কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা গুচ্ছ পরীক্ষা পদ্ধতি থেকে বের হয়ে স্বতন্ত্র পদ্ধতিতে নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বের হওয়ার স্থায়ী সিদ্ধান্ত না জানালে সকল ধরনের প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার কথাও ঘোষণা করা হয়।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) দুপুর ২টা ৩০ মিনিটের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এক অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে এ ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, দুপুর দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দপ্তরের সামনে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে তারা উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলীর সাথে কথা বলেন। এসময় উপাচার্যের পক্ষ 'আশানুরূপ আশ্বাস' না পাওয়ায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন এবং গুচ্ছবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেয়। পরবর্তীতে সেখান থেকেই আল্টিমেটাম দেন।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী আরাফ ভুঁইয়া বলেন, "গুচ্ছ পদ্ধতির মতো হাস্যকর একটা বিষয় নিয়ে আমাদের বার বার এভাবে দাঁড়াতে হচ্ছে এটা লজ্জাজনক।"
তিনি বর্তমান সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর উদ্দেশ্যে বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে গুচ্ছ পদ্ধতি বহাল রেখে যদি আপনারা জটিল পরিস্থতির সৃষ্টি করতে চান আমরা আপনাদেরকে রূখে দেওয়ার জন্য সর্বদা প্রস্তুত। সর্বোপরি আমরা চাই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এবছর থেকে অর্থাৎ ২০২৪-২৫ সেশন থেকেই গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বের হয়ে যাবে।"
বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী পাবেল রানা বলেন, "গুচ্ছ স্বৈরাচারী হাসিনার বন্দোবস্ত। এই স্বৈরাচারীর বানানো গুচ্ছে আমরা থাকবো না। কোন বিশ্ববিদ্যালয় থাকলো অথবা কারা থাকলো না এতে আমাদের কিছু আসে যায় না। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক, বর্তমান শিক্ষার্থীরা এবং শিক্ষকরা আমাদের সাথে আছেন। আমরা একদম স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের যে ভর্তি পরীক্ষা হবে সেটা অবশ্যই গুচ্ছ মুক্ত হতে হবে।"
ইংরেজিতে বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী মোজাম্মেল হোসেন আবির বলেন, "গুচ্ছের অভিশাপ থেকে আমরা সবাই মুক্ত হতে চাই। আমরা চাই না গুচ্ছে যাতাকলে পড়ে কোনো শিক্ষার্থীর এক বছর নষ্ট হোক এবং কোনো সিট খালি না থাকুক। বিশ্ববিদ্যালয় যেন তার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে ফিরে যেতে পারে। উপদেষ্টামণ্ডলীকে আমরা বলতে চাই, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মাধ্যমে আপনারা প্রশাসনে এসেছেন, তাই শিক্ষার্থীদের চাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে গুচ্ছ থেকে মুক্ত করুন।"
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৩তম একাডেমিক কাউন্সিলের এক জরুরি সভায় গুচ্ছ থেকে বের হয়ে স্বতন্ত্র পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তবে গত ৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলীর পক্ষ থেকে জানা যায় কুবি গুচ্ছ পদ্ধতিতেই ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা নিবে। এ ঘোষণা গণমাধ্যমে প্রকাশের পর থেকেই বিভিন্ন সমালোচনার সৃষ্টি হতে থাকে।