আংটির কথা

  • তানিয়া চক্রবর্তী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অলঙ্করণ শতাব্দী জাহিদ

অলঙ্করণ শতাব্দী জাহিদ

আংটি, নারী-পুরুষ সকলের হাতেই সুসজ্জিত হয়ে থাকতে দেখা গেছে এই প্রসাধন সামগ্রীকে। আগেকার দিনের রাজারাজরা থেকে শুরু করে বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ সকলের হাতেই আংটিকে থাকতে দেখা গেছে। আঙ্গুলকে প্রকাশ্যে আরো বেশি চিহ্নিত করে তার দ্বারা সৌন্দর্যকে বাড়ানোর প্রয়াস আজকের নয়। হিটি সিভিলাইজেশনে ২৫০০ খ্রি. পূর্বে আংটির আগমন শুরু হয়। ঈজিপ্টের পুরনো রাজত্বকালে বিভিন্ন ধরনের আংটির দেখা মেলে। ইজিপ্টের মধ্যযুগে আংটির ব্যবহার সাধারণের মধ্যে শুরু হয়। টোলেমিক ডাইনেস্টিতে গ্রিক ও রোমান নেটিভরা ব্যতিক্রমী স্টাইলের আগমন ঘটায়। খ্রি. পূ. ১১৫০ সালে কিছু পাথর সংলগ্ন আংটির প্রতি মানুষের আকর্ষণ বাড়ে, পাথরের কাজের কথা ধারণায় এনে। কিছু সময়ের মধ্যেই আংটিকে চিহ্নিত স্থান হিসেবে অনামিকাতে স্থান দেওয়া হয়। এই আঙ্গুল তথা আমাদের চুতর্থ আঙ্গুলটি ধীরে ধীরে রিং ফিঙ্গার নামে পরিচিত হতে থাকে।

Vena amoris অর্থাৎ ভালোবাসার শিরা পূর্ব ধারণা অনুযায়ী যা নাকি বাম হাতের অনামিকা থেকে সোজাসুজি হৃদয়ে গিয়ে মিশেছে। আংটি পরিধানের জন্য ভিন্ন আঙ্গুল এবং তাদের নামকরণ ও বিশ্বাসের ধারণা দেখলে অবাক হতে হয়। ইসলাম ধর্মে যেমন পুরুষদের আংটি পরিধান বেশ কিছু মত আছে। যেমন “AQIQ RING” যা নাকি হজরত মহম্মদের পরিধেয় ছিল। বিবাহের জন্য এনগেজমেন্ট রিং তথা আংটির কথা খুব একটা অজানা নয়। এছাড়াও ইটারনিটি রিং, মুড রিং, বার্থস্টোন রিং, মাল্টি ফিঙ্গার রিং, পাজল রিং, সিগনেট রিং, ওয়াচ রিং, পোট্রেট রিং এরকম প্রকারভেদ আরো আছে আংটির। বুলগেরিয়াতে খননকার্যের পর পাওয়া যায় একটি বিশেষ কারুকার্য করা আংটি—যা প্রায় ৬০০ বছরের পুরনো। এর ভেতরে ভালো করে দেখলে নাকি লুক্কায়িত গর্তের স্থান দেখা যায়। রাজা-রাজরারা এই ধরনের বিশেষ আংটি পরতেন এবং প্রয়োজনে সেখানে বিষ জমায়েত করতেন। শত্রুকে নিধনের প্রয়োজন হলে তখন তা তারা সহজেই হাতের আংটি থেকে পানীয়তে মিশিয়ে দিতেন। সেইসময়ের আর্থসামাজিক পরিস্থিতিতে এই প্রকার আংটি রাজনৈতিক কারণেও বিশেষ বস্তু ছিল।

বিজ্ঞাপন

ইসলাম ধর্মীয় বিশ্বাসে মেয়েদের হাতে আংটির ব্যাপারে সেরকম কোনো বিধিনিষেধ নেই। কিন্তু পুরুষদের রুপা ব্যতীত অন্য ধাতু বা পাথরের আংটি ব্যবহার করা নিষেধ—বিশেষত সোনার আংটি। বর্তমানে অবশ্য WHO কর্তৃক বলা হয়েছে জীবনের ভাগ্যের ক্ষেত্রে পাথরের ব্যবহার বিশেষত অমূলক। এখন বিশেষভাবে বিশেষ আঙ্গুলের জন্য বিশেষ আংটির কথা ভাবা হয় যেমন ইদানীং মধ্যমাতে আংটি পরে পুরুষালি স্টাইলকে প্রকাশ্যে আনা হয়। একটা সময় ছিল পুরুষরা তর্জনীতেই ব্যক্তিত্ব বজায় রাখতে এমনটা করত, কিন্তু পরিসংখ্যান বলে ঘটনাটি এখন উল্টে গেছে। বিভিন্ন সংস্কারের বিভিন্ন বিশ্বাস থেকে কনিষ্ঠা অর্থাৎ হাতের সবচেয়ে ছোট আঙ্গুলটিতে আংটি পরা আসলে বুদ্ধি, বার্তা বিনিময়, সহজাত ধারণা আবার অনামিকাতে আংটি ভালোবাসার সৌন্দর্য, শিল্প, সম্পর্কের বিশ্বাস। মধ্য আঙুলে বা মধ্যমাতে আংটি দায়দায়িত্ব, আত্মবিশ্লেষণ, তর্জনীতে নেতৃত্বদান ও বৃদ্ধাঙ্গুলিতে আংটি ইচ্ছাশক্তির সংকেত হিসেবে প্রতিভাত।

আসলে আংটির চমক তার ব্যবহার তার গায়ে পাথরের দ্যুতি তাকে কানায় কানায় রহস্যের মধ্যে ভরিয়ে দিয়েছে। কত না রূপকথার গল্পে, সিনেমায়, ভৌতিক গল্পে, ছবিতে তার ব্যবহার তাকে মানুষের কাছে মোহময় করে তুলেছে তার ইয়ত্তা নেই। সত্যজিৎ রায়ের “বাদশাহী আংটি” গল্পে সে কী রকম সে আর নতুন করে বলছি না কিন্তু নামেই তার যে রহস্যের চমক তা কি অস্বীকার করা সহজ? নিশ্চয় নয়।