'বিদ্রোহী' কবিতার ১০০ বছর

  • নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

কাজী নজরুল ইসলাম।

কাজী নজরুল ইসলাম।

বল বীর—
চির-উন্নত মম শির!
শির নেহারি আমারি,
নত-শির ওই শিখর হিমাদ্রির!

কাজী নজরুল ইসলামের 'বিদ্রোহী' কবিতা বাংলা কবিতার ইতিহাসে এক বিস্ময়কর সৃষ্টি। আজ থেকে ঠিক ১০০ বছর আগে রচিত এই কবিতা এখনো প্রাসঙ্গিক। একশো বছর পরেও সেই কবিতার আবেদন ফুরায়নি, রয়ে গেছে আগের মতোই। মাত্র ২২ বছর বয়সে তিনি রচনা করেন প্রায় দেড় শ পঙক্তির এই ভুবনবিজয়ী কবিতা।

বিজ্ঞাপন

১৯২১ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে কলকাতার ৩/৪সি তালতলা লেনের একটি বাড়িতে বসে কাঠ পেন্সিলে কবিতাটি লিখেছেন তিনি। কবিতা লেখার পরের দিন সকালে প্রথম পড়ে শুনিয়েছিলেন ওই বাড়িতে তার সঙ্গে থাকা বন্ধু কমরেড মুজফফর আহমেদকে।

মুজফ্ফর আহমদের স্মৃতিকথা থেকে জানা যায়, 'বিদ্রোহী' কবিতাটি নজরুল ইসলাম শেষ রাতের দিকে লিখেছিলেন এবং সকালে মুজফফর আহমদকে পড়ে শুনিয়েছেন। কবিতাটি নজরুল প্রকাশের জন্য মোসলেম ভারত পত্রিকায় দিলেও তা প্রথমে বিজলী পত্রিকায় ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ৬ জানুয়ারি প্রকাশিত হয়।

মুজফফর আহমদ লিখেছেন, 'তখন নজরুল আর আমি নীচের তলার পূব দিকের, অর্থাৎ বাড়ীর নিচেকার দক্ষিণ-পূর্ব কোনের ঘরটি নিয়ে থাকি। এই ঘরেই কাজী নজরুল ইসলাম তার ''বিদ্রোহী'' কবিতাটি লিখেছিল। সে কবিতাটি লিখেছিল রাত্রিতে। রাত্রির কোন সময়ে তা আমি জানিনে। রাত দশটার পরে আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলুম। সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ ধুয়ে এসে আমি বসেছি এমন সময় নজরুল বলল, সে একটি কবিতা লিখেছে। পুরো কবিতাটি সে তখন আমায় পড়ে শোনাল। ''বিদ্রোহী'' কবিতার আমিই প্রথম শ্রোতা।'

বিদ্রোহী কবিতাটি ১৩৯-পঙক্তির। ১৯২২ সালের ৬ জানুয়ারি শুক্রবার সাপ্তাহিক বিজলী পত্রিকায় প্রথম 'বিদ্রোহী' কবিতাটি ছাপা হয়। বৃষ্টি হওয়ার পরেও কাগজের চাহিদা এতো হয়েছিল যে, সেই সপ্তাহে ওই কাগজটি দুইবার মুদ্রণ করতে হয়েছিল।

কবিতায় দুজন মানুষ আছেন—একজন বক্তা, একজন শ্রোতা। কিন্তু নজরুলের অসামান্য নির্মাণ কুশলতায় পরিণতিতে বক্তা বা শ্রোতা নন, কবি নিজেই হয়ে ওঠেন বিদ্রোহী, উপাধি পান ‘বিদ্রোহী কবি’ হিসেবে।

নজরুল গবেষক জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলছেন, আধুনিক বাংলা কবিতার যে জন্ম হলো, রবীন্দ্র ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে তাতে আরও সময় লেগে যেতো। বিদ্রোহী কবিতা প্রকাশের মাধ্যমে আধুনিক বাংলা কবিতার সূচনা হলো। তিনি বলছেন, বিদ্রোহী কবিতাটি বাংলা সমাজ জীবনে, বাংলা রাজনৈতিক জীবনে, বিভিন্ন আন্দোলনে অত্যন্ত প্রভাব বিস্তার করেছে।