জিয়ার ‘ক্যাঙ্গারু কোর্টে’ গণহত্যায় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি

  • সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা, জাতীয় সংসদ ভবন থেকে
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সংসদ ও হাসানুল হক ইনু

সংসদ ও হাসানুল হক ইনু

জেনারেল জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনামলে কাঙ্গারু কোর্টের মাধ্যমে হত্যাযজ্ঞ ও গুমের ঘটনা উদঘাটনে তদন্ত কমিটি গঠন এবং শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন জাসদ সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনীকে যারা ব্যবহার করে সশস্ত্র বাহিনীর গায়ে কলঙ্ক লেপন করেছিলেন, সেই সশস্ত্র বাহিনীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার জন্য এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসার জন্যই এই তদন্ত কমিটি গঠন করা উচিত। ১৯৭৭ সালের লোমহর্ষক হত্যাযজ্ঞ দেশবাসীর জানা উচিত। তাই শ্বেতপত্র প্রকাশ করুন, তদন্ত কমিশন গঠন করুন। দেশবাসী জানুক জেনারেল জিয়ার আমলে কত মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল।

বিজ্ঞাপন

ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে মঙ্গলবার (৯ জুলাই) রাতে পয়েন্ট অব অর্ডারে এ দাবি জানান হাসানুল হক ইনু।

পরে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ সিনিয়রিটির ভিত্তিতে সংসদে আসন বণ্টনের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে ১৯৭২-৭৫ সাল পর্যন্ত সময়ে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করলে ডেপুটি স্পিকার তাকে বাধা দিয়ে বলেন, সংবিধান ও কার্যপ্রণালী বিধি বহির্ভূত কোন কথা বলার সুযোগ সংসদে নেই। হাসানুল হক ইনু সর্বোচ্চ আদালতের রায় সংসদে উপস্থাপন করেছেন। এ কারণে তাকে কিছুটা সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

পয়েন্ট অব অর্ডারে হাসানুল হক ইনু বলেন, যেহেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বাংলাদেশ বেরিয়ে আসছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, ২১ আগস্টের খুনিদের বিচার, আগুন সন্ত্রাসীদের বিচারের ধারাবাহিকতায় কর্নেল তাহের হত্যাকাণ্ডের বিচারের প্রতিকার পেয়েছি। তাই আমি মনে করি, সশস্ত্র বাহিনীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার জন্য এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসার জন্য ১৯৭৭ সালের লোমহর্ষক হত্যাযজ্ঞ দেশবাসীর জানা উচিত। তাই শ্বেতপত্র প্রকাশ করুন, তদন্ত কমিশন গঠন করুন।

তিনি বলেন, ১৯৭৬ সালের জুলাই মাসে সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধ ক্ষমতার দখলদার জিয়াউর রহমান আর্মি অ্যাক্ট লঙ্ঘন করে বেআইনিভাবে গঠিত সামরিক আদালতে কেস নম্বর-১, ১৯৭৬ সালের মিথ্যা সাজানো মামলায় প্রহসনমূলক বিচারে জাতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান আবু তাহেরকে জুলাইয়ের ২১ তারিখে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেন। সেই মিথ্যা মামলায় বেআইনিভাবে গঠিত সামরিক আদালতে আমিসহ অনেক রাজনৈতিক মুক্তিযোদ্ধা, সামরিক অফিসার, এনসিও, জেসিও বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত হই। আমি ১৯৭৫ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৮০ সালের জুন মাস লাগাতার ৫ বছর জিয়ার কারাগারে বন্দি ছিলাম। সবই আদালতের কথা।

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন আহমেদ ও বিচারপতি শেখ মোহাম্মদ জাকিরের নেতৃত্বে একটি বেঞ্চ ২০১১ সালের ২২ মার্চ একটা রায় দেন। আমি, অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, মেজর জিয়াউদ্দিন সবাই মিলে একটা রিট করেছিলাম। সেটা ২২ মার্চ আদালতের রায়ে নিষ্পত্তি হয়।

তিনি বলেন, কর্নেল আবু তাহেরের ফাঁসি অবশ্যই বিচার বহির্ভূত স্পষ্ট খুন। ফাঁসি কার্যকরণের কাজ নিন্দনীয় খুনি হিসেবে বিবেচিত। তাকে শহীদ হিসেবে গণ্য করে তার পরিবারের ক্ষতি পূরণ এবং কর্ণেল তাহেরকে দেশপ্রেমিক ও শহীদ হিসেবে গণ্য করার নির্দেশ এসেছে।

হাসানুল হক ইনু বলেন, জেনারেল জিয়ার আমলে নিজের করা আর্মি অ্যাক্ট লঙ্ঘন করে অনেক সেনা অফিসার, এনসিও, জেসিও সৈনিককে তড়িঘরি করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। যাদের সবাই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। এমনকি তাদের মরদেহ পরিবারের কাছে দেওয়া হয় নাই। এটা সম্পূর্ণ জুডিশিয়াল মার্ডার।

তিনি বলেন, ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর রহস্যময় ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর দুই মাসের মধ্যে ১ হাজার ১৪৩ জন সৈনিককে ফাঁসির দড়িতে অথবা ফায়ারিং স্কোয়াডে হত্যা করা হয়। কাঙ্গারু কোর্টে ৫০০ অফিসারকে হত্যা করা হয়েছে। পশু পাখির মত টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যেয়ে গলায় রশি দিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া হতো। প্রাণ না যেতেই রগ কেটে দেওয়া হতো। বাংলাদেশ কেন, পৃথিবীতে এমন হত্যাকাণ্ড হয়নি।