বায়েজিদ বোস্তামীর একগুচ্ছ কবিতা

  • বায়েজিদ বোস্তামী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

গরু

গোয়ালের সবচে’ শান্ত গরুটি হব 
জাবনা কেটে দিলে সবটুকু খেয়ে নেব
একটুও ছড়াব-ফেলব না

বিজ্ঞাপন

চাড়িতে নাক ডুবিয়ে খাব—
পোয়াল-ঘাস-চিটেগুড়-খুদ-কুঁড়ো-জল
আর যা যা দাও জাবনায়

যদি ভুলে যাও কাজের ব্যস্ততায় 
সারাদিন আঁড়ায় দাঁড়িয়ে থাকব
গলার ঘণ্টি বাজাব না

যদি কাছে আসো দুপুর বয়ে যাওয়ার পর 
হঠাৎ মনে পড়ে গেলে
শান্ত গভীর চোখে কেবল টালুমালু চা’ব

যদি হাত রাখো গলকম্বলে বর্তে যাব স্রেফ
সে আদর ভালোবেসে
হাতের তেলো চেটে দেব খুব খসখসে জিবে

সঞ্চয়

ইচ্ছে করে তোমার থুতনি ধরে 
ঈষৎ ঝাঁকিয়ে বলি 
দ্যাখো আগুন
দ্যাখো কাম 
দ্যাখো মেঘ
দ্যাখো শর 
দ্যাখো তৃষ্ণা 
দ্যাখো প্রেম 
দ্যাখো বুনোহাঁস 
দ্যাখো ফণিমনসা
আমার ঘোলাটে চোখের তারায় 
এইসব আমি সঞ্চিত রেখেছি বহুকাল

পলায়ন ঠিকানা

তুমি সবকিছু থেকে পলায়নের নিশ্চিত ঠিকানা
উটপাখি আমি
বালিয়াড়ি তুমি

তোমার বুকে মুখ গুঁজে খুঁজে পাই 
নিরাপত্তার ঘ্রাণ

তুমি ডুব দেওয়ার অলৌকিক আরেক পৃথিবী

সেখানে কেবল—
ঘন নীল আকাশ ও প্রজাপতি 
ঝাঁকে ঝাঁকে টিয়ের উড়াল
মাখন-রঙা জ্যোছনার উৎসব

ছুট দিই তোমার কাছে তাই, যখন ইচ্ছে তখন

এসো, দরদী হন্তারক

গিলে খাও
ক্ষুধার্ত অজগর যেমন গিলে খায় হরিণ শাবক

ছিন্ন ভিন্ন করো 
ক্রুদ্ধ হাঙর যেমন শিকারকে 
এফোঁড়-ওফোঁড় করে ধারালো দাঁতে

শ্বাসরোধ করো
আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলে অক্টোপাসের পারা

ঘাড় ভেঙে দাও
ক্ষিপ্র চিতার হিংস্রতায়

বিষাক্ত হুল ফোটাও 
সাড়ে সাতশো ক্রুদ্ধ ভীমরুল হয়ে

গলার নলি কেটে দাও
ভিড়ের ভেতর চতুর আততায়ীর হাতে

পিষে দিয়ে যাও
ফাঁকা রাস্তায় বেপোরোয়া ঘাতক ট্রাক হয়ে এসে

হৃদযন্ত্র বিকল করো
ভূতের ভয় হয়ে একলা আমার ভেতরে ঢুকে

এসো, দরদী হন্তারক 
এত সহজ শিকার আর পাবে না কোথাও, কখনো

কৈফিয়ত

জ্যামিতি ও ভূগোলের ক্লাসে আগ্রহ নেই আমার। কেন অতো ভালো শেখাতে তুমি, বিন্যাস ও বিস্তারের ব্যাকরণ; সহজতম উপায়ে? চেনালে নিটোল বৃত্তীয় চাঁদের পাহাড়, তির্যক ঢাল বেয়ে নেমে গেছে তার পাকা গমের মউসুম। উপত্যকা জুড়ে ঢেউ খেলে বক্ররেখ বায়ু সকল। সেখানে দেহাতি পাখির পিপাসা মেটায় কুয়োর জল। আরো কিছু পাতা উল্টিয়ে তোমার আঙুল চেনায় ব-দ্বীপ, সবুজ ম্যানগ্রোভ। তীর্থ সে ত্রিভুজের কাছাকাছি অনিবার্য নোঙরের পোতাশ্রয়, নাবিকেরা চিরকাল বাঞ্ছা করে তাকে। এমন উৎকৃষ্ট পাঠের পর আগ্রহ থাকে আর ক্লাশরুমের পানসে পাঠে!

অলঙ্করণ শতাব্দী জাহিদ