দৃশ্য ও পাঠ উন্মোচন...

শারজাহের বঙ্গবন্ধু হলে আরবান রিডার্স ও বায়ান্ন টেলিভিশনের উদ্যোগে গত ২১ মে শনিবার সন্ধ্যায় প্রকাশিত হল " বৃত্ত"। ছবি - কবিতা কিম্বা কবিতা ছবির এক যুগপৎ কাব্যগ্রন্থ। শিল্পী ও কবির একত্র ভাবনার এক অন্তরিত প্রদর্শনী যেন এই বইটি।বইটির ১১টি কবিতার লেখক ভারতীয় কবি তানিয়া চক্রবর্তী এবং ছবির শিল্পী কনসাল জেনারেল বিশিষ্ট বি এম জামাল হোসেন।


বইটির কবিতা বাংলা ভাষা সহ আরো চারটি ভিন্ন ভাষা তথা হিন্দি, উর্দু, আরবী,ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে যাতে বিশ্বস্তরে মানুষ কবিতার মর্মকে অন্তরে ধারণ করতে পারে।

বিজ্ঞাপন

বইটির মোড়ক উন্মোচন করেছেন আরবি রাজসভার বিখ্যাত কবি সুলতান আল কেতাবী।


এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রেখে ও উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানকে মহিমান্বিত করেছেন তাঁরা হলেন আল হারামাইন গ্রুপ ও বায়ান্ন টিভির চেয়ারম্যান সিআইপি মাহতাবুর রহমান নাসির, বাংলাদেশ সমিতি আবুধাবীর সভাপতি প্রকৌশলী মোয়াজ্জেম হোসেন,  শারজাহের সভাপতি আলহাজ এম এ বাশার, সম্মিলিত সাহিত্য সাংস্কৃতিক পরিষদ লন্ডনের কোষাধ্যক্ষ সাংবাদিক আনোয়ার শাহজাহান ও ড্যানিয়ুব প্রপার্টিজের কর্মকর্তা আরিফ ভালদার।


দুবাই বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেলর আঁকা ছবির রহস্য উন্মোচন করতে গিয়ে এই কাব্যগ্রন্থটি রচনা করেন কবি তানিয়া চক্রবর্তী।

মোড়ক উম্মোচন অনুষ্ঠানে কবি তানিয়া চক্রবর্তী বলেন, ‘সাম্প্রদায়িকতা হারিয়ে দেয়ার মোক্ষম হাতিয়ার কবিতা। যে পরিমাণ সাম্প্রদায়িকতা বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে লুকিয়ে তৈরি হচ্ছে একমাত্র কবিতা সেই শেকড়টা উপড়ে দিতে পারবে।


তরুণ এই কবি পাঠকদের বইটি পড়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এই প্রয়াসকে ভালোবাসুন। বৃত্তের মধ্যে আপনারাও আসুন, বৃত্তকে গ্রহণ করুন।’

বৃত্ত’র মোড়ক উন্মোচনের অনুষ্ঠানটি মিলনমেলায় পরিণত হয়। কবিতা আবৃত্তি, স্মৃতিচারণ, নানা অভিজ্ঞতা শেয়ারের মধ্য দিয়ে উৎসবে মেতেছিলেন প্রবাসী সাহিত্য-সংস্কৃতি প্রেমীরা।

অনুষ্ঠানে সাহিত্য-সংস্কৃতি প্রেমীরা বৃত্ত’র কবিতার প্রশংসা করেছেন। বইয়ের পাতায় পাতায় ছবি, পাতায় পাতায় কবিতা। ছবি আর কবিতার এই মেলবন্ধন অনন্য মাত্রা যোগ করেছে বলে তারা মনে করেন। কাব্যগ্রন্থটির কবিতাগুলো বাংলা ছাড়াও ইংরেজি, উর্দু, আররি ও হিন্দি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে।


কবিতা আমার কাছে ঘুমন্ত শিশুর মতো জানিয়ে কবি তানিয়া চক্রবর্তী বলেন, ‘কবিতা বা শিল্পের কোনো নির্দিষ্ট কারণ থাকে না। যার কাছে আসে, তার কাছে অতিপ্রাকৃতিকভাবে আসে। কবিতা আমার কাছে ঘুমন্ত শিশুর মতো। ঘুমের শিশু যেভাবে বাড়ে, আমার কবিতাও নিভৃতে বাড়ে।’

