‘হাত ও কোমর ভেঙে দেয়ার জন্য স্কোয়াড গঠন করা হোক’
কুমিল্লার ১৩৫ বছরের ঐতিহ্যবাহী বীরচন্দ্র গণপাঠাগার ও নগর মিলনায়তনকে ভেঙে নতুন স্থাপনা তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। তবে প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছেন না লেখক-শিল্পী-সংস্কৃতিকর্মীরা। অনেকেই এর প্রতিবাদ করছেন নিজ নিজ জায়গা থেকে। বাংলাদেশের অন্যতম কবি নির্মলেন্দু গুণও এর প্রতিবাদীদের দলে সামিল হয়েছেন।
সম্প্রতি এই কবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেন, ‘স্থাপত্যশৈলীর অনন্য নিদর্শন কুমিল্লা বীরচন্দ্র গণপাঠাগার ও নগর মিলনায়তন ভবনটি যারা ভাঙতে আসবে, তাদের হাত ও কোমর ভেঙে দেওয়ার জন্য একটা শক্তশালী স্কোয়াড গঠন করা হোক। আমি সেই ঐতিহ্যরক্ষক স্কোয়াডের সদস্য হতে রাজি আছি।’
তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে আরও লিখেন, ‘শেখ হাসিনার সরকার এরকম একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেবে বলে আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। আমি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। নিশ্চয়ই তিনি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে এরকম দুষ্ট চিন্তা থেকে সরে আসার জন্য নির্দেশ দিবেন।’
কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে জানা যায়, ১৮৮৫ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক এফ এইচ স্ক্রাইন ত্রিপুরা জেলার চাকলা রোশনাবাদের জমিদার নরেশ মহারাজ ‘বীরচন্দ্র মানিক্য বাহাদুর’ এর কাছে পাঠাগার তৈরির জন্য জমি প্রদানের অনুরোধ জানান। মহারাজ কুমিল্লা শহরের প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড়ে ১০ বিঘা জমির ওপর একটি ভবন নিজস্ব অর্থায়নে করে দেন। ১৮৮৫ সালের ৬ মে প্রতিষ্ঠিত ওই ভবনই কুমিল্লার গণপাঠাগার ও নগর মিলনায়তন, যা কুমিল্লা টাউন হল নামে পরিচিত। পাঠাগারে এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা, রাজমালা থেকে শুরু করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের কবি, সাহিত্যিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মনীষীদের রচনাসমগ্র রয়েছে। এখানে বাংলা ভাষার ২৪ হাজার বই ও ইংরেজি ভাষার ছয় হাজার বই রয়েছে। ৩০ হাজার বই দিয়ে ৬৩টি আলমারি সজ্জিত। সদস্যরা একসঙ্গে এক সপ্তাহের জন্য তিনটি বই নিতে পারেন। তা ছাড়া সংরক্ষিত গ্রন্থগুলো পাঠাগারে বসে পাঠ করা যায়। টাউন হল ভবনের দ্বিতীয় তলায় যে কেউ গেলে সেখানে অধ্যয়ন করতে পারবেন। টাউন হলের নিচতলায় সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে ৪৪টি জাতীয় আঞ্চলিক, স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা ও সাময়িকী। যে কেউ চাইলে পুরোনো পত্রিকার কপি দেখতে পারেন। এ টাউন হলে পদধূলি দিয়েছেন মহাত্মা গান্ধী, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, মওলানা ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আরও অনেক মনীষী।