লুবনা চর্যার কবিতা ও ছবিতা

  • লুবনা চর্যা, কবি ও চিত্রশিল্পী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অলংকরণ ও সম্পাদনা: রুদ্র হক

অলংকরণ ও সম্পাদনা: রুদ্র হক

ধুলালিপি

ধুলো চোখে চেয়ে আছো
ধুলো ঢাকা যন্ত্ররাজ্যে।
পায়ের শিকল বহু আগেই মারা গেছে,
তার সাথে আর কথা চলে না।
যুগ-যুগান্তর নিস্তব্ধ থাকার পর
ধুলার তুষার পিঠে নিয়ে
একটা ইঁদুর কোথাও দেশান্তরী হলো...
ইঁদুর সবসময়ই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী;
ইঁদুরকে কেউ বিষন্ন দেখে নি।

বিজ্ঞাপন

এই ইঁদুরটা আসলে তোমার প্রলেতারিয়েত মায়ের আত্মা।
তোমার মায়ের হৃৎপিণ্ডে শোনা যেত বৃষ্টির ধ্বনি;
তোমার মা কখনো রণে হারে নি।
তার অগ্নিপ্রসবের মিথকে মিথ্যা করে
ধুলো চোখে চেয়ে আছো
ধুলো ঢাকা যন্ত্ররাজ্যে,
ধুলার স্কাল্পচার হয়ে।

তুমি হাত নাড়লে যন্ত্রগুলো চালু হবে
তুমি উঠে দাঁড়ালে শ্রমিকরা ফিরে আসবে
তুমি বাঁশি বাজালে পুঁজিবাদের বুড়ো সমুদ্র চেতন হারিয়ে নাচবে

বিজ্ঞাপন

তোমার ব্যক্তিত্বের শ্যাওলারঙা ঢাল ও বর্মে
যে স্পৃহা জেগে ওঠে,
তার প্রতিভাসই মিছিল করে
পৃথিবীর জন্মান্ধ রাজপথে।

বিষাদ ভুলে আবার পুনরুত্থিত হবো আমরা। মিডিয়াম: পেন

 

 প্রেম???

আমি জানি না তুমি অ্যাঞ্জেল, না কি পয়জনড হেল
জানি না তুমি বোকা কিংবা আঁতেল
তুমি কি আদর্শবাদী, না আদর্শছাড়া
আত্মবিশ্বাসী, না দিশাহারা...
এসব জানতে চাই না, চাই না, চাই না

স্ফটিক জলের সরোবরে ডানা মেলে নাচে যে ক্ষতদেহ মাছ
সে আর কীভাবে চাইতে পারে পরিত্রাণ?
তোমাতে আমার অভিযোগ, আমাতে তোমার অভিমান
আমার তোমাকে জ্বালাতন, তোমার আমাকে উপেক্ষা...

সূর্যাস্তে গাছগুলো কালো হয়ে গেলে তোমাকে ভাবি গোলাপি ধাতুর সূর্য
সব স্থাপত্যগুলো নাস্তিক হয়ে গেলে তুমি আমাকে ভাবো প্রকৃতি
চুম্বকের বিপরীত মেরু থেকে চোখ বেঁধে আমরা পরস্পরের দিকে হাঁটি
কখন অতিক্রম করে যাই এক অপরের স্রোত, টের পাই না...

আবার কাৎরাতে থাকি আর্তদুঃখে।

পাকস্থলি যখন হৃদয়কে খেয়ে দেয়। মাধ্যম: পেন

 

নদীর মতো

খুলি তুলে ফেলা উন্মুক্ত মগজে
তুষার জমে আছে। তার মধ্যে
দূর থেকে কাছে এলে সবুজ খেলার মাঠ
আকাশে ঘুড়ি, পাখি, মেঘেদের হাট ...
লক লক লক লক .. স্মৃতিশক্তি সাদা
লক লক লক লক .. বাড়াতে পারি না পা
লক লক লক লক .. বাতাসে ওড়ে আগুনের কেশ
লক লক লক লক ..আগলে রাখি ছদ্মবেশ

মরুভূমির ভূগোল ঘুরে এসে দেখি
নদীটা ঠিক সেখানেই শুয়ে আছে।
নদী... তাহলে এখনো বেঁচে আছে!
যখন অনেকবার মরে এবং বেঁচে
আমরা আবার পুনর্বাসনের স্ট্রাটেজি ভাবছি।
লক লক লক লক .. স্মৃতিশক্তি সাদা
লক লক লক লক .. বাড়াতে পারি না পা

নদীর কালো রক্তে জ্বলে একফোঁটা পিদিম
হয়তো সে কুমিরের পেটে যাওয়া জেলের আত্মা
অথবা কোন খসে পড়া এলিয়েন দেবতা
ভালবাসি ছোট আলো, তার শান্ত প্রভা
লক লক লক লক .. বাতাসে ওড়ে আগুনের কেশ
লক লক লক লক .. আগলে রাখি ছদ্মবেশ

নদী বেঁচে আছে মানে আমরাও আছি বেঁচে
নদী চলছে মানে আমাদেরও বয়ে নিয়ে যেতে হবে
লক লক লক লক .. স্মৃতিশক্তি সাদা
লক লক লক লক .. বাড়াতে পারি না পা
লক লক লক লক .. বাতাসে ওড়ে আগুনের কেশ
লক লক লক লক .. আগলে রাখি ছদ্মবেশ

লেট মি আউট অফ দ্য গেম। মাধ্যম: জলরং ও পেন

 

 মধ্যরাতের বৃষ্টি

মধ্যরাতের বৃষ্টি গান শোনায় সান্তনার...
তার রূপালি পথ ধরে যে গিরিখাতে ঢুকে পড়ি
সেখানে আগুনের বাণিজ্য চলে।
ভীষণ অজানা পথ চলে গেছে এক অগ্নিল হ্রদের দিকে
আকাশে মিশে মিশে।
বৃষ্টির গান রূপান্তরিত হয়ে আগুনের চিৎকার।
আর শরীর জুড়ে ব্যথা, মনেরও শারীরিক ব্যথা..
ক্রমাগত বাড়ে, বেড়ে বেড়ে গতি পায় শিহরণের।
ধরে রাখি যন্ত্রণার শিহরণ, পেশী ফুলে আকাশ সমান।
আকাশেও পেশল মেঘ... মধ্যরাতের বৃষ্টি প্রেরণা যোগায়
ভীষণ অজানা অগ্নিল হ্রদকে আবিষ্কার করতে।
তার রূপালি ধারা বয়ে যায় তোমার আমার
প্রায়শ্চিত্যশুদ্ধ হৃদয়ের উপর দিয়ে।

 

আমার এখনো জন্মই হয় নি। মাধ্যম: পেন

 


অপর পৃষ্ঠায় যা লেখা থাকতে পারে

নিজেই শিশু রয়ে গেলাম বলে
আমার শিশুদের সঙ্গে তালপাতা মাথায়
তুমুল বর্ষায় বরফপানি খেলা হলো না।
মাঝে মাঝে তারা অস্থিরতা প্রকাশ করে। মাঝে মাঝে
হেসে হেসেই বলে,“তুমি একটা নিখাদ স্বার্থপর!”
বিস্মরণের ঢেউয়ে ডুবে যায় তাদের ক্ষুদে বাড়িঘর।

নিজেই কামার্ত থেকে গেলাম বলে
কামনার অবসানে একজন পরিপূর্ণ মানুষের
মিনি সাইজকে সম্ভ্রমে অভ্যর্থনা জানানো
গেল না। মাঝে মাঝে তারা খুব কাদে,
তাদের ব্যথা টের পাই দেহ হ্রদে। মাঝে মাঝে অভিমান
করে আকাশের পিছনে মৃদু এক আলো হয়ে জ্বলে।

নিজেই বঞ্চিত প্রজাতি বলে
অপরকে আমার উজাড় গ্রামে বসতি বাধার
জন্য ডাকা সম্ভব হলো না। মাঝে মাঝে তারা
ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করে। মাঝে মাঝে আমার
পূর্বসুরীদের দাবানলে দগ্ধ হবার উদাহরণ টেনে আনে।
কিন্তু আমি আমাকে ঘৃণা করার জন্য একজন উত্তরসুরী চাই না।

ইনফেরিয়র কমপ্লেক্স। মাধ্যম: জলরং ও পেন


শিল্পীর আত্মপরিচয়:

জন্ম ও বেড়ে ওঠা খুলনায়। কৈশোরে থিয়েটারের সাথে যুক্ত ছিলাম। পরে কবিতা ও ছবি আঁকার ব্যাপারে সিরিয়াস হই। কিছুকাল বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কপি রাইটার হিসাবে কাজ করেছি। এখন বেকার ও স্বাধীন আছি।
কবিতার বই: জিওগ্রাফি ইন অ্যা জ্যু..., শয়তানের অভিনব কারখানা, পপকর্ন, চিন্তাশীল মেশিন, হেমন্তকে বলা এলোমেলো কথা...।
প্রদর্শনী: তিন/চারটা সলো ও দুই/তিনটা গ্রুপ এক্সিবিশন আঁলিয়স ফ্রঁসেজ ও অন্যান্য গ্যালারিতে।