কবি ও শিল্পী বিএম জামাল হোসেনও কবি তানিয়া চক্রবর্তীকে কৃতিত্ব দিতে ভুল করেননি। কবি এখানে ছবি থেকে খুঁড়ে কবিতা বের করেছেন জানিয়ে বলেন, ‘একটি সাদা কাগজে কলমের একফোঁটা কালি পড়ে গেলে শিল্পী সেখান থেকেই শুরু করেন, একসময় শেষ হয়। শিল্পীর অবচেতন মনে আঁকা সেসব ছবির অর্থ শিল্পী জানেন না। এমন কিছু ছবি তানিয়াকে পাঠিয়েছিলাম। সে ছবিগুলোর হৃদয় খুঁড়ে কবিতা বের করে নিয়ে আসে। এটি তার অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য। সে প্রত্যেকটি ছবি থেকে এমন ভাব, রহস্য আর অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছে, তার কবিতাগুলো পড়ার পরে আমি জেনে অভিভূত হয়েছি। সে যদি এগুলো টেনে বের না করত, কোনোদিনও আমি এটি আবিষ্কার করতে পারতাম না।’


তিনি আরও বলেন, বইমেলার মাধ্যমে সাহিত্য-সংস্কৃতির একটি গোড়াপত্তন করতে চাই। সাংস্কৃতিক বন্ধ্যাত্বের যে কথা ওঠে এসেছে, সেই বন্ধ্যাত্বের অবসানে আজ প্রথম শিশুর জন্ম হলো।

আরবান রিডার্স এর অন্যতম সংগঠক প্রকৌশলী নওশের আলী আরবান বলেন, বই ঠিকই আছে কিন্তু পড়ার মানুষ নাই।

অনুষ্ঠানের আয়োজকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন আরবান রীডার্স এর অন্যতম সংগঠক নওশের আলী। অনুষ্ঠানের শুরুতে সদ্যপ্রয়াত আমিরাতের রাষ্ট্রপতি শেখ খলিফা ও বরেণ্য সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী স্মরণে নিরবতা পালন করা হয়।


শিল্পী বলেন মাইকেল মধূসূদন দত্তের প্রবাসকালেত জীবনের কথা, কবিতার কথা ও তাঁর আদ্যন্ত কষ্টের কথা, সেইসঙ্গে তিনি তানিয়া চক্রবর্তীর কবিতার ও এই ছবি সম্পর্কিত কবিতার ব্যবহারে প্রশংসা করেন। অপরদিকে কবিও শিল্পীর শিল্পকর্মকে নান্দনিক বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইজিপ্টের বিশিষ্ট কবি যাঁরা এই দীর্ঘ অনুবাদ কর্মশালায় নিজেদের নিয়োজিত করেছেন  তাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান,এবং সবশেষে বলেন জীবনের এই বৃত্তে সকলে যেন সামিল হতে পারে....

বায়ান্ন টিভির বার্তা সম্পাদক তিশার পরিচালনায় বইয়ের উপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বায়ান্ন টিভির সম্পাদক ছড়াকার লুৎফুর রহমান। অনুষ্ঠানের আয়োজকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন আরবান রীডার্স এর অন্যতম সংগঠক নওশের আলী।


স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের কবি ফাহাদুর রহমান, সৈয়দ আলী হামিদ জাইদি ও সৈয়দ আমান হায়দার জাইদি।

কনসাল জেনারেল বি এম জামাল হোসেন যে সৃজনশীল উদ্যোগ গ্রহণ করছেন তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সমিতি শারজাহে একটি লাইব্রেরি স্থাপনের ঘোষণা দেন সমিতির সভাপতি আলহাজ এম এ বাশার।

প্রবাসী ভিন্ন ভাষার মানুষ ও আরবী কবিরাও আন্তরিক ভাবে এই সাহিত্যকর্মের প্রতি আগামীতে আরো আগ্রহী হয়ে এইসকলদিকে তাকিয়ে থাকবেন বলে জানিয়েছেন।