ভোগবিলাস ও রিপুর চাহিদাপূরণ ক্ষণস্থায়ী বিষয়
ইসলাম সব ধরনের অপচয়-অপব্যয় ও ভোগবিলাস থেকে দূরে থাকতে শিক্ষা দিয়েছে। এমনকি ছোটখাটো অপচয়ের বিষয়েও সতর্ক থাকতে বলেছেন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
এক হাদিসে আছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত সাদ (রা.)-এর কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি তখন অজু করছিলেন। তিনি বলেন, হে সাদ! এই অপচয় কেন? সাদ (রা.) বললেন, অজুর মধ্যেও কি অপচয় আছে? তিনি বলেন, হ্যাঁ, তুমি প্রবহমান নদীর তীরে থাকলেও অপচয় আছে। -আহমাদ
এই হাদিসের শিক্ষা হলো- অপব্যয়ী মানসিকতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সৃষ্টি করা। কোনো কোনো অবস্থায় যদিও অপচয়ের ক্ষতিকর প্রভাব পরিলক্ষিত হয় না। তবুও এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত। ইসলাম পার্থিব আচার-আচরণ ও ভোগ-ব্যবহারের ক্ষেত্রে অপচয়কে নিষিদ্ধ করেছে।
পার্থিব জীবনে মানুষ যতই ভোগবিলাসে মত্ত ও ঋপুর চাহিদা পূরণে ব্যস্ত থাকুক না কেন, মৃত্যু একদিন তাদের এই ভোগবিলাসী জীবনের ইতি ঘটিয়ে দেবে। তাই মানুষকে মনে রাখতে হবে, ভোগবিলাস ও রিপুর চাহিদাপূরণ ক্ষণস্থায়ী বিষয়। এর পরিবর্তে মানুষকে আখেরাতের স্থায়ী সুখের চিন্তা করতে হবে।
ইসলাম মানুষকে শিক্ষা দেয়, জীবন নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করার। যে চিন্তা থেকে নিজের চলার পথ বাছাই করে নেবে। যে পথের কথা কোরআন-হাদিসে অসংখ্যবার বলা হয়েছে। তাই নিজে জ্ঞান অর্জন করা, অন্যকে জ্ঞান অর্জনে উৎসাহ দেওয়া, জ্ঞান দেওয়া, নিজে সৎ পথে থাকা, অন্যকে পথে আনা, নিজে ভালো হওয়া, অন্যকে ভালো করা, নিজে খারাপ পথ থেকে দূরে থাকা, অন্যকে খারাপ পথ থেকে বিরত রাখা মুসলমানদের অপরিহার্য কর্তব্য।
কিন্তু এসব ছেড়ে যখন কোনো মুসলমান শঠতার আশ্রয় নেয়, কলুষতাপূর্ণ জীবন শুরু করে, প্রবৃত্তিজাত কামনা-বাসনার অনুগামী হয়ে যায় তখন সে হয়ে উঠে বিপথগামী ও ধর্মীয় আদর্শ থেকে বিচ্যুত। এভাবে মানুষ যখন আরাম-আয়েশ, ভোগবিলাস এবং প্রবৃত্তিপুজায় তারা লিপ্ত হয়ে পড়েন। জৈবিক কামনা-বাসনা পূরণে নিজেদের বিলীন করে দেন। স্বাভাবিকভাবেই তাদের প্রবৃত্তি প্রবণতা ও মন-মানসিকতার প্রভাব জাতীয় জীবনের ওপর পড়ে। শুরু হয় দ্বীন ও দুনিয়ার মধ্যে বিভাজন, বিভিন্ন শ্রেণি-সম্প্রদায় ও দল উপদলের মধ্যে শুরু হয় পারস্পরিক যুদ্ধ বিগ্রহ। তখন কোনো জাতির পতন তরান্বিত হয়।
এই পতন ঠেকাতে প্রয়োজন কোরআন-হাদিসে শিক্ষাকে জীবনের সামগ্রিক পর্যায়ে পরিপূর্ণভাবে বাস্থবায়ন করা। নিজেরা বিশ্বাসদ্বীপ্ত জ্ঞানী ও সুশিক্ষিত হয়ে অর্জিত জ্ঞান ও শিক্ষা প্রচার করা।