রাজশাহীতে আম পাড়া শুরু হলেও থামছে না ‘বিষ’ স্প্রে

  • হাসান আদিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

রাজশাহীর চারঘাটে ল্যাংরা, ক্ষীরসাপাত আমের বাগানে কীটনাশক  স্প্রে করছেন চাষিরা/ ছবি: বার্তা২৪.কম

রাজশাহীর চারঘাটে ল্যাংরা, ক্ষীরসাপাত আমের বাগানে কীটনাশক স্প্রে করছেন চাষিরা/ ছবি: বার্তা২৪.কম

আমের রাজধানীখ্যাত রাজশাহীতে বুধবার (১৫ মে) থেকে দেশি জাতের ‘গুটি’ আম পাড়ার মধ্য দিয়ে ‘আম উৎসব’ শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা অনুযায়ী সোমবার (২০ মে) থেকে পাড়া যাবে গোপালভোগ। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই পর্যায়ক্রমে ক্ষিরসাপাত, লক্ষ্মণভোগ ও ল্যাংড়া আমও গাছ থেকে নামাবেন চাষিরা।

ফল গবেষণা কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আম পাড়ার ১৫ থেকে ২০ দিন আগে আম গাছে সব ধরণের কীটনাশক ও পাউডার ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। তা না হলে পাকা আমে কীটনাশক ও পাউডারের প্রভাব বিদ্যমান থাকতে পারে।

বিজ্ঞাপন

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/May/18/1558165401707.jpg

অথচ এখনও গাছে কীটনাশক ও বিভিন্ন পাউডার মিশিয়ে স্প্রে করছেন রাজশাহীর অনেক বাগানের মালিক, ইজারাদার ও আমচাষি। প্রশাসনের ‘ঢিলেঢালা’ নজরদারির সুযোগ নিয়ে অসাধু বাগানমালিক ও ইজারাদাররা আম পাড়ার শেষ মুহূর্তেও স্প্রে করছেন।

রাজশাহীর বাঘা, চারঘাট, মোহনপুর, বানেশ্বর, পুঠিয়ায় বিভিন্ন আমবাগান ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। বৃহস্পতিবার (১৬) ও শুক্রবার (১৭ মে) চারঘাটের মোক্তারপুর গ্রাম, বাঘার কলীগ্রাম ও আড়পাড়া, পুঠিয়ার শিলমাড়িয়া, পচামাড়িয়া ও সুবর্ণপাড়া গ্রাম, মোহনপুরের মৌগাছি, জাহানাবাদ, বাকশিমইল, ধুরইল গ্রামের আমবাগানে ঘুরে স্প্রে করার প্রমাণ মিলেছে।

তবে আমচাষি ও ইজারাদারদের দাবি, টানা কয়েকদিন প্রখর রোদ ও গরম পড়ায় আমে বালাই আক্রমণ করছে। পোকা আম ছিদ্র করে দিচ্ছে। সেখানে বৃষ্টির পানি পড়লেই পঁচে নষ্ট হয়। রোদের কারণে আবার রংও ভালো হচ্ছে না। স্প্রে করলে রং ভালো আসবে। ফলে বালাই আক্রমণ ঠেকাতে ও রং আনতে স্প্রে করা হচ্ছে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/May/18/1558165500694.jpg

শুক্রবার (১৭ মে)  বিকালে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ঝিটকা গ্রামে সিদ্দিকুর রহমানের আমবাগানে গিয়ে দেখা যায়, চার থেকে পাঁচ জন ব্যক্তি মুখে গামছা পেঁচিয়ে গাছে স্প্রে করছেন। তারা বালতিতে পানির সঙ্গে ক্লোরোসিম, ইকোমেথ্রিন ও একটি ভিটামিন পাউডার সংমিশ্রণ করে গাছে ছিটাচ্ছেন।

ছিটানো কীটনাশকগুলোর বোতলের গায়ে লাগানো নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘এটি ব্যবহারের ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে ফল বা সবজি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।’ অথচ যে বাগানে কীটনাশক দেওয়া হচ্ছে, ঐ বাগানে বেশিরভাগই ক্ষিরসাপাত ও ল্যাংড়া আম, যা আগামী ২৮ মে থেকে পাড়া শুরু হবে।

বাগান মালিক সিদ্দিকুর রহমানের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার বাগানে আমি কী করছি না করছি, তা আপনাকে কেন বলব?’ প্রশাসনের নির্দেশনা মানছেন না তাই জানতে চাওয়া হচ্ছে, এমন কথার উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি আম দেরিতে পাড়ব, তাই এখনো স্প্রে করছি।’

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/May/18/1558165537038.jpg

পুঠিয়ার শিলমাড়িয়ার বাগান ইজারাদার ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘ক’দিন পর তো বাজারে আম নিতে হবে। ক্রেতারা আমের রং ভালো না হলে কিনতে চাই না। দামও কম দেয়। তাই আম পাড়ার আগে একটু-আধটু পাউডার স্প্রে করছি।’

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলীম উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘ফজলি ও আশ্বিনা আম ছাড়া অন্য কোনো আমে এখন বালাই আক্রমণের সম্ভাবনা নেই। যারা কীটনাশক দিচ্ছেন, তারা বিষয়টি না বুঝে দিচ্ছেন। এতে আমের ফলন বেশি হবে এমনটি ভাবারও সুযোগ নেই।’

তিনি বলেন, ‘যদি ক্যালসিয়াম কার্বাইড বাজারে সহজলভ্য হয়, তবে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ব্যবসায়ীরা তা আমে মেশাবেন। কার্বাইড দিয়ে পাকানো আম শরীরের জন্য ক্ষতিকর।’

জানতে চাইলে বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহীন রেজা বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘কেউ যাতে অপরিপক্ক আম গাছ থেকে না পাড়তে পারেন, সেজন্য কয়েকটি টিম সার্বক্ষণিক নজরদারি করছেন। এর ফাঁকেও যদি কেউ বিষাক্ত কোনো কীটনাশক ব্যবহার করে থাকে, তবে খোঁজ নিয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/May/18/1558165619624.jpg

পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওলিউজ্জামান বলেন, ‘পুঠিয়া-বানেশ্বরে কৃষকরা সঠিক উপায়ে আম চাষ করছেন। প্রথম থেকেই আমরা বাগানে নজরদারি করছি। পুলিশ টহল দিচ্ছে বাগানে বাগানে। কেউ আম পাকার আগে বাগানে কীটনাশক দেওয়ার কথা নয়। তবু আমরা নজরদারি আরও বাড়াবো।’

রাজশাহীর জেলা প্রশাসক এসএম আব্দুল কাদের বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আম তো দু’দিন বাদে পাড়া হবে। এখন স্প্রে করছে, বিষয়টি জানা নেই। উপজেলা পর্যায়ে ইউএনও ও অন্যান্য দায়িত্বপ্রাপ্তরা আমে ক্যামিকেল বা ক্ষতিকর কীটনাশক প্রয়োগ ঠেকাতে ব্যাপকভাবে তৎপর। এর মধ্যেও এ ধরনের ঘটনা যদি ঘটে থাকে, তবে অবশ্যই খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, চলতি বছর রাজশাহীতে ১৭ হাজার ৪৬৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ হয়েছে। দুই লাখ ১৩ হাজার ৪২৬ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু বাঘা উপজেলাতে আট হাজার ৩৬৮ হেক্টর জমিতে আমচাষ করা হয়েছে।