রমজান মাসে খাদ্যাভাসের সময়ে কিছুটা পরিবর্তন আসার ফলে, খাদ্য তালিকাতেও চলে আসে বড়সড় পরিবর্তন।
এই পরিবর্তের ফলে সবজি-শাক খাওয়ার পরিমাণ কমে যায় অনেকটা। যার ফলে খাদ্য পরিপাকজনিত অথবা কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের মতো সমস্যাগুলো দেখা দিয়ে থাকে অহরহ।
এমন ধরনের সমস্যা তো বটেই রমজান মাসসহ পুরো বছর জুড়ে সুস্থ থাকতে খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে পালং শাক। উপকারী এই প্রাকৃতিক উপাদানটির সাতটি মূল উপকারিতা তুলে ধরা হলো।
ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করে
অবিশ্বাস্য কম মাত্রার কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ পালং শাক ডায়বেটিস আক্রান্ত রোগীদের জন্য সুপার ফুড হিসেবে ধরা হয়। এতে CHO এর মাত্রা কম থাকায় আধা কাপ শাক থেকে পাওয়া যাবে নামমাত্র পরিমাণ গ্লাইসেমিক লোড। রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রতিবেলার খাবারে কার্বোহাইড্রেট গ্রহণের মাত্রা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এতে থাকা আঁশ রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।
চোখের জন্য উপকারী
পালং শাকে থাকা পর্যাপ্ত পরিমাণ বেটা ক্যারোটিন, লুটেইন ও জ্যানথিন চোখের জন্য ভীষণ উপকারী। এই উপাদানগুলো চোখনে ম্যাকুলার ডিজেনারেশন তথা দুর্বল দৃষ্টিশক্তির সমস্যা থেকে প্রতিরোধে কাজ করে। এছাড়া চোখের ভেতর জ্বালাপোড়া ও চোখ ফুলে যাওয়ার সমস্যাগুলো কমাতেও ভূমিকা রাখে পালং শাক।
সাহায্য করে ওজন কমাতে
ওজন কমানোর জন্য পুরো ক্যালোরি গ্রহণের পরিমাণ কমাতে চাইলে খাদ্যাভাসে নিম্নমাত্রার ক্যালোরিযুক্ত খাবার রাখার চেষ্টা করতে হবে। উচ্চমাত্রার ক্যালোরিযুক্ত খাবারের পরিবর্তে নিম্নমাত্রার ক্যালোরিযুক্ত খাবার রাখতে হবে তালিকায় এবং কম ক্যালোরিযুক্ত খাবারের মাঝে পালং শাক অনন্য। দেড় কাপ পালং শাক থেকে পাওয়া যাবে ২৬ ক্যালোরি। যা রীতিমত অবিশ্বাস্য।
লোহিত রক্ত কণিকা বৃদ্ধিতে অবদান রাখে
আমাদের শরীরে নতুন কোষ, বিশেষ করে লোহিত রক্ত কণিকা তৈরিতে অবদান রাখে পালং শাকে থাকা ফলেট তথা ভিটামিন-বি৯। এছাড়াও ডিএনএর পরিবর্তন প্রতিরোধ করে এই ভিটামিন। যা ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে। মাথা ঘোরার সমস্যা, বমিভাব দেখা দিলে কিংবা ত্বকের সমস্যায় আমরা ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট খেয়ে থাকি। অথচ ফলেট সমৃদ্ধ পালং শাক নিয়মতি খেলে এই সমস্যাগুলোও এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব।
মস্তিষ্ক ও নার্ভাস সিস্টেমের সুস্থতায়
বেশিরভাগ প্রাকৃতিক শাক-সবজিই ভিটামিন-বি৬ সমৃদ্ধ। যা নার্ভাস সিস্টেমকে সুস্থ রাখতে কাজ করে। এছাড়া এতে থাকা পটাশিয়াম মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল, মনোযোগ ও মস্তিষ্কের জ্ঞানীয় কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। সবুজ শাকের মধ্যে পালং শাক থেকে পাওয়া যায় নায়াসিন। যা সামগ্রিকভাবে মস্তিষ্কের সুস্থতায় অবদান রাখে।
ভালো রাখে হৃদযন্ত্র
উপকারী এই খাদ্য উপাদানে থাকা ফলিক অ্যাসিড হোমোসিস্টেন এর মাত্রা কমাতে কাজ করে, যা হৃদরোগ তৈরির জন্য দায়ী। পালং শাকে রয়েছে লুটেইন (Lutein) নামক এক প্রকারের বিশেষ পিগমেন্ট। যা হৃদযন্ত্র সম্পর্কিত সমস্যা প্রতিরোধে কাজ করে। এটা একইসাথে খারাপ কোলেস্টেরলের (LDL) ও ফ্যাটের মাত্রা কমায়।
শক্তি প্রদান করে
ভাবুন তো একবার শাক থেকে যদি শারীরিক শক্তি পাওয়া যায়, তবে কেমন হয়! পালং শাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন বি১ ও থায়ামিন থাকে, যা গ্লুকোজ মেটাবলিজমের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এছাটা এটা অন্যান্য খাদ্য উপাদান থেকে শক্তি সঞ্চিত করে এটিপি (Adenosine Triphosphate) এ রূপান্তরিত করে। এছাড়া রিবোফ্লাভিন খ্যাত ভিটামিন-বি২ শরীরে শক্তি উৎপাদনে ভূমিকা রাখে।
আরও পড়ুন: অজানা গুণে ভরপুর সহজলভ্য লাউ
আরও পড়ুন: স্বাস্থ্য উপকারিতায় কার্পণ্যহীন করলা