চিরবিদায় হাসনাত ভাই
খবরটি প্রথম জানলাম কলকাতার বিশিষ্ট লেখক অধ্যাপক চিন্ময় গুহ'র স্ট্যাটাস থেকে। হাসনাত ভাই নেই। সাহিত্য শিল্প সংস্কৃতি বিষয়ক মাসিক পত্রিকা ‘কালি ও কলম’ এর সম্পাদক আবুল হাসনাত চিরবিদায় নিলেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
রাজধানী ঢাকার বেসরকারি একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার (১ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তিনি মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
কদিন আগেও ফোনে কথা হলো। তার সম্পাদিত ‘কালি ও কলম’র সর্বশেষ সংখ্যায় ‘দিনলিপি ২০২০’ নামে আমার একটি কবিতাও ছাপা হয়। সংখ্যাটি সদ্য প্রয়াত শিল্পী মুর্তজা বশীরের করা প্রচ্ছদে প্রকাশিত। তাতে প্রয়াত শিল্পীর কর্ম ও স্মৃতি নিয়ে একাধিক রচনাও ছিল।
হাসনাত ভাইয়ের চিরবিদায়ের খবরে শোকাভিভূত লেখালেখি জগতের মানুষেরা। ১৪ অক্টোবর আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আবুল হাসনাতকে ভর্তি করা হয়। তার স্ত্রী নাসিমুন আরা হক সাংবাদিক। তিনি বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি। জনকণ্ঠে কিছুদিন কাজের সুবাদে তার সান্নিধ্য পেয়েছি। সাংস্কৃতিকবান, সজ্জন পরিবারটিকে দেখে মোহিত হয়েছি। তাদের একমাত্র মেয়ে দিঠি হাসনাত যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী।
সাহিত্য সম্পাদনায় হাসনাত ভাই ছিলেন প্রবাদপ্রতিম। কঠোর সম্পাদক কিন্তু ভালো লেখার প্রতি নিরঙ্কুশ পক্ষপাত। সম্পাদনার ক্ষেত্রে উভয় বঙ্গে উচ্চাঙ্গের দৃষ্টান্ত তিনি।
বহু বছর ছিলেন ‘সংবাদ’র সাহিত্য সম্পাদক। তার সুযোগ্য সম্পাদনার কারণে 'সংবাদ’র সাহিত্য সাময়িকী অসাধারণ উচ্চতায় পৌঁছে ছিল। পরে শুরু করেন ‘কালি ও কলম’। বাংলা ভাষায় এমন মননশীল সাহিত্য সাময়িকী ছিল কমই। বাংলাদেশ, ভারতসহ সমগ্র পৃথিবীর বাংলাভাষীর কাছে আদৃত হয়েছিল ‘কালি ও কলম’।
‘কালি ও কলম’র ভারতীয় তথা পশ্চিমবঙ্গ সংস্করণ প্রকাশ করেন তিনি। কলকাতার বাজারে টেক্কা দিয়েছে সে প্রকাশনা। সেখানকার প্রায়-সকল কবি-লেখক-সাহিত্যিক‘কালি ও কলম’-এ লেখা দিয়ে অংশ নিয়েছেন সানন্দে।
‘কালি ও কলম’ ছাড়াও বেঙ্গল প্রকাশনা, চিত্রশালার নেপথ্যের কুশলী তিনি। বাঙালি মননের শৈল্পিক বিকাশের তাড়নায় তিনি ছিলেন সতত প্রাণিত। একদা বাম রাজনীতির প্রভাবে শিল্প ও সাহিত্যকে মানুষের কাছে নিয়ে যেতে চেয়েছেন।
স্বল্পভাষী মানুষটির রচনাও ছিল খুবই পরিমিতিবোধ সম্পন্ন। তার লেখালেখির সংখ্যা কম। কিন্তু সেগুলো মুক্তার মতো উজ্জ্বল। বৈদগ্ধ্যের দীপ্তিতে আলোকিত তিনি ও তার রচনাসমূহ।
আমার ‘পার্টিশানস’ উপন্যাস উৎসর্গ করেছিলাম তাকে। তিনি দেশভাগ নিয়ে আগ্রহী ছিলেন। নিজের জীবনেও ছিল পার্টিশানের ক্ষত। সে আঘাতকে তিনি শিল্প সুষমায় উদ্ভাসিত করেছিলেন। তার চলে যাওয়া বাংলা সাহিত্যের বিরাট ক্ষতি।