আজ কবি ও গীতিকার আজিজুর রহমানের জন্মদিন

  • স্টাফ করেসপডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুষ্টিয়া
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

কবি ও গীতিকার আজিজুর রহমান

কবি ও গীতিকার আজিজুর রহমান

রাজধানীর বুকে, হারানো দিন, আগুন্তক প্রভৃতি ছায়াছবিতে তিনি গান রচনা করেছেন। প্রধানত গানের ফসলেই তার শিল্পের গোলা ভরেছে। তিনি আর কেউ নন, কবি ও গীতিকার আজিজুর রহমান। এদেশের কাব্য এবং সংগীত রচনায় এক অবিস্মরণীয় নাম আজিজুর রহমান।

বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এ মানুষটি কবিতা দিয়ে লেখালেখি শুরু করলেও গানই তাকে সবার মাঝে সমাদ্রিত করে। বাঙালি মুসলমান গীতিকারদের মধ্যে গানের সংখ্যায় কবি নজরুলের পরই তাঁর স্থান। কবি আজিজুর রহমান প্রায় ৩ হাজারেরও অধিক গান এবং তিশত এর বেশি কবিতা লিখেছেন। ঢাকার প্রায় প্রখ্যাত সুরকাররা যেমন আজিজুর রহমানের গানে সুর দিয়েছেন তেমন তার গানও গেয়েছেন খ্যাতনামা প্রায় সব শিল্পীই।

বিজ্ঞাপন

আজিজুর রহমান ১৯১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি কুষ্টিয়া জেলার গড়াই নদীর তীরে অবস্থিত হাটশ হরিপুর গ্রামের এক সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম বশির উদ্দিন প্রামানিক, মাতার নাম সবুরুন নেছা। স্বগৃহে পাঠ করে তিনি একজন স্বশিক্ষিত ব্যক্তিতে পরিণত হন। বই পুস্তকাদি সংগ্রহ করা তার জীবনের নেশা ছিল। তার গ্রন্থাগারে প্রায় ১০ হাজার বই ও পত্র পত্রিকার সংগ্রহ রয়েছে। সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি সমাজসেবায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।

১৯৫৪ সালে তিনি ঢাকা বেতারে প্রথমে অনিয়মিত এবং পরে নিয়মিতভাবে যোগ দেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ বেতারে চাকরিতে বহাল ছিলেন। সাংবাদিক হিসেবেও তার খানিকটা পরিচিতি ছিল। অধুনালুপ্ত দৈনিক পয়গম পত্রিকায় ১৯৬৪ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত সাহিত্য বিভাগের সম্পাদক ছিলেন তিনি। ঢাকা থেকে প্রকাশিত কিশোর মাসিক ‘আলপনী’রও সম্পাদক ছিলেন একনিষ্ঠ এই কবি। সাহিত্যচর্চা শুরুর আগে নাটকে অভিনয়ে তার উৎসাহ ছিল বেশি। ফলে শিলাইদহের ঠাকুর বাড়িতে তিনি গড়ে তোলেন একটি নাট্যদল। কুষ্টিয়ার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তিনি ও তার দলের ব্যাপক সুনাম ও খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। সমাজসেবায় তিনি ছিলেন একজন নিবেদিত প্রাণ।

১৯৩৪ সালে তিনি তার পিতামহ চাঁদ প্রামানিকের নামে হরিপুর গ্রামে গড়ে তোলেন চাঁদ স্মৃতি পাঠাগার। এটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ একটি পাঠাগার ছিল। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ বইয়ের খোঁজে আসতেন এই পাঠাগারে। তার সাংগঠনিক মমতা ছিল প্রবল। ব্যক্তিগত জীবনে ১৯৩১ সালে কবি আজিজুর রহমান বর্তমান ঝিনাইদহ জেলার ফুল হরিগ্রামের আজহার সিকদারের কন্যা ফজিলাতুন্নেসাকে বিয়ে করেন। ৩ ছেলে ৪ মেয়ের জনক আজিজুর রহমান।

১৯৭৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর কবি আজিজুর রহমান গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। সে সময় তাকে ভর্তি করা হয় তৎকালীন ঢাকার পিজি হসপিটালে। সেখানে চিকিৎসার মাত্র ৩ দিনের মধ্যে ১৯৭৮ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর গ্যাংগ্রিন রোগে আক্রান্ত হয়ে পিজি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। কবির জীবদ্দশায় তেমন কোনো সম্মাননা না পেলেও ১৯৭৯ সালে মরণোত্তর রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘একুশে পদক’ লাভ করেন।