স্বাধীনতার মূল্য ইহকাল ও পরকালে
স্বাধীন মানুষ হিসেবে, স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে যদি সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতায়ালা কর্তৃক প্রেরিত জীবনবিধানের আলোকে জীবন গড়া না যায় তবে স্বাধীনতার মূল্য তেমন একটা থাকতে পারে বলে মনে হয় না। কারণ মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে তার সৃষ্টিকর্তার বিধি-বিধান জীবনে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য।
ভূ-খণ্ডের হিসেবে মানুষ স্বাধীন হচ্ছে, স্বাধীনতার স্বাদ সর্বাংশে নির্বিচারে ভোগ ব্যবহার করছে। কিন্তু স্বাধীনতার প্রকৃত সাধ কি তার পূরণ হচ্ছে? যদি না হয় তবে এ জীবন বৃথা। কারণ একজন মানুষকে তার পার্থিব জীবনের সব কর্মকাণ্ডের হিসাব একদিন দিতেই হবে। এটা থেকে বাঁচার অন্য কোনো পথ নেই। আমরা যারা পরকালকে বিশ্বাস করি, তাদের সামনে বিশাল সংকট অপেক্ষা করছে। কারণ কিয়ামতের দিনে প্রথমে প্রত্যেক মানুষকে পাঁচটি বিশেষ প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হবে। ওই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ছাড়া কারও নিস্তার নাই।
এক. মানুষকে একটা মূল্যবান জীবন দেওয়া হয়েছে। সেই জীবনটাকে সে কিভাবে ভোগ ব্যবহার করেছে?
দুই. জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান কালটা হচ্ছে যৌবনকাল। সেই যৌবনটাকে সে কিভাবে ব্যয় করেছে?
তিন. মানুষকে যে বিবেক-বুদ্ধি প্রদান করা হয়েছে সেটা সে কোন কাজে ব্যবহার করেছে?
চার. কিভাবে সে আয় করেছে?
পাঁচ. কিভাবে এবং কোথায় ব্যয় করেছে?
এমন মৌলিক জিজ্ঞাসার সঠিক জবাব নির্ভর করে তার পার্থিব জীবনে তার প্রভুর জীবন বিধান প্রয়োগের স্বাধীনতা কতটুকু ভোগ ব্যবহার করেছে তার ওপর।
সুতরাং পার্থিব জীবনে স্বাধীনভাবে বাধা-বিপত্তি ব্যতিরেকে তার সৃষ্টিকর্তার আদেশ-নিষেধ তার জীবনে প্রয়োগ ও ব্যবহার কতটুকু করেছে সে সব ব্যপারটি সবাইকে এখনই ভাবতে হবে।
যদি মানুষ তাদের জীবনকে সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক প্রদত্ত জীবন বিধানের ভিত্তিতে জীবন গড়ে তুলতে না পারে, সেটা অবশ্যই কষ্টদায়ক বিষয়, আল্লাহর বিধান না মানার নামান্তর। পরকালে এজন্য কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
আল্লাহতায়ালা মানুষকে স্বাধীনতা প্রদান করেছেন। কিন্তু মানুষের সামনে দু’টো পথই খোলা রাখা হয়েছে। একটি হলো- আল্লাহর পথ। অন্যটি শয়তানের। প্রথমটি সহজ-সরল পথ আর দ্বিতীয়টি হলো গরল বা বাঁকা পথ। যে পথ মানুষকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে, এসো এ পথে; এখানে রয়েছে আনন্দ আর আনন্দ। জীবন তো একটাই, এ জীবনে ভোগবিলাস আনন্দ না করলে জীবন তো সার্থক হবে না। মনুষ্যজীবন আনন্দ-উল্লাসে ভরতে না পারলে জীবন তো অপূর্ণ থেকে যাবে।
আর অন্যদিকে রয়েছে সত্যের একমাত্র পথ। যেটা সৃষ্টিকর্তার পথ। যে পথের ডাক দিয়েছেন নবী-রাসূলরা। তারা আল্লাহতায়ালার হুকুমে সত্য দীনসহ এ বিশ্বে আগমন করেছেন বিভিন্ন সময়ে। এ পথে রয়েছে মানুষের পরম পাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ। এ পথ সত্য-সঠিক, সহজ-সরল ও সুন্দরতম জান্নাতের পথ। এ পথের বিপরীতে রয়েছে জাহান্নামের পথ। মহাসংকট ও মহাদুঃখ কষ্টের পথ। মানুষকে এই দুই পথের মধ্য থেকে যেকোনো একটা পথ গ্রহণ বা বর্জন করতে হয়। মানুষ এ বিষয়ে তার পরিপূর্ণ স্বাধীনতা মানুষকে দেওয়া হয়েছে।
এভাবেই সমগ্র বিশ্বের মানুষ দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে স্বাধীন সত্তা নিয়ে জীবনযাপন করছে। সেখানে বাধা ও বাধ্যবাধকতার সুযোগ নেই। নিজ ইচ্ছায় সজ্ঞানে সচেতনভাবে যে যেটা পছন্দ সে পথের পথিক হবে। এখানে জোর-জবরদস্তির কোনো সুযোগ নেই।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে বলেন, ইসলামের জোর-জবরদস্তির মওকা নেই।
বস্তুত ইসলাম হচ্ছে একটি অপার স্বাধীন জীবন বিধানের নাম। যার ইচ্ছে একে গ্রহণ করুক, এতে কারও কিছু বলার প্রয়োজন পড়ে না। বলার বা মন্তব্য করার সুযোগ রাখা হয়নি, কেননা সবাইকেই একদিন মরণকে বরণ করতে হবে এবং মহাপ্রভুর সামনে সবাইকে সমবেত হতে হবে।
ওইদিন সব কর্মকাণ্ডের হিসাব দেওয়ার বিকল্প কোনো পথ খোলা রাখা হয়নি। কারণ, দুনিয়ায় তো এ দু’টো পথের একটিকে গ্রহণ এবং অপরটিকে বর্জনের সুযোগ ও স্বাধীনতা দেওয়া ছিল।
সুতরাং এত সুবর্ণ স্বাধীনতা পাওয়ার পর আর কোনো স্বাধীনতা চাওয়া-পাওয়ার কি কোনো যুক্তি অবশিষ্ট থাকে? না থাকতে পারে?