সারাদিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি

  • নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মদনমোহন তর্কালঙ্কারের জন্মদিন আজ

মদনমোহন তর্কালঙ্কারের জন্মদিন আজ

শিশুদের জন্য তিনি লিখেছেন, 'সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি, সারাদিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি। আদেশ করেন যাহা মোর গুরুজনে, আমি যেন সেই কাজ করি ভালো মনে।'

শৈশবে আমাদের মুখে মুখে ছিলো যে ছড়া- সেটিও লিখেছেন তিনি, 'লেখা পড়া করে যেই, গাড়ি ঘোড়া চড়ে সেই, লেখা পড়া যেই জানে, সব লোক তারে মানে।'

বিজ্ঞাপন

লিখেছেন, 'পাখি-সব করে রব, রাতি পোহাইল, কাননে কুসুমকলি, সকলি ফুটিল, রাখাল গরুর পাল, ল’য়ে যায় মাঠে, শিশুগণ দেয় মন নিজ নিজ পাঠে।'

সেই প্রখ্যাত ছড়াকার ভারতীয় উপমহাদেশের ঊনবিংশ শতাব্দীর অন্যতম পণ্ডিত ব্যক্তিত্ব মদনমোহন তর্কালঙ্কারের আজ জন্মদিন। ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দের ৩ জানুয়ারি নদিয়া জেলায় নাকাশিপাড়ার বিল্বগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

বাংলা শিশুপাঠ্য গ্রন্থের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় সৃষ্টি মদনমোহন তর্কালঙ্কারের ‘শিশুশিক্ষা’। তিনি লেখ্য বাংলা ভাষার বিকাশে বিশেষ অবদান রেখে গেছেন। তিনি বাংলার নবজাগরণের অন্যতম অগ্রদূত হিসিবেও পরিগণিত। তিনি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অধ্যাপক ছিলেন এবং বাল্যশিক্ষার জন্য একাধিক পাঠ্যপুস্তক রচনা করেন।

মদনমোহন সংস্কৃত কলেজের শিক্ষাগ্রহণ করেছিলেন, সেখানে তিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সহপাঠী ছিলেন। সংস্কৃত কলেজ ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘বিদ্যাসাগর’ ও মদনমোহন চট্টোপাধ্যায়কে ‘তর্কালঙ্কার’ উপাধি দেয়, পরবর্তী সময়ে যা হয়ে ওঠে তাঁদের মুখ্য পরিচয়।

মদনমোহন পরে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে শিক্ষাগ্রহণ করেন। তিনি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বরে তিনি মুর্শিদাবাদ জেলার বিচারক নিযুক্ত হন। তিনি ১৮৫৫ খিস্টাব্দের ডিসেম্বরে মুর্শিদাবাদে এবং ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে কান্দির ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত হয়েছিলেন।

তিনি ছিলেন ‘হিন্দু বিধবাবিবাহ’ প্রথার অন্যতম উদ্যোক্তা। স্ত্রীশিক্ষার প্রসারে তার অবদান অনস্বীকার্য। ১৮৪৯ সালে বেথুন কর্তৃক হিন্দু মহিলা স্কুল প্রতিষ্ঠিত হলে নিজের দুই মেয়েকে সেখানে ভর্তি করেন। নিজে বিনা বেতনে এই স্কুলে বালিকাদের শিক্ষা দিতেন। সর্বশুভকরী পত্রিকায় স্ত্রীশিক্ষার পক্ষে একটি যুগান্তকারী প্রবন্ধ লেখেন ১৮৫০ সালে।

মদনমোহন তর্কালঙ্কার বাংলা ভাষায় শিক্ষা বিস্তারের জন্য যথেষ্ট শ্রম ব্যয় করেন। তার রচিত ‘আমার পণ’ কবিতাটি বাংলাদেশের পাঠ্যবইয়ের অন্যতম একটি পদ্য এবং শিশুমানস গঠনের জন্য চমৎকার দিকনির্দেশনা হিসেবে বিবেচিত। তিনি ১৪টি সংস্কৃত বই সম্পাদনা করেন।

১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ৯ মার্চ কান্দিতে কলেরা রোগে ভুগে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।