সামাজিক মাধ্যমের চ্যালেঞ্জিং ইয়ার- ২০১৯

  • মাহমুদ খাইরুল, ডিজিটাল মার্কেটিং স্পেশালিস্ট
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

২০১৮ শেষ হতে আর কিছুদিন মাত্র। যদি ক্যালেন্ডার ফিরে দেখি তাহলে বছরে অন্যতম আলোচিত বিষয় ছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। সালটি সকল প্রতিষ্ঠানের জন্য ছিল বেশ অস্বস্তির এবং সংকটের। অনেক চড়াই-উতরাই এর মধ্যে দিয়ে পার করতে হয়েছে ফেসবুক, টুইটার, গুগলপ্লাস, টাম্বলার এর মত বড় বড় কোম্পানিগুলোকে।

ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্যকে অনুমতি ছাড়াই অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে উন্মুক্ত করার অভিযোগ ও প্রমাণ পাওয়া যায় ফেসবুকের বিরুদ্ধে। অ্যামাজন, নেটফ্লিক্স এর মত বড় বড় প্রতিষ্ঠানের কাছে ফেসবুক তাদের ইউজারের তথ্য বিক্রি করে জবাবদিহিতার মুখে পরে। অভিযোগ প্রমাণিত হবার পর তিন মাসে ১০ লাখ ইউরোপীয় ব্যবহারকারী হারিয়েছে ইন্টারনেট দাপিয়ে বেড়ানো এই সামাজিক মাধ্যম প্রতিষ্ঠানটি। আইনি লড়াইয়ে জরিমানা হতে পারে ১.৫ বিলিয়ন ডলার। ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান "পনেমন" - (যারা তথ্য এবং গোপনীয়তার উপর বিশ্লেষণ করে থাকে) এর জরিপ অনুযায়ী প্রায় ৬৬% শতাংশ মানুষ ফেসবুকের উপর আস্থা হারিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

টুইটার ছিল অন্য বিপদে। "আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স" বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে বিশাল পরিমাণের নকল একাউন্ট তৈরি হয় টুইটারে। লাখ লাখ "ফেক" ফলোয়ার এর ভিড় বেড়েছে ক্রমান্বয়ে।

গুগল তাদের নিজস্ব যোগাযোগ মাধ্যম গুগল প্লাস নিরাপত্তা জনিত কারণে বন্ধ ঘোষণা দিয়েছে চলতি বছরেই । এছাড়া এ বছর থেকে সাধারণ তথ্য ও নিরাপত্তা আইন

বিজ্ঞাপন

(জি.ডি.পি.আর) কে বেশ গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হয়েছে। ব্যবহারকারীর যেকোন তথ্য ব্যবহারের আগে অবশ্যই তাদের সন্মতি নিতে হবে সব প্রতিষ্ঠানকে।

সংবাদ প্রচারণার ক্ষেত্রে এক বিশাল ভূমিকা এখন এই প্ল্যাটফর্ম গুলোর। অথচ নীতিমালা অনুসরণের অভাবে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের সকল জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যমের কর্মীরা মনে করেন আরও মান সম্মত খবর পাঠকের কাছে পৌঁছানোর জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা প্রয়োজন।

তাহলে ২০১৯ কেমন যাবে? বিশেষজ্ঞদের মতে আগামী বছর, সকল যোগাযোগ মাধ্যমের জন্য হবে বিগত সব বছরের তুলনায় অনেক চ্যালেঞ্জিং। বছরটি হবে আস্থা ফেরানোর বছর। যোগাযোগ মাধ্যমের উপর মানুষের আস্থার যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে সেটিকে দূর করার মিশনে থাকবে সবাই।

ফেক নিউজ, নকল একাউন্ট, ব্যক্তি নিরাপত্তা এসব প্রটোকলকে আরও শক্ত করতে নেড়েচেড়ে বসবে সবাই। ভেরিফিকেশন এর পদক্ষেপ বাড়বে। শুধু পাসওয়ার্ড ছাড়াও, টু ফ্যাক্টর পাসওয়ার্ড এর ব্যবহার বাড়বে। একাউন্ট গুলোতে ইমেইল এর পাশাপাশি মোবাইল নম্বর দিয়ে ভেরিফাই করতে বাধ্য করা হবে। কে ওয়াই সি (KYC - Know your client) নীতিমালা যার মাধ্যমে ব্যাংকের গ্রাহকের তথ্য সংরক্ষণ করা হয়, সেই নীতিমালা প্রয়োগ করা হবে সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহারকারীর উপরও।

২০১৯ সালের ব্যবহার বাড়বে অল্প সময়ে কন্টেন্ট পৌঁছে দেবার ফিচার "স্টোরি"। সর্ব প্রথম স্ন্যাপচ্যাট এই ফিচারটি সবার কাছে পরিচয় করে দিলে একে একে ইন্সটাগ্রাম, ফেসবুক, হোয়াটসএপ, বিহ্যান্স, এবং ইউটিউবও এখন স্টোরির পেছনে বেশ জোড় দিচ্ছে। মোবাইলের পুরো স্ক্রিন জুড়ে যেখানে মাত্র ২৪ ঘণ্টা কোন ঘটনাকে প্রকাশ করা যায়।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Dec/28/1546004907560.jpg

তাছাড়া ফেসবুক লাইভের সাথে সবাই বেশ পরিচিত। আগামী বছর বিভিন্ন প্লাটফর্মের লাইভের পরিমাণ বাড়বে। নিঃসন্দেহে কোন বিষয়ের সরাসরি উপস্থাপন মানুষের মাঝে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ায়। বর্তমানে প্রায় সকল ভিডিও প্লাটফর্মই লাইভ ফিচারে নতুন নতুন প্রযুক্তি সংযুক্ত করার জন্য ব্যস্ত।

বলা বাহুল্য যে ভিডিও কন্টেন্ট নিয়ে ব্যস্ত থাকেবে সবাই। ফেসবুক ইতি মধ্যে ইউটিউবের সাথে পাল্লা দিলেও,ভিডিও কন্টেন্ট পরিবেশনে ইউটিউব বেশ এগিয়ে। মান সম্পন্ন ইউটিউব ভিডিও তৈরিতে বাংলাদেশে বার্তা২৪ এর মত বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ করছে।  অন্যদিকে ইন্সটাগ্রামের "আইজি ভিডিও" এ বছর চালু হলেও তেমনটা সাড়া ফেলতে পারেনি।

পরিশেষে বলা যায়, ২০১৯ হবে সকল সাম্যাজিক মাধ্যম প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবহারকারীদের জন্য চমকের। সামাজিক মাধ্যমগুলো যেন অসামাজিক কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে না পৌঁছে তাই প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা, ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা এবং আরও ব্যবহার উপযোগী নির্দেশনা। এটাই এখন সকলের প্রত্যাশা।