'ময়মনসিংহে আমাদের একটা কাপড়ের দোকান ছিল'

  • কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

হুগলি/গঙ্গা তীরের কলকাতাবাসী বিশিষ্ট কথাশিল্পী শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় আদিতে বাংলাদেশের পদ্মা তীরের বিক্রমপুরের বাঙালি হলেও জন্মগ্রহণ করেন ব্রহ্মপুর তীরের ময়মনসিংহে। ময়মনসিংহে তাদের ছিল কাপড়ের ব্যবসা। বাংলা নববর্ষের কথায় সেসব স্মৃতি তিনি সবিস্তারে উপস্থাপন করেছেন মিডিয়ায়। পাঠকদের জন্য প্রাসঙ্গিক অংশ বিশেষ এখানে উপস্থাপিত হলো।

শীর্ষেন্দু জানাচ্ছেন, 'পয়লা বৈশাখ হল পয়লা বৈশাখ। এর আবেগই আলাদা। নতুন বাংলা বছরের শুরু, নববর্ষের সূচনা আমবাঙালির কাছে এখনও কল ফর এ সেলিব্রেশন।

বিজ্ঞাপন

একটু পিছিয়ে গেলে, অর্থাৎ ষাট-সত্তর বছর বা তারও আগে সাধারণ মানুষের হাতে নগদ টাকার জোগান তেমন থাকত না। পাড়ার দোকান বা চেনা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বাকি বা ধারে জিনিস কেনা একটা প্রচলিত রেওয়াজ ছিল। মাসান্তে গৃহকর্তা বেতন পেলে সেই ধার-বাকি শোধ দেওয়া হত। রেওয়াজ এখনও আছে। বাকির কারবার বড় বড় ব্যবসাতেও চলে। কিন্তু সেটা অন্য প্রসঙ্গ। আমাদের মধ্যবিত্ত গেরস্থালিতে ছোটখাটো ধার-বাকির ধারা বহুকাল অব্যাহত ছিল। অনেক সময়ে মাসান্তে সবটা শোধ হতও না, কিছুটা রয়েও যেত।'

স্মৃতির আলোকে তিনি বলেন, 'নববর্ষ আবার হালখাতারও দিন, অর্থাৎ পুরনো হিসেবের খাতার বদলে নতুন হিসেবের খাতার শুরু। তাই হালখাতা। রীতি ছিল, নববর্ষে পুরনো বছরের ধার-বাকি মিটিয়ে আবার নতুন করে হিসেবনিকেশ শুরু করা। একটু কষ্ট করে হলেও গেরস্তেরা ওই দিন দোকানের বাকি-বকেয়া মিটিয়ে দিতে সচেষ্ট হতেন।'

নিজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে শীর্ষেন্দু জানান, 'ময়মনসিংহে আমাদের একটা কাপড়ের দোকান ছিল, জগদ্ধাত্রী ভাণ্ডার। তাই ব্যাপারটা আমি বাল্যকাল থেকেই অনুধাবন করার সুযোগ পেয়েছি। নববর্ষের দিন বিক্রিবাটা বন্ধ, শুধু অতিথি-অভ্যাগতদের আপ্যায়ন। আমার ওপরে ভার থাকত অতিথি এলে তার গায়ে গোলাপজল সিঞ্চন করার। একটা ছোট্ট ঝাঁঝরি দিয়ে সেই কাজটা আমি সোৎসাহে করতামও। তার পর অতিথিরা পকেট বা ট্যাঁক থেকে টাকা বার করে বাকি-বকেয়া মিটিয়ে দিতেন। আর তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হত মিষ্টির রেকাবি। না, তখন কিন্তু প্যাকেট সিস্টেমের প্রচলন ছিল না। অতিথিরা দোকানে বসেই তৃপ্তি করে মিষ্টি সাঁটাতেন।'

কথাশিল্পী শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের বর্ণনার সূত্রে বাংলা নববর্ষের অতীত আমেজ আর হারিয়ে যাওয়া আচার-অনুষ্ঠানের স্বাদু অনুভব আবার নতুন করে ফিরে এলো